বাঙালিনিউজ, বিশ্বডেস্ক
যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন লেবার পার্টির প্রধান কিয়ার স্টারমার। পার্লামেন্টে ৩২৬ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন থাকলেও, স্টারমারের লেবার পার্টি ৪১০টি আসনে জয়লাভ করেছে। তাই সবকিছু ঠিক থাকলে ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বামপন্থী লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার।
তাই এখন সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন এতদিনের বিরোধী দলের এই নেতা। স্টারমার শুধু একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ নন বরং লেবার পার্টি বিশ্বাস করে, ১৪ বছরের রক্ষণশীল শাসনের পরে, ব্রিটেনের স্থির এবং নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে এখন স্টারমারের প্রয়োজন।
১৯৬২ সালে ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে জন্ম কিয়ার স্টারমারের। একটি শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার মা, একজন নিবেদিত এনএইচএস নার্স। তার বাবা ছিলেন একজন টুল মেকার। স্টারমার রিগেট গ্রামার স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তার পরিবারে তিনিই প্রথম সদস্য যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন স্টারমার।
৬১ বছর বয়সী স্টারমার রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন মানবাধিকার আইনজীবী। যুক্তরাজ্যের পাবলিক প্রসিকিউশন দপ্তরের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২০ সালের এপ্রিলে লেবার পার্টির নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন স্টারমার। জেরেমি করবিনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। দায়িত্ব নিয়ে দলকে যুক্তরাজ্যের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসেন স্টারমার। কয়েক বছরের মাথায় ভোটের লড়াইয়ে এর সুফল পেলেন তিনি।
সমর্থকদের চোখে স্টারমার একজন বাস্তববাদী মানুষ। ভরসা করার মতো রাজনীতিবিদ। তবে সমালোচকদের অনেকের মতে, স্টারমার চৌকস নন বরং তিনি অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়া একজন রাজনীতিক।
রাজনীতির মাঠে সাড়া ফেলে দেওয়া স্টারমার একজন দক্ষ ফুটবলার। ক্লাব ফুটবলে আর্সেনালের ভক্ত তিনি। ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়ায় অবদান রাখায় ‘নাইট’ উপাধি পেয়েছেন স্টারমার।
স্টারমার ২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের জন্য উত্তর আয়ারল্যান্ড পুলিশিং বোর্ডের আইনি উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৯৮ সালে গুড ফ্রাইডে চুক্তির পরের সময়টা এই অঞ্চলের ইতিহাসে সংকটময় ছিল। কয়েক দশকের সংঘাতের পর শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই চুক্তি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সময়ে স্ত্রী ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে তার দেখা হয় স্টারমারের। যিনি ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) জন্য কর্মরত ছিলেন। এই দম্পতি ২০০৭ সালে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের দুটি সন্তান রয়েছে।
বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর, সমর্থকদের উদ্দেশে স্টারমার বলেন, আমাদের রাজনীতিকে জনসেবায় ফিরিয়ে আনতে হবে। রাজনীতির মাধ্যমে কল্যাণ সাধন সম্ভব। ব্রিটিশ জনগণের এই বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, তিনি দেশের উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। ঐক্যবদ্ধ থাকার গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি।
বিবিসি জানায়, লন্ডনে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে স্টারমার বলেন, আপনাদের ধন্যবাদ। আপনারা আমাদের দেশ বদলে দিয়েছেন। লেবার সরকারের মূল লক্ষ্য হলো নতুন ধারণার মাধ্যমে দেশের ঐক্য ধরে রাখা।
কনজারভেটিভ পার্টি এবার মাত্র ১১৬টি আসনে জয় পেয়েছে, আর লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টি ৭০টি আসন পেয়েছে। টানা ১৪ বছর পর ক্ষমতা হারাচ্ছেন রক্ষণশীলরা। প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইতোমধ্যে পরাজয় মেনে নিয়েছেন।
গতকাল ০৪ জুলাই ২০২৪, রোজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয়। এবারের নির্বাচনে অংশ নেয় ৯৮টি রাজনৈতিক দল, যার মধ্যে ৩৫টি দল মাত্র একজন প্রার্থী দেয়। নির্বাচনে মোট ৪,৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ফলে গড়ে প্রতিটি আসনে ৭ জন করে প্রার্থী ছিলেন। ৩১৭টি আসনে ৪৫৯ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই জয় লেবার পার্টির জন্য দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো। দলটি যুদ্ধ-উত্তর সময়ে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বাজে ফল করেছিল। তখন ৮০ আসন বেশি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি। সূত্র: বিবিসি ও অন্যান্য অনলাইন নিউজ।