বাঙালিনিউজ, দেশডেস্ক
ময়মনসিংহে এক নারী চিকিৎসক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর, শরীরে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর নাম ডা. অপর্ণা বসাক। তিনি ময়মনসিংহ নগরীর প্রান্ত স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন। গতকাল ২৫ জুন ২০২৪ রোজ মঙ্গলবার ভোরের দিকে ময়মনসিংহ নগরীর পণ্ডিতপাড়া এলাকার লাল দাস ভবনের নিচতলায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, নিহত অপর্ণা বসাক জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার প্রয়াত রতন বসাক ও জ্যোৎস্না বসাক দম্পতির মেয়ে। দুই মাস আগে ময়মনসিংহ নগরীর পণ্ডিতপাড়া এলাকার একটি বাড়ির নিচতলায় বাসা ভাড়া নেন তিনি। ওই বাসায় মা জ্যোৎস্না বসাককে নিয়ে থাকতেন। প্রান্ত স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতালে গত এক বছর ধরে তিনি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বগুড়া মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন।
মা জ্যোৎস্না বসাকের বরাত দিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, গত ২৪ জুন সোমবার রাত ১০টার পর খাবার খেয়ে নিজের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন অপর্ণা। পরদিন ২৫ জুন মঙ্গলবার সকাল সাতটা থেকে আটটার মধ্যে অপর্ণার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে এক আত্মীয় অপর্ণার খোঁজ নিতে বলেন। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে ডাকাডাকি করলে সাড়া না পেয়ে স্থানীয় লোকজন দরজা ভেঙে আগুন নিভিয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
জ্যোৎস্না বসাক আহাজারি করে বলেন, ‘ঘর থেকে পোড়া গন্ধ পেয়ে লোকজনকে ডাকি। কী কারণে মেয়ে এমন করল, বুঝতে পারছি না।’
মৃত্যুর আগে অপর্ণা বসাক তার ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন। মঙ্গলবার ভোরের দিকে অপর্ণা নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে লেখেন, ‘ভালো থাকো। আমি আর পারছি না। হয়তো সবার মতে হেরে গেলাম। মুক্তি দিয়ে গেলাম।’স্ট্যাটাসটি একজন ব্যক্তিকে ট্যাগ করে দেওয়া হয়েছে।
কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন গণমাধ্যমকে নারী বিকিৎসকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গতকাল ২৫ জুন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মহত্যার ঘটনাটি আমাদের জানানো হয়। পরে আমরা গিয়ে রান্না ঘরের দরজা ভেঙে তার অগ্নিদগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করি। ওই দিন বিকালেই মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, ভোর চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর, শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই নারী চিকিৎসক। প্রাথমিক তদন্তে প্রেমের কারণে আত্মহত্যার করেছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে পরিবার প্রেমের বিষয় নিয়ে কিছু বলছে না।
ফেসবুকের স্ট্যাটাসে যে ব্যক্তিকে ট্যাগ দেওয়া হয়েছে, তাঁকে খুঁজতে পুলিশ কাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে আইনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে সন্ধ্যায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনও অভিযোগ করা হয়নি। যাকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে আমরা তার খোঁজ করছি।
এ বিষয়ে প্রান্ত স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী মশিউর আলম চন্দন গণমাধ্যমকে বলেন, ডা. অপর্ণা বসাক গত এক বছর ধরে আমাদের হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে তিনি নগরীর পন্ডিতপাড়া এলাকার একটি বাসায় আত্মহত্যা করেছেন বলে জানতে পেরেছি। তবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা বলতে পারছি না। সূত্র: প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন।