রওশন এরশাদ নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেন

Spread the love

বাঙালিনিউজ প্রতিবেদক

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ নিজেকে জাতীয় পাটির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদকে দলের মহাসচিব ঘোষণা করেছেন। আজ ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ রোববার, রাজধানীর গুলশানে রওশন এরশাদের বাসভবনে এক সভায় তিনি এই ঘোষণা দেন।

রওশন এরশাদ এ সময় নিজ ক্ষমতাবলে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে বহিষ্কার করেন। তিনি বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রের ২০-এর ১ ধারা অনুযায়ী জিএম কাদের ও চুন্নুকে পার্টি থেকে অব্যাহতি প্রদান করলাম।’

রওশন এরশাদ বলেন, আমি নেতাকর্মীদের অনুরোধে পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। পরবর্তী সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত মামুনুর রশীদকে মহাসচিব ঘোষণা করা হলো। তিনি বলেন, যাদের অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে তারা স্বপদে বহাল থাকবেন। এসময় দলের বহিষ্কৃত নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন তিনি।

এই ঘোষণার আগে সভায় রওশন এরশাদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টির ক্ষতি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। যাদের বিনা কারণে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের চলে যেতে দিতে পারি না, তাই আজ পার্টিকে রক্ষার জন্য কিছু সাংগঠনিক ব্যবস্থা ঘোষণা করা হবে।’

রওশন এরশাদ আরো বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। নির্বাচনে ২৮৭ আসনে প্রার্থী দিয়ে তারা আবার সমঝোতা করেছে ২৬ আসনে। চেয়ারম্যান-মহাসচিব দলীয় প্রার্থীদের কোনো খোঁজ-খবর না নেওয়ার কারণে সবার ভরাডুবি হয়েছে। পরাজিতদের সান্ত্বনা না দিয়ে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের এই আদেশ বাতিল করতে অনুরোধ করা হলেও তারা তা করেনি।

রওশনের ‘অব্যাহতি’ ঘোষণার পর, প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে জানায়,  মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন,  এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিই না। কারণ এগুলো একাধিকবার হয়েছে। তবে তারা এসব করে জাতীয় পার্টিতে কোনো ভাঙন ধরাতে পারেনি। তারা যা করেছেন, সেটি তাদের এখতিয়ার-বহির্ভূত।’

রওশন এরশাদ তার বাসভবনের নিচতলায় এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। এতে জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত, অব্যাহতিপ্রাপ্ত, স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী নেতা কর্মীরা অংশ নেন।

এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি পাওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত এবং রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ।

এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম সারওয়ার মিলন, জিয়াউল হক মৃধা, ভাইস চেয়ারম্যান আমানত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল হক, খোরশেদ আলম, ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি ইয়াহিয়া চৌধুরী, জাতীয় ছাত্র সমাজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রফিকুল হক, এরশাদপুত্র ও দলের যুগ্ম মহাসচিব সাদ এরশাদ প্রমূখ।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে জাপা থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম রওশন এরশাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার নেতৃত্বে দলের আবর্জনা পরিষ্কার করতে চাই। আপনি জাপার হাল ধরবেন। জিএম কাদের ও চুন্নুকে দেশের নেতা-কর্মীরা নেতৃত্বে দেখতে চায় না। আজকে থেকে আপনাকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই।’

ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বাড়ির দারোয়ানেরা এখন মালিক হতে চায়। আপনার নেতৃত্বে দল করেছি। এ সংকটে আপনাকে আবার এগিয়ে আসতে হবে।’ প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, দলের মধ্যে বর্গিরা হানা দিয়েছে। আবার আপনাকে দায়িত্ব নিয়ে দল রক্ষা করতে হবে।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রয়াত হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের ছোট ভাইজি এম কাদের । এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে দেবর  জি এম কাদেরের রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের। এর আগেও নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছিলেন রওশন এরশাদ। তবে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব প্রকট রূপ লাভ করে। রওশন এরশাদ এবং তার ছেলে রাহগির আলমাহি এরশাদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ  নির্বাচনে অংশই নেননি। আর ওই নির্বাচনের পর দলের একাংশ জি এম কাদেরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।