বাঙালিনিউজ, বিশ্বডেস্ক
যুক্তরাজ্যে জাতীয় নির্বাচনে (হাউজ অব কমন্স) নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করেছে লেবার পার্টি। ৩৩৩টি আসনে জয় পেয়েছে দলটি। ফলে তারা বড় ব্যবধান গড়ে তুলেছে কনজারভেটিভ পার্টির সঙ্গে। এই দলটি পেয়েছে মাত্র ৭১টি আসন। আর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি পেয়েছে ৪৬টি আসন। ফলে বুথ ফেরত জরিপই সত্য হলো। জয়টাও প্রত্যাশিত ছিল।
লন্ডনে লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ‘পরিবর্তন এখন থেকেই শুরু হলো।’ উচ্ছ্বসিত জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আনন্দিত’। যুক্তরাজ্যে টানা ১৪ বছর পর ক্ষমতা থেকে সরে গেল কনজারভেটিভ পার্টি। বিদায় নিতে হবে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে। তিনি পরাজয় মেনে নিয়েছেন।
স্থানীয় সময় গতকাল ০৪ জুলাই ২০২৪, রোজ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটায়, সারা ব্রিটেনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৯৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ৩৫টি রাজনৈতিক দল মাত্র একজন করে প্রার্থী দেয়। রেকর্ড ভেঙে এবার ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। একেকটি আসনে গড়ে ৭ জন করে প্রার্থী। ৩১৭টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৫৯ জন।
যুক্তরাজ্যে এবারের সাধারণ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের মনোনয়নে প্রার্থী হন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই গণনা শুরু হয়। ফলাফলে দেখা যায় বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে লেবার পাটি। ফলে টানা ১৪ বছর পর তারা ক্ষমতায় আসার সুযোগ পাচ্ছে।
টানা ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখলো যুক্তরাজ্যের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল লেবার পার্টি। সবশেষ চার নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে জৌলুশ হারাতে বসা দলটি ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন গল্প লিখল ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ঋষি সুনাকের দলকে হারিয়ে, পেলো বড় জয়।
ফলে, ২০১০ সালের পর আবারও যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় আসছে ১২৪ বছরের পুরাতন লেবার পার্টি। এর আগে, ২০০৫ সালে টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে শেষবারের মতো নির্বাচনে জিতেছিল তারা। ২০১০ সালে লেবার পার্টির সবশেষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব ছেড়েছিলেন গর্ডন ব্রাউন।
এর আগে, ১৯৭৯ সালের পর ১৮ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল লেবার পার্টি। টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে দীর্ঘদিনের সেই জয়ের খরা ঘুচিয়ে ছিল দলটি।
লেবার পার্টিকে সবচেয়ে বেশি তিনটি নির্বাচনে জয় এনে দেওয়া ব্লেয়ার দলটির হয়ে ক্ষমতায়ও ছিলেন সর্বোচ্চ ১০ বছর। লেবারদের সবশেষ জয়টি এসেছিল সেই টনি ব্লেয়ারের হাত ধরেই। ২০০৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে পর একুশ শতকে আর ক্ষমতার স্বাদ পায়নি লেবাররা।
টনি ব্লেয়ারের পদত্যাগের পর ২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন গর্ডন ব্রাউন। যিনি পদে ছিলেন ২০১০ সাল পর্যন্ত। ব্রাউনই ছিলেন লেবার পার্টির ষষ্ঠ ও সবশেষ প্রধানমন্ত্রী। ২০২৪ সালে কেইর স্টার্মারের হাত ধরে আবারও ঘুরে দাঁড়াল দলটি। একের পর এক নির্বাচনে দল যখন ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি তখনই হাল ধরেছিলেন স্টার্মার। ২০২০ সালে লেবার পার্টির দায়িত্ব নিয়ে চার বছর পর প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েই করলেন বাজিমাত।
১৯০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া লেবার পার্টির ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। ঐতিহ্যবাহী দলটি ১৯২২ সালের পর থেকেই হয় সরকার গঠন করেছে নয় সামলেছে প্রধান বিরোধী দলের দায়িত্ব।
১৯২৩ সালে র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড লেবার পার্টি থেকে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর দলটি থেকে ক্লেমেন্ট এটলি, হ্যারল্ড উইলসন, জেমস ক্যালাহানও পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রিত্বের স্বাদ। সবকিছু ঠিক থাকলে স্টার্মার হবেন লেবার পার্টির সপ্তম প্রধানমন্ত্রী।
নিয়ম অনুযায়ী, সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দলকে সরকার গঠন ও দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আহ্বান জানাবেন যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস। দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দল পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল হবে। আর দলটির নেতা প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা হবেন।
৯ জুলাই নতুন পার্লামেন্ট সদস্যদের শপথ গ্রহণ ও স্পিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৭ জুলাই রাজা তৃতীয় চার্লসের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে নতুন সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। খবর: বিবিসি, অনলাইন নিউজ।