শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস আজ

Spread the love

দ্যুতিময় বুলবুল

আজ ১৬ জুলাই ২০২৪, রোজ মঙ্গলবার, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৭তম কারাবন্দি দিবস। বাংলাদেশে ১/১১-এর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জরুরি অবস্থা চলাকালে মিথ্যা-বানোয়াট, হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায়, ২০০৭ সালের এই দিন তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে ধানমন্ডি ৫ নম্বর সড়কের পারিবারিক বাসভবন সুধাসদন থেকে গ্রেপ্তার করে। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রায় ১১ মাস কারাবন্দি রাখার পর, প্রচণ্ড বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ও প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনাকে জামিনে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো শেখ হাসিনার কারাবন্দির দিনটি ‘শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস’ হিসাবে পালন করে। দিনটি উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়ের করা মামলায় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ধানমণ্ডির বাসভবন সুধাসদন থেকে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন খুব ভোরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুই সহস্রাধিক সদস্য শেখ হাসিনার বাসভবন ঘেরাও করার পর, তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে।

তৎকালীন রিমোট কন্ট্রোল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী, আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জামিন আবেদন আইনবহির্ভূতভাবে নামঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।

তারপর শেখ হাসিনাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় শেখ হাসিনা আদালতের গেটে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩৬ মিনিট এক আবেগঘন অগ্নিঝরা বক্তব্য দেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ জানান।

গ্রেপ্তারের পূর্ব মুহূর্তে শেখ হাসিনা একটি চিঠির মাধ্যমে জনগণ এবং দলের নেতাকর্মীদেরকে গণতন্ত্র রক্ষায় মনোবল না হারিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে বাংলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে অবরুদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালায় তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারপর অনৈতিক ও অস্বাভাবিকভাবে আইনের অপব্যবহার করে জামিন না দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে দীর্ঘদিন জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাবজেলে বন্দি করে রাখা হয়।

শেখ হাসিনাকে কারাগার থেকে মুক্ত করার জন্য, আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো সরকারের নানা ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি এবং জেল জুলুমের তোয়াক্কা না করে, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামে। এ সময় শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগ ২৫ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে এবং রিমোট কন্ট্রোল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে জমা দেয়।

আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠন ও গণতন্ত্রপ্রত্যাশী জনগণের তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এবং শেখ হাসিনার অনড়, অটল, আপসহীন ও দৃঢ় মনোবল এবং অপরিসীম সাহস ও অকুতভয় মানসিকতা, জনগণের ক্রমাগত প্রতিরোধ আন্দোলন এবং শেখ হাসিনার প্রতি দেশবাসীর অবিচল আস্থা এবং তার মুক্তির জন্য জীবনপণ লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ১১ জুন শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় রিমোট কন্ট্রোল তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

ফলে দেশি-বিদেশি নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর, শেখ হাসিনা তাঁর প্রিয় দল ও জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন। শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্য দিয়ে এ দেশে গণতন্ত্রের পথ উন্মুক্ত হয়। ফলে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণ পুনরায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বর অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে। তারপর গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের পথে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিস্ময় এবং উন্নয়নের রোল মডেল।

নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে অনেক আগেই। ২০১৫ সালের ১ জুলাই এ ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। মধ্যম আয়ের প্রথম ধাপকে নিম্ন মধ্যম আয় বলা হয়, যেখানে মাথাপিছু আয়ের বন্ধনী ১,০৮৬ থেকে ৪,২৫৫ ডলার। মাথাপিছু আয় ৪,২৫৫ থেকে ১৩,২০৫ ডলারের মধ