ওয়েনাড আসন ছাড়লেন রাহুল, উপ-নির্বাচনে লড়বেন প্রিয়াঙ্কা

Spread the love

বাঙালিনিউজ, বিশ্বডেস্ক

গতকাল ১৭ জুন ২০২৪ রোজ সোমবার সন্ধ্যায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ঘোষণা করেছেন যে, তিনি লোকসভায় উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি আসন রাখছেন এবং কেরালার ওয়ানাড আসন ছেড়ে দিচ্ছেন। সেখান উপ-নির্বাচনে তাঁর ছোট বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কংগ্রেসের প্রাথী হয়ে ভোটে লড়বেন। রাহুলের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাহুল গান্ধী কোন আসন ছেড়ে দিচ্ছেন এবং তাঁর ছেড়ে দেওয়া আসনে কংগ্রেসের হয়ে কে লড়বেন। একইসঙ্গে উত্তর পাওয়া গেলো, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নির্বাচনে লড়বেন কিনা, সেই প্রশ্নের। কংগ্রেসের এই ঘোষণার পর, বিজেপি আবার কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্র নিয়ে সোচ্চার হয়েছে।

গতকাল ১৭ জুন সোমবার কংগ্রেসের নীতিনির্ধারণী বৈঠক শেষে কংগ্রেসের পোস্টার মুখ ও সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি ওয়ানাড সাংসদ না থাকলেও আগের মতোই বারবার ওয়ানাড় যাবেন। আর বোন প্রিয়াঙ্কা তো থাকবেনই।

প্রিয়াঙ্কা দীর্ঘদিীন ধরে রায়বেরিলি ও ওয়ানাডে কাজ করেছেন। ফলে দুই আসনের মানুষ কার্যত দুইজন করে সাংসদ পাবেন। বোন প্রিয়াঙ্কা, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং কেরালার নেতা কে সি বেনুগোপালকে পাশে নিয়ে রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের জানান, ”এই সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ ছিল না। গত পাঁচবছর ধরে আমি ওয়ানাড়ের প্রতিনিধি ছিলাম। সেখানকার মানুষ আমাকে ভালোবাসা দিয়েছেন। আবার রায়বেরিলির সঙ্গে আমার পরিবারের দীর্ঘদিনের যোগ। সেখানকার মানুষও আমাকে ভালোবাসেন।”

রাহুল জানান, ওয়েনাড ছাড়লেও তিনি সেখানে নিয়মিতভাবে যাবেন। ওয়েনাডের জন্য যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা যাতে পূরণ হয় সেটাও দেখবেন। রাহুল বলেন, “প্রিয়াঙ্কা ওয়েনাড থেকে ঠিকই জিতবেন। তিনি একজন উপযুক্ত জনপ্রতিনিধি হবেন। ওয়েনাডের জনগণ বরং খুশি হবেন এটা দেখে যে তাঁরা একজনের বদলে দুজনকে তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে পাবেন। প্রিয়াঙ্কা ও আমি। ওয়েনাডের জনতার জন্য আমার দরজা চিরকাল খোলা থাকবে।”

গতকাল ১৭ জুন ২০২৪ রোজ সোমবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গের বাড়িতে আয়োজিত ওই বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেণুগোপাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দলীয় সভাপতির বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও জানিয়েছেন, তিনি নার্ভাস নন। বরং প্রস্তুত। ওয়েনাডের জন্য তিনি তাঁর সেরাটা দেবেন। তিনি বলেন, আমি ওয়ানাডের জন্য কাজ করব। সেখানে ভাইয়ার অভাব বুঝতে দেবো না। আমি ওয়ানাডে সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করব। আমি একজন ভালো প্রতিনিধি হওয়ার চেষ্টা করব। এর মধ্য দিয়ে ভারতের সংসদীয় রাজনীতিতে প্রথমবারের মতো আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। যেটা দেশব্যাপী কংগ্রেস ভক্তদের অনেক দিনের প্রত্যাশা ছিল।

