বাঙালিনিউজ, বিশ্বডেস্ক
ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাচ্ছে বামপন্থীদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনপিই)। ফলে উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র্যালির (আরএন) জয় ঠেকানোর প্রচেষ্টা সফল হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বুথফেরত জরিপে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর এনসেম্বল জোট দ্বিতীয় এবং কট্টর ডানপন্থী দল আরএর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
গতকাল ০৭ জুলাই ২০২৪, রোজ রোববার, ফ্রান্সে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শেষে যে বুথফেরত জরিপ রিপোর্ট পাওয়া গেছে, তাতে বামপন্থীদের এগিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। মূলত বুথফেরত জরিপ বলছে, বামপন্থীদের জোট নিউ পপুলার ফ্রান্ট (এনএফপি) জয়ের পথে এগিয়ে গেছে।
এই বুথ ফেরত জরিপ রিপোর্ট প্রকাশের পর, পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন নির্বাচনে অপর দুই প্রতিপক্ষ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর জোট ‘টুগেদার অ্যালায়েন্স’ এবং উগ্র ডানপন্থী দল ‘ন্যাশনাল র্যালি’র নেতারা। অপরদিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাতে প্রেসিডেন্ট মাঁখোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাম জোটের নেতারা।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ঘোষিত বুথফেরত জরিপে বলা হয়েছে যে, ফ্রান্সের ৫৭৭ আসনের পার্লামেন্টে ১৭২ থেকে ২১৫টি আসন পেতে পারে বাম জোট ‘নিউ পপুলার ফ্রন্ট’। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেতে পারে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর মধ্যপন্থী জোট ‘টুগেদার অ্যালায়েন্সৎ। তাদের আসন সংখ্যা হতে পারে ১৫০ থেকে ১৮০টি। আর প্রথম দফা নির্বাচনে বিজয়ী দল কট্টরপন্থী ‘ন্যাশনাল র্যালি’ এই দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে পেতে পারে ১১৫টি থেকে ১৫৫টি আসন। ফলে এবার তারা তৃতীয় অবস্থানে চলে যেতে পারে।
তবে আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বুধফেরত জরিপ অনুযায়ী, ৫৭৭ আসনের পার্লামেন্টে বামপন্থীদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট পাচ্ছে ১৮২ আসন, মাখোঁর টুগেদার অ্যালায়েন্স ১৬৩টি আসন এবং লা পেনের ডানপন্থী দল আরএন পাচ্ছে ১৪৩টি আসন।
ফ্রান্সে ৫৭৭ আসনের পার্লামেন্টে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৮৯টি আসন। সেক্ষেত্রে বাম জোটকে সরকার গঠন করতে হলে, অন্যদের সমর্থন নিতে হবে। ফলে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের সম্ভাবনাই বেশি।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩০ জুন ২০২৪, রোজ রোববার, অনুষ্ঠিত প্রথম দফা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কট্টর ডানপন্থী দল মারিন লো পেনের ন্যাশনাল র্যালি (আরএন)। বর্ণবাদ ও ইহুদিবিদ্বেষী অতীতের কারণে আরএনকে দীর্ঘ সময় ধরে দূরে সরিয়ে রেখেছিল ফ্রান্সের বর্ণবাদ বিরোধী অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ জনগণের বড় একটি অংশ। তবে সম্প্রতি দলটির সমর্থন বেড়ে গেছে মূলত জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর প্রতি ভোটারদের ক্ষোভের কারণে।
তবে প্রথম দফা নির্বাচনের পর অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে ন্যাশনাল র্যালি। তাদের এই অবস্থান নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েন ফ্রান্সের উদার ও মধ্যপন্থীরা। তাই আরএনকে ঠেকাতে বামপন্থীদের জোট এনপিই ও মাখোঁর জোট টুগেদার অ্যালায়েন্সের মধ্যে আপস হয়। আরএনের বিরুদ্ধের ভোট যেন একজনই পায়, সে জন্য এই দুই জোট মিলে দুই শতাধিক প্রার্থীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরিয়ে নেয়। ফলে বাম ও মধ্যপন্থীদের এই কৌশল কাজে দিয়েছে। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কট্টর ডানপন্থী কোনো দল দেশটিতে ক্ষমতায় বসতে পারেনি।
এদিকে, বুথফেরত জরিপের ফল আসার পর-বাম জোটের অন্যতম শরিক দল সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা অলিভিয়ের ফাউরে বলেছেন, ‘ফ্রান্স বলেছে, ন্যাশনাল র্যালিকে ক্ষমতা দেওয়া হবে না। এখানে নিউ পপুলার ফ্রন্টের জয় হয়েছে।’
এদিকে, পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে মাখোঁর পক্ষের নেতা ও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আতাল পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামীকাল প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন তিনি।
আর ন্যাশনাল র্যালির নেতা মারিন লো পেন বলেছেন, তাঁর দলের জয় শুধু বিলম্বিত করা হয়েছে। আজকের এই ফলের মধ্যে তিনি আগামী দিনের বিজয়ের বীজ দেখতে পাচ্ছেন।
ন্যাশনাল র্যালি বিজয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী হতেন দলটির নেতা জরদান বারদেলা। বুথফেরত জরিপের ফল আসার পর বাম ও মধ্যপন্থীদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, ‘অস্বাভাবিক’ ও ‘মর্যাদাহীন’জোট ফ্রান্সের জনগণকে ‘ন্যাশনাল র্যালির বিজয়’থেকে বঞ্চিত করেছে। আরএন নেতা জর্ডান বারডেলা স্বীকার করেছেন যে, তার দল পরাজিত হয়েছে। তবে দিনি এও বলেছেন যে, ফ্রান্স ‘অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতার’মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট মাখোঁ গত ৯ জুন আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর সোশ্যালিস্ট (সমাজতান্ত্রিক), পরিবেশবাদী, কমিউনিস্ট ও কট্টর বামপন্থী দল ফ্রান্স আনবোয়েড পার্টি (এলএফআই) মিলে বামপন্থী জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনপিই) নামে নতুন জোট গঠন করে। এই দলগুলো আগে একে অপরের সমালোচনা করত। দলগুলোর আদর্শ ও কর্মপদ্ধতির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। তবে কট্টর ডানপন্থীদের সরকার গঠনের সুযোগ না দেওয়ার জন্য দলগুলো মিলে এই নির্বাচনী জোট গঠন করে।
এই জোটের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের পাশ করা পেনশন ও অভিবাসন বিষয়ক সংশোধিত আইন বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অবৈধ অভিবাসীদের ব্যবস্থাপনা এবং ভিসা আবেদনের বন্দোবস্ত করার জন্য একটি সহায়তাকারী সংস্থা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া জীবনযাপনের ব্যয় মেটাতে জনগণকে যে কষ্ট করতে হচ্ছে, তা লাঘবে মৌলিক পণ্যগুলোর দাম সর্বোচ্চ কত হতে পারবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া এবং ন্যূনতম বেতন বাড়ানোরও ঘোষণা দিয়েছে বামপন্থীদের এই জোট। সূত্র: অনলাইন নিউজ।