বাঙালিনিউজ, খেলারডেস্ক
গতকাল ২৯ জুন ২০২৪ রোজ শনিবার, ভারত ১৩ বছর পর কোনো আইসিসি ইভেন্ট এবং ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে। ফলে ভারতের বহুদিনের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে গতকাল। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও রোমাঞ্চকর এই ম্যাচে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার দল জিতেছে ৭ রানে।
ভারতীয় ক্রিকেটে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির পর অনেক বছর ধরে কেউই শিরোপা জিততে পারছিলেন না। বারবার সেমিফাইনাল অথবা ফাইনালে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ভারতীয় দলকে। যার জন্য ‘নব্য চোকার’ তকমাটাও লাগার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল ভারতের নামের পাশে। কিন্তু অবশেষে সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে টানা ১১ বছর পর শিরোপা জয় করলো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে ২০২৪ সালের নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলেন রোহিত-কোহলিরা।
গতকালের বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচে বড় অবদান ছিল বিরাট কোহলির। যে কোহলিকে নিয়ে এই টুর্নামেন্ট শুরুর পূর্বে সমালোচনার শেষ ছিল না, ভারতের ক্রিকেটাঙ্গনে যেখানে ‘বিরাট হটাও’রোল উঠেছিল; সেই কোহলিই হলেন এবার ভারতের টু-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক।
এবারের বিশ্বকাপ আসরে ওপেনার হিসেবে পুরো টুর্নামেন্টেই ফ্লপ ছিলেন কোহলি। তবে নিজের সেরাটা তিনি দিলেন বিশ্বকাপ লড়াইয়ের শেষদিন, গতকাল ২৯ জুন ২০২৪ রোজ শনিবার। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরদ্ধে প্রথমে ব্যাটিংয়ে দল যখন ধুঁকছিল, ঠিক তখনই বিরাট কোহলি নিজের সামর্থ্যের পরিচয় দিলেন ব্যাট হাতে। খেললেন চওড়া এক ইনিংস।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসর শুরুর পর ফাইনালের আগে ৭ ম্যাচে বিরাট কোহলির রান ছিল মাত্র ৭৫। অথচ ফাইনালে এক ম্যাচেই তিনি করলেন ৭৬ রান। ফাইনালে কোহলি খেললেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলা। বুঝিয়ে দিলেন, কোহলি এখনো ফুরিয়ে যায়নি। তাঁর ৫৯ বলে গড়া ইনিংসে ছিল ৬টি চার আর ২ ছক্কার মার। তাই ফাইনালের ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে কোহলির হাতে।
দলের কঠিন মুহূর্তে হাল ধরে টুর্নামেন্টের প্রথম ফিফটি (৫৯ বলে ৭৬ রান) হাঁকানো বিরাট কোহলিকে ম্যাচসেরা হিসেবে বেছে নিয়েছে আইসিসি। ফাইনালে ম্যাচ সেরার পুরস্কার হিসাবে বিরাট কোহলি (৭৬ রান) পেয়েছেন ৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে এবারের বিশ্বকাপে ৮ ইনিংসে বল করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ উইকেট শিকার করেছেন বুমরাহ। ফলে টুর্নামেন্টে ‘প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ’হয়েছেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বুমরাহর চেয়ে ২টি করে উইকেট বেশি পেয়েছেন আফগানিস্তানের ফজলহক ফারুকি (১৭) ও সতীর্থ আর্শদীপ সিং (১৭টি)। কিন্তু ইকোনমিতে সবার চেয়ে কম বুমরাহ। ওভারপ্রতি মাত্র ৪.১৭ রান খরচ করেছেন এই পেসার।
তাছাড়া ফাইনালে তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে ২টি উইকেট নিয়েছেন। তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের ১৭তম ওভারে করা বুমরাহর স্পেলটি। প্রোটিয়াদের জয়ের জন্য ১৮ বলে যখন মাত্র ২২ রান দরকার, আক্রমণে এসে মাত্র ২ রান দিয়েই মার্কো জানসেনের উইকেট তুলে নেন সময়ের অন্যতম সেরা এই পেসার।
তবে বুমরাহ অন্য জায়গায় এগিয়ে, সেটা হচ্ছে ম্যাচের সবচেয়ে কঠিন সময়ে তিনি আক্রমণে আসেন। আর প্রয়োজনীয় ব্রেকথ্রু আর ইকোনমিকাল বোলিং তার প্রধান অস্ত্র। ম্যাচপ্রতি গড়ে ৮.২৬ রান দিয়েছেন তিনি।
অবশ্য তার চেয়ে কম ইকোনমি ও গড়ে বল করা টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্ট বিদায় নিয়েছেন গ্রুপপর্বেই। ফলে বিশ্বকাপজয়ী বুমরাহ অনেকটা এগিয়ে ছিলেন এবং দলের জয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছেন। এজন্য তাকে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার হিসেবে জসপ্রিত বুমরাহ (১৫ উইকেট), ১৭ লাখ ৬২ হাজার টাকা পেয়েছেন।
ফাইনালের আগে বুমরাহর প্রসংশা করতে গিয়ে ভারতের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ও কিংবদন্তি কপিল দেব বলেছিলেন, বুমরাহ আমার চেয়ে এক হাজার গুণ ভালো বোলার। তার এ কথার সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই এটা বলা যায় যে, এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টুর্নামেন্ট সেরা বুমরাহ, এটা প্রমাণিত হলো তার টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয়ের মাধ্যমে। সূত্র: ইন্টারনেট, অনলাইন নিউজ।