একটি ত্রিভুজ প্রেমের দম্পতির জবানবন্দী

Spread the love

দ্যুতিময় বুলবুল
তৃতীয় পর্ব

এখন বাইরের জগত আমার প্রায় বন্ধ। আগে সোমেন যতটা রোম্যান্টিক ছিল, এখন তার কানাকড়িও নেই। আমার কথা এখন সে ভাবে না বললেই চলে। অথচ সম্পর্কের ভিত তৈরি হয় ভালোবাসা এবং বিশ্বাসে। কিন্তু সেই ভিত যখন নড়ে যায়, সম্পর্ক ধ্বসে পড়তে সময় লাগে না!

তারপরও স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে সবকিছু মেনে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু স্বামী গোপনে অন্য কারো সঙ্গে প্রেম করছে, এটা মেনে নেওয়া অসম্ভব। কেউ যদি একটা সম্পর্কে থেকে অন্য সম্পর্কে Switch করতে চায়, সেটা খোলাখুলি পার্টনারের (Partner) সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সত্য যত অপ্রিয়ই হোক তা পরস্পরকে জানানো উচিত। কিন্তু এক সম্পর্কে থেকে, গোপনে আরেক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়াটা দ্বিচারিতা, ভয়াবহ অপরাধ। ভালোবাসা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও সম্পর্কে কুঠারাঘাত। বিশ্বাসঘাতকতা তো বটেই।

বিশ্বাস ও ভালোবাসা ভেঙে গেলে সম্পর্কে আর কী থাকে? আমার তো মনে হয় কিছুই থাকে না। বিনে সুতার বন্ধন ছিঁড়ে যায়, স্বপ্ন হারিয়ে যায়, ভবিষ্যৎ ভেঙে যায়। পড়ে থাকে শুধু ভাব লেশহীন, সম্পর্কহীন, ভঙ্গ হৃদয় ও একটি চেতনাহীন মানব দেহের খোলশ।

নারী পুরুষ যেই হোক, যার দায়িত্ব ও কাণ্ডজ্ঞান কম, কথা দিয়ে কথা রাখে না, নিজের ভবিষ্যত বা সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে উদাসীন, সন্তানের কথা ভাবে না, পরকীয়া আসক্তির মতো বদভ্যাসে মজে থাকে, তার সঙ্গে সংসার করা যায়?

প্রত্যেক নারীই তার স্বামীর সঙ্গে সুখে শান্তিতে সংসার করার স্বপ্ন দেখেন। স্বামীকে আগলে রাখতে চান। কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেন না যে, তার স্বামীর সঙ্গে অন্য কোনো নারীর কারণে দূরত্ব তৈরি হোক। আমিও এমন কখনো চাইনি। বরং স্বামীকে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে চেয়েছি। অথচ এখন প্রায়ই দেখি সে অনেক রাতে বাড়ি ফিরে। না খেয়েই শুয়ে পড়ে। মধ্যরাতে কারো সঙ্গে বারান্দায় ফিসফিস করে কথা বলে!

প্রেম করে বিয়ের পর মনে হয়েছিল, এই মানুষটির জন্য আমি নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করতে পারি। আর সাত পাকে বাঁধা পড়ার পর থেকেই, তাকে দেবতার আসনে বসিয়েছিলাম। স্বামীকে ভালো রাখতে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। তার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলাম। অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছিও। চাকরি নিয়ে নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে, তার ওপর বিশ্বাস ও ভরসা করে সংসারের দায়িত্ব নিয়েছি। ছেলে মেয়ে মানুষ করছি।

সারাদিন ঘরের কাজ সামলে আমি আজকাল প্রায়ই খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ি। টুকটাক নিজের কাজ করে শুয়ে পড়ি। স্বামীর সঙ্গে সুখ দুঃখের কথা বলার ইচ্ছে হলে ওর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি, কিন্তু ও আমাকে আগের মতো পাত্তা দেয় না। তাই নিজেই এক পাশ ফিরে শুয়ে পড়ি। ক্লান্ত থাকায় চোখে তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসে। পরের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে স্বামী সন্তানদের খাবার বানিয়ে তাদের খাওয়ানোর পর স্বামীকে অফিস পাঠিয়ে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাই। স্কুল থেকে ফিরে পরিবারের যাবতীয় কাজ ও রান্নাবান্না করি। স্বামীর সঙ্গে অফিসে কথা বলে খোঁজ খবর নেই। দুপুরে সন্তানদের স্কুল থেকে নিয়ে আসি।

আমি ঘুমিয়ে পড়ার পর সে কী করে, তা কখনও জানতে চাইনি। কোনোদিন ওর মোবাইল ফোন চেক করার কথাও ভাবিনি। কিন্তু গত কয়েক দিন আগে আমার সামনেই ওর মোবাইল ফোনে মেসেজের নোটিফিকেশন আসে। এক অপরিচিত নারীর ছবি ভেসে ওঠে। আমি তখন সেই চ্যাট খুলে দেখে বুঝতে পারি, মধ্যরাতে সে এই মহিলার সঙ্গেই কথা বলে। এসব দেখে আমার মন ভেঙে যায়। প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পড়ি। (চলবে)

দ্যুতিময় বুলবুল: লেখক, সাংবাদিক, গবেষক।