সমুদ্রতলে গুপ্তধন! উদ্ধারে চলছে অভিযান

Spread the love

বাঙালিনিউজ, ঐতিহ্যডেস্ক
সমুদ্রতলে গুপ্তধন! তা-ও আবার যেমন তেমন গুপ্তধন নয়। এক জাহাজ সোনা-রূপো-দামি অলঙ্কার এবং দুর্মূল্য সব রত্ন! যার সন্ধানে নবাব-বাদশার চোখেও ধাঁধা লেগে যাবে! যুদ্ধবিধ্বস্ত এক সম্রাটকে সাহায্য করার জন্য বাণিজ্যতরী বোঝাই করে সেই সম্পদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এক দেশ থেকে অন্য দেশে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এমনই যে শত্রু দেশের কাছে সেই খবর পৌঁছে যায়। মাঝসমুদ্রে জাহাজের উপর হামলা করে তারা। নামে বাণিজ্যতরী হলেও সে কালে এই ধরনের জাহাজকে রণতরী হিসাবে ব্যবহার করা হত।

সে জাহাজেও যুদ্ধের বন্দোবস্ত ছিল। ছিল ৬২টি কামান, বন্দুক, অন্য অস্ত্রও। সম্রাটের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ৬০০ জনকেও। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কেউই প্রশিক্ষিত যোদ্ধা ছিলেন না। ফলে অতর্কিত হামলার সামনে দিশাহারা হয়ে পড়েন। অল্প যুদ্ধেই ধ্বংস হয় সেই জাহাজ। ‘বিপুল’ ধনসম্পদ এবং ছয় শতাধিক যাত্রী নিয়ে সলিল সমাধি হয় তার।

এই ঘটনা ঘটেছিল আজ থেকে ৩০০ বছর আগে। ৩০০ বছর পরে সেই জাহাজের খোঁজ পেলো এক দেশ। জাহাজের নাম ‘সান হোসে গ্যালেয়ন’। ১৭০৮ সালে দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ার উপকূল থেকে ওই জাহাজ রওনা হয়েছিল স্পেনের উদ্দেশে। স্পেনের সঙ্গে তখন যুদ্ধ চলছে ব্রিটেনের। স্পেনের সম্রাট পঞ্চম ফিলিপের সেনাবাহিনীকে রসদ জোগাতে স্পেনের উপনিবেশ কলম্বিয়া থেকে ছ’মাস ধরে সংগ্রহ করা হয় ১ কোটি ১০ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা। পাশাপাশি রুপোর মুদ্রা এবং কলম্বিয়ার খনি থেকে পান্নাও সংগ্রহ করেছিলেন স্পেন সম্রাটের দূতেরা।

আজকের দিনে সেই সব ধনসম্পদের মূল্য ছিল কম করে হলেও ২০০০ কোটি ডলার অর্থাৎ টাকার হিসাবে প্রায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। তবে আপাতত তা পড়ে রয়েছে সমুদ্রের অতলে। এই গুপ্তধনের সন্ধানে সমুদ্র ঢুঁড়ে ফেলেছে বহু দেশ। যে কলম্বিয়া থেকে স্পেনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল সান হোসে, সেই স্পেনও কম চেষ্টা করেনি। অবশেষে ন’বছর আগে সান হোসের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পায় কলম্বিয়াই।

ক্যারিবিয়ান সাগরে কলম্বিয়ার শহর কার্টাজেনার অদূরে সান হোসের উপর হামলা করেছিল ব্রিটিশ সেনা। কলম্বিয়া সরকার সেই কার্টাজেনের উপকূলের কাছেই সমুদ্রতলে খুঁজে পায় সান হোসের ধ্বংসাবশেষ। নতুন নামও পেয়েছিল সান হোসের ধ্বংসাবশেষ। তার ভিতরের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির হিসাব করে বিশেষজ্ঞেরা ওই জাহাজের ধ্বংসাবশেষের নাম দিয়েছিল ‘হোলি গ্রেইল অফ শিপরেক’। হোলি গ্রেইল হল খ্রিস্টানদের পবিত্রতম সম্পদ।

তাঁরা বিশ্বাস করেন, গ্রেইল হলো এমন এক পেয়ালা বা পিরিচ বা পাথর, যার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা রয়েছে। আবার অনেকে বলেন, ওই পেয়ালা বা পিরিচেই যিশু খ্রিস্ট তাঁর মৃত্যুর আগের শেষ খাবার খেয়েছিলেন। মোট কথা, ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা অবিশ্বাস্য এক সম্পদ হলো হোলি গ্রেইল। নাগালের বাইরে থাকা ওই বিপুল পরিমাণ সম্পদও তাই এমন অভিধা পেয়েছিল।

যদিও কলম্বিয়া সরকার গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়ার পরে তাকে আর নাগালের বাইরে রেখে দিতে রাজি নয়। সম্প্রতি তারা সেই গুপ্তধন উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেছে। সমস্ত রকম আধুনিক প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়ে কাজে নেমেছে তারা। আপাতত চলছে ‘ক্যারেক্টারাইজ়েশন ফেজ়’। যে পর্বে রিমোট সেন্সর ব্যবহার করে সমুদ্রের বুকে ওই জাহাজ যেখানে ডুবে রয়েছে, তার একটা স্পষ্ট ছবি তৈরি করা হবে।

তার পরে জলের তলে কাজ করতে পারে এমন রোবটও পাঠানো হবে জাহাজের ধ্বংসাবশেষের পাশে। ওই সমস্ত রোবট জাহাজের চারপাশে ঘুরে সেটি কী অবস্থায় রয়েছে তার বিশদ তথ্য সংগ্রহ করবে। ছবি তুলবে জাহাজের ধ্বংসাবশেষের অন্দরেরও। এই দুই অভিযান থেকে যে সমস্ত তথ্য আহরণ করবে কলম্বিয়া সরকার, তার ভিত্তিতে কলম্বিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যানথ্রোপলজি সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে।

ইতিমধ্যে এই অভিযানের একটি নামও দিয়ে ফেলেছে কলম্বিয়া সরকার। স্থানীয় ভাষায় দেওয়া ওই নামের অর্থ ‘সান হোসে গ্যালেয়নের হৃদয়ের উদ্দেশে’। জাহাজ যখন ধ্বংসাবশেষ তখন তার হৃদয়ের খোঁজ করা কতটা নিরাপদ, সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। কিছু দিন আগে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে করুণ পরিণাম হয়েছিল এমনই এক অভিযানের।

আপাতত কলম্বিয়া সান হোসের ধ্বংসাবশেষের ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কথা বলে সন্ধান পর্ব শুরু করলেও গুপ্তধনের সন্ধান পেলে তা নিয়ে কী করবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলেনি। কিন্তু ইতিমধ্যেই সম্পদের দাবিদার হিসাবে সরব হয়েছে বহু দেশ এবং সংস্থা। আমেরিকার সংস্থা সি সার্চ আর্মাডা ওই সম্পদের দাবি জানিয়েছে। স্পেন সরকারও সান হোসে জাহাজের মালিকানার দাবি জানিয়েছে। আপাতত তাই নজর নিবদ্ধ কলম্বিয়ার অভিযানে। গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া গেল কি না এবং পেলেও তার পরিণতি কী হয়, তা দেখতে উৎসাহ বাড়ছে বিশ্ব জুড়ে।

সব ছবি ও খবর: সংগৃহীত, সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।