বাঙালিনিউজ, দেশডেস্ক
গত ২৬ জুন ২০২৪ রোজ বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে, পারিবারিক কলহের জেরে যশোরের মণিরামপুরে স্ত্রী রোজিনা খাতুনকে (৪৫) গলা কেটে হত্যাচেষ্টার পর স্বামী উজির আলী (৫০) আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত স্ত্রী রোজিনা খাতুনকে উদ্ধার করে প্রাথমিকভাবে মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা রোজিনাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের জন্য পরামর্শ দেন।
জানা গেছে, গত বুধবার রাতে স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার পর আত্মহত্যাকারী উজির আলী মণিরামপুর উপজেলার বালিধা গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন ভ্যানচালক। স্ত্রী রোজিনা খাতুন ও প্রতিবন্ধী একটি ছেলেকে নিয়ে উজির আলী নেহালপুর ঝাউতলা গ্রামের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। রোজিনা খাতুন একই গ্রামের দেনআলী গাজীর মেয়ে। উজির আলী স্ত্রী রোজিনাকে নিয়ে তিন মাস ধরে নেহালপুরের ঝাউতলায় ওই ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।
বুধবার গভীর রাতে উজির আলী ওই বাসাতেই তার স্ত্রী রোজিনাকে একটি গাছি দা দিয়ে গলা কেটে হত্যার চেষ্টার পর, নিজে আত্মহত্যা করেন। নেহালপুর ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হান্নান এই ঘটনার সত্যতা মিডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন।
মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মেহেদী মাসুদ জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ধারালো দা দিয়ে স্ত্রী রোজিনা খাতুনের গলায় আঘাত করেন উজির আলী। এসময় আহত রোজিনা ও তার ছেলের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে উজির আলী পালিয়ে যান। স্থানীয়রা রোজিনাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহরাব আলী বলেন, ‘বুধবার রাতে হঠাৎ ফোনে জানতে পারি এক নারীকে গলা কেটে ফেলে রেখে তাঁর স্বামী পালিয়ে গেছেন। খবর পেয়ে নেহালপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আব্দুল হান্নানসহ আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। এরপর রক্তাক্ত রোজিনা খাতুনকে উদ্ধার করে মনিরামপুর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
সোহরাব আলী আরও বলেন, ‘রাতেই ফাঁড়ির পুলিশ উজির আলীকে ধরতে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। আজ ২৭ জুন বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় লোকজন উজির আলীর ভাড়া বাড়ির পাশে একটি সজিনা গাছের সঙ্গে তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, উজির আলী ও তাঁর স্ত্রী রোজিনা খাতুনের মধ্যে টাকা-পয়সা নিয়ে কয়েক দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। গত বুধবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার একপর্যায়ে উজির আলী গাছি দা দিয়ে স্ত্রীর গলায় কোপ বসিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান। এরপর স্ত্রী ও সন্তানের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে।
মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তন্ময় বিশ্বাস বলেন, গৃহবধূর গলার কয়েকটা শিরা ও শ্বাসনালির কিছু অংশ কেটে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতেই তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল।
তবে নেহালপুর ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ উপপরিদর্শক আব্দুল হান্নান বলেন, আহত গৃহবধূকে ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আত্মহত্যা করা উজির আলীর লাশ উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলছে।
মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মেহেদী মাসুদ জানান, গতকাল ২৭ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে প্রতিবেশীরা উজির আলীকে বাড়ির পাশে একটি সজিনা গাছে গলায় রশি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ উজির আলীর মরদেহ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, জাগো নিউজ, আজকের পত্রিকা।