ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ

Spread the love

দ্যুতিময় বুলবুল

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালির দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি চিরস্মরণীয় দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে আজকের এই দিনে, পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালির স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তি-সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। তৎকালীন রমনার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দেওয়া ওই কিংবদন্তি ভাষণে তিনি বাঙালিকে যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বাধীনতা ও মুক্তি প্রত্যাশী ১০ লক্ষাধিক সমবেত উত্তাল জনতার সামনে অসাধারণ ও অতুলনীয় বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, “রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে থেকে বিকেল ৩টা ৩ মিনিট পর্যন্ত মাত্র ১৮ মিনিটের সেই জাদুকরী ও সম্মোহনী ভাষণে সেদিন বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীকার ও স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনের দীর্ঘ পথ বেয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তির চূড়ান্ত সংগ্রামের পটভূমি তুলে ধরে লড়াকু বাঙালিকে সর্বশেষ লড়াইয়ের জন্য কী কী করতে হবে তার সুনির্দিষ্ট আদেশ, নির্দেশ ও পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর দিকনির্দেশনা মেনেই বাঙালি নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল নির্ধারণ করেছিল।

বঙ্গবন্ধুর জীবনের এই সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ ছিল বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিসেনাদের যুদ্ধজয়ের প্রধান প্রেরণা এবং জীবনের ধ্রুবতারা। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণ স্বাধীনতাপ্রিয়-মুক্তিকামী বাঙালির অন্তরে অন্তরে বীজমন্ত্রের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁর সেই বজ্রকণ্ঠের অতিমানবীয় ভাষণে মন্ত্রমুগ্ধ বাঙালি জীবনপণ লড়াই করে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও চার লাখ মা বোনের সম্ভ্রম এবং অর্থনৈতিক ধ্বংসস্তুপের ওপর, স্বাধীন-সার্বভৌম বাঙালি জাতিরাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে।

স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পরও, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক কালজয়ী ভাষণ বাঙালিকে একাত্তরের মতোই একইভাবে উজ্জীবিত করে, প্রেরণা জোগায় এবং শীহরিত করে। পৃথিবীর আর কোনো বিশ্বনেতার ভাষণ কোনো জাতি, রাষ্ট্র ও সমাজকে এমন স্বতস্ফূতভাবে প্রভাবিত করেনি এবং এতোটা জীবন্ত, প্রাণবন্ত, উৎসাহ-উদ্দীপক ও প্রেরণাদায়ক না। তাই বিশ্বের সকল স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মুক্তিপ্রেমী মানুষের চিরপ্রেরণার আধার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই অমর, অক্ষয় ও অনির্বাণ ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।

বিশ্বের যে কোনো স্বাধীনতা প্রিয় ও মুক্তিকামী জনতা ও জাতির জাতীয়তাবাদী চেতনা ও গণজাগরণের পথিকৃত বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের জনক ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই মহাকাব্যিক ভাষণ। তাই বিশ্ববিখ্যাত নিউজউইক ম্যাগাজিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এক বিরল উপাধি ‘রাজনীতির কবি’হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ঐতিহাসিক এই ভাষণটি পৃথিবীর অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কারণ, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে বিবেচনা করা হয়।

দ্যুতিময় বুলবুল: লেখক, সাংবাদিক, গবেষক।