অবশ্য ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধীর কন্যা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অনেক আগে থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। সর্বভারতীয় কংগ্রেস তথা এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি উত্তর প্রদেশের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর সংসদীয় রাজনীতিতে আসা নিয়ে যে জল্পনা-কল্পনা ছিল, এবার তার অবসান হতে যাচ্ছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, কংগ্রেস পার্টির একাংশের প্রস্তাব ছিল—এবারের লোকসভা নির্বাচনে বারাণসী আসনে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে যেন ভোটের লড়াইয়ে নামেন প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু সেই প্রস্তাবে তিনি রাজি হননি। কিন্তু সম্প্রতি রায়বেরেলিতে রাহুল গান্ধী বলেছেন, প্রিয়াঙ্কা যদি বারাণসীতে ভোটে দাঁড়াতেন, তাহলে নরেন্দ্র মোদীকে অন্তত ২ থেকে ৩ লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করতেন।

ভারতে এবারের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি ও কেরালার ওয়ানাড দুই জায়গা থেকেই বিপুল ভোটে জিতেছেন। এর মধ্যে রায়বেরিলি থেকে তিনি জিতেছেন ৩ লাখ ৯০ হাজার ৩০ ভোটের ব্যবধানে। আর ওয়ানাড থেকে তিনি জিতেছেন ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪২২ ভোটে।

দুইটি আসনের মধ্যে আজ একটি ছেড়ে দিতে হচ্ছে রাহুলকে। কারণ, ভারতের সংবিধান অনুসারে যেকোনো একটি সংসদীয় আসন ধরে রাখা যায়। এ কারণে দুটি আসনে জেতা রাহুল গান্ধী কেরালার ওয়ানাড আসন ছেড়ে দিচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী ভোটের ফল প্রকাশের ১৪ দিনের মধ্যে এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। আজ ১৮ জুন ২০২৪ রোজ মঙ্গলবার সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে।

গত এক সপ্তাহ ধরেই প্রিয়াঙ্কার সংসদীয় রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশের গুঞ্জন চলছিল। গত ১৩ জুন ২০২৪ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘আমি রায়বেরেলি ও ওয়েনাডের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। শিগগির জানতে পারবেন।’

শেষ পর্যন্ত ১৭ জুন জানা গেলো, ওয়েনাড ছেড়ে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাহুল। আর এই আসনে মূলত প্রিয়াঙ্কাকে নির্বাচিত করে লোকসভায় নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে কংগ্রেস পার্টি।

প্রায় প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কাকে প্রশ্ন করা হতো- সেটা হলো, তিনি কি এবার ভোটে লড়ছেন? আর প্রতিবার নিয়ম করে প্রিয়াঙ্কা একটাই জবাব দিতেন, তার ভোটে দাড়ানোর কোনো ইচ্ছে নেই। প্রতিবার মায়ের কেন্দ্র রায়বেরিলি ও ভাইয়ের সাবেক আসন আমেথির জন্য কাজ করতেন তিনি। বস্তুত, এই দুইটি আসনের দেখভালও তিনিই করতেন।

এবার সেই প্রিয়াঙ্কা ভোটে প্রার্থী হচ্ছেন, সেটাও কেরালা থেকে। রাহুলের জিতে আসা কেন্দ্রে প্রিয়াঙ্কা লড়বেন। কংগ্রেসের জন্য এই আসনে এবার গান্ধী পরিবারের কাউকে রাখা জরুরি। কারণ, ২০২৬ সালে কেরালায় বিধানসভা নির্বাচন। বামেদের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার আশা করছে কংগ্রেস। সেখানে তারা এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে চাননি, যার জন্য মানুষ তাদের উপর বিন্দুমাত্র ক্ষুব্ধ হন। রাহুলের জায়গায় তাই প্রিয়াঙ্কাকে দাঁড় করানো হচ্ছে।

ওয়েনাড থেকে প্রিয়াঙ্কার নাম এখনই ঘোষণার কোনো বাধ্যবাধকতা অবশ্য ছিল না। কারণ, নির্বাচন কমিশন ওই কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো ঘোষণাই করেনি। কিন্তু কংগ্রেস সে জন্য অপেক্ষা না করার সিদ্ধান্ত নেয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দলের স্বার্থ ও ওয়েনাডের জনগণের জন্য প্রিয়াঙ্কার নাম এখনই জানিয়ে দেওয়া দরকার, যাতে ওই আসনে বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি না হয়। ওয়েনাডের কংগ্রেস মহলও দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাহুল একান্তই যদি রায়বেরিলি ধরে রাখেন তা হলে যেন প্রিয়াঙ্কাকে তাদের আসনের প্রার্থী করা হয়।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের আমেথি থেকে হেরে গেলেও কেরালার ওয়েনাডে জিতেছিলেন রাহুল গান্ধী। এবার রায়বরেলিতে জেতার পর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে সেই ওয়েনাড ছেড়ে দিলেন রাহুল।

প্রসঙ্গত, এই প্রথম গান্ধী-নেহরু পরিবারের কোনো রাজনীতিক দক্ষিণ ভারত থেকে জীবনে প্রথমবার লোকসভা ভোটে লড়তে যাচ্ছেন। রাহুল এবং তার দাদি দক্ষিণ ভারত থেকে লোকসভা ভোটে লড়ে জিতলেও, জীবনের প্রথম নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ থেকে লড়েছিলেন।

রায়বরেলিতে এবার রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছেন রাহুল। এই আসনে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন সোনিয়া গান্ধী। তারও আগে রায়বরেলি থেকে কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তবে কংগ্রেসের এই পুরোনো গড়ে রাহুল মা সোনিয়া গান্ধীর চেয়েও এ বছর বেশি ভোট পেয়েছেন। বিজেপির প্রার্থীকে হারিয়েছেন প্রায় ৪ লাখ ভোটে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের আমেথি থেকে হেরে গেলেও কেরালার ওয়েনাড জিতিয়েছিল রাহুলকে। এবার রায়বরেলিতে জেতার পরে সেই ওয়েনাড ছেড়ে দিলেন রাহুল।

২০১৪ সালে ষোড়শ লোকসভা ভোটে মাত্র ৪৪টি এবং ২০১৯ সালের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ৫২টি আসনে জিতেছিল কংগ্রেস। এবার ২০২৪ সালের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে ৯৯টি আসন জিতে ‘প্রধান বিরোধী দল’-এর মর্যাদা পুনরুদ্ধার করেছে কংগ্রেস। ফলে এক দশক পরে লোকসভায় ফিরতে চলেছে ‘বিরোধী দলনেতার পদ।

স্বাস্থ্যের কারণে সোনিয়া গান্ধী রায়বেরিলি ছেড়ে দিয়েছেন। লোকসভা ছেড়ে তিনি রাজ্যসভার সদস্য হয়েছেন। সেই থেকে জল্পনা চলছিল প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব শেষ সময়ে সিদ্ধান্ত নেয় আমেথি আসন থেকে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কিশোরীলাল শর্মা প্রার্থী হবেন এবং রাহুল দ্বিতীয় আসন হিসেবে দাঁড়াবেন রায়বেরিলি থেকে। সেই সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল ভোটের ফলাফলেই তার প্রমাণ। কিশোরীলাল দেড় লাখের বেশি ব্যবধানে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে হারিয়েছেন, রাহুলও রায়বেরিলি থেকে জিতেছেন বিপুল ব্যবধানে।

তখন থেকেই শুরু হয় নতুন রাজনৈতিক জল্পনা, রাহুল কোন আসন রেখে কোনটা ছাড়বেন। সব দিক খতিয়ে দেখে ঠিক হয়, উত্তরপ্রদেশে দলকে শক্তিশালী করে তুলতে হলে রায়বেরিলিতে রাহুলের উপস্থিতি বেশি প্রয়োজন। কিন্তু তা করতে গিয়ে ওয়েনাড তথা কেরালার মানুষকে কষ্ট দেওয়া উচিত হবে না। সেই কারণে প্রিয়াঙ্কাকে এই নির্বাচনে নামানোর সিদ্ধান্ত হয়।

প্রিয়াঙ্কা নিজেও আগ্রহী। গেল অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে তিনি বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস প্রার্থীদের হয়ে প্রচার চালিয়েছেন। রায়বেরিলি ও আমেথির ভোটের দায়িত্বও তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। এবার কেরালার ওয়েনাডে ভাই রাহুল গান্ধীর ছেড়ে দেওয়া আসনে উপ-নির্বাচনে প্রার্থীহচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সূত্র: ইন্টারনেট অনলাইন নিউজ।