শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে না, বললেন প্রধানমন্ত্রী

Spread the love

ভারত সফর ছিল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু অত্যন্ত ফলপ্রসূ

বাঙালিনিউজ, দেশডেস্ক

একটা দেশের মধ্যে অন্য দেশের ট্রানজিট দিলে কোনো ক্ষতি নেই, এই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা এই দেশকে বিক্রি করে না। আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি, এটা মনে রাখা উচিত।’  সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে আজ ২৫ জুন ২০২৪ রোজ মঙ্গলবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বেলা ১১টায় এ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে শুরু হয় সাংবাদিকদের প্রশ্নপর্ব।

প্রথমেই বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেল চলাচলের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন আসে। দেশকে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা প্রসঙ্গও ছিল প্রশ্নটিতে। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার একটা প্রশ্ন আছে, ওজনটা কিসে মাপছে? ওজন মাপা হচ্ছে কীভাবে? আগে তো পাল্লায় হতো, এখন মেশিনে মাপা হয়। এখন তাহলে কীভাবে বিক্রি হবে?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। যারা সমালোচনা করে, তাদের জানা উচিত, একটিমাত্র মিত্রশক্তি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ স্বাধীনে সহযোগিতা করেছে। ভারত বাংলাদেশের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তারাও বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল।

পৃথিবীতে যারা মিত্রশক্তি, যারা যুদ্ধে সহযোগিতা করে, তারা কিন্তু ওই দেশ ছেড়ে যায়নি। এখনো জাপানে আমেরিকান সৈন্য আছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এখানে ভারত কিন্তু ব্যতিক্রম। তারা মিত্রশক্তি হিসেবে আমাদের পাশে থেকে যুদ্ধ করে এসেছে। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখনই চেয়েছেন, তারা (ভারতের সৈন্য) দেশে ফেরত যাক—ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছেন এবং তাদের ফেরত নিয়ে গেছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপরও যারা কথা বলে, ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে, তারা এ কথা বলে কীভাবে? আসলে যারা এ কথা বলে, তারা নিজেরাই ভারতের কাছে বিক্রি হওয়া। কারণ আমরা দেখেছি, যখনই মিলিটারি ডিক্টেটররা (সামরিক স্বৈরাচার) এসেছে, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ওপর দিয়ে ভারতবিরোধী কথা বলেছে, আর ভারতের পা ধরে বসে থেকেছে। এগুলো আমার নিজের দেখা, জানা।

‘একটা দেশের মধ্যে অন্য দেশের ট্রানজিট দিলে ক্ষতি কী বলে প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রেল যেগুলো বন্ধ ছিল (ভারতের সঙ্গে), সেগুলো আস্তে আস্তে খুলে দিচ্ছি। অর্থনীতিতে এটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশে কি চারদিকে দরজা বন্ধ করে থাকব? ইউরোপের দিকে তাকান, সেখানে কোনো বর্ডার নেই। সেখানে কি এক দেশ আরেক দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ। সমস্ত যোগাযোগব্যবস্থা খুলে দিলাম, এর উপকার পাবে সাধারণ মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার পথ এবং কার্যপন্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের দুই দেশের এবং জনগণের কল্যাণের জন্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সাম্প্রতিক ভারত সফর ছিল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু অত্যন্ত ফলপ্রসূ। ‘আমি মনে করি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে এ সফর সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে।’তিনি বলেন, এই সফর দুই প্রতিবেশী দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এ সফরকালে ভারতের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল নবনির্বাচিত দুটি সরকার কীভাবে সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে একটি রূপকল্প প্রণয়ন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে ঢাকা ও দিল্লি নতুনভাবে পথ-চলা শুরু করেছে, সে ধারাবাহিকতায় ‘রূপকল্প ২০৪১’ এর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ নিশ্চিত করার জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করার ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি।’

দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক আরও সংহত করতে সফরকালে ঢাকা ও নয়া দিল্লির মধ্যে ৭টি সমঝোতা স্মারক সই এবং আরও ৩টি সমঝোতা স্মারকের পুনর্নবীকরণ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিগত ১৫ বছরে একটি অনন্য উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। যার সুফল দু’দেশের জনগণ ভোগ করছেন।’ তিনি বলেন, বিশেষ করে ২০২৩ সালে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন- বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ক্রমাগত বিকশিত এবং দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। চলমান বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে মোদি বলেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে আরও গভীরভাবে কাজ করতে আগ্রহী।

শেখ হাসিনা বলেন, মোদি আশ্বাস দিয়েছেন- বাংলাদেশ তাঁদের ‘প্রতিবেশী প্রথম’, ‘অ্যাক্ট ইস্ট’, ‘সমুদ্র ও ইন্দো-প্যাসিফিক’ নীতির কেন্দ্রে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার পথ এবং কার্যপন্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের দু’দেশের এবং জনগণের কল্যাণের জন্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে আমরা অন্যান্য পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে রাজনীতি ও নিরাপত্তা, শান্তিপূর্ণ ও সুরক্ষিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং সীমান্তে হতাহতের ঘটনা শুন্যে নামিয়ে আনা, বাণিজ্য ও সংযোগ, অভিন্ন নদীর টেকসই ব্যবস্থাপনা ও পানি বণ্টন, জ্বালানি ও শক্তি এবং আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করি।

তিনি বলেন, ‘আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীকে তার সুবিধাজনক সময়ে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে দ্বিপক্ষীয় সফরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২১ জুন দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যান। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট টানা তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করার পর ভারতে কোনো সরকারপ্রধানের এটিই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। এছাড়া সফরটি ছিল ১৫ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের রাজধানীতে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সফর। গত ৯ জুন মোদির শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনা।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান ও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন। সূত্র: প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন, বাসস, ইউএনবি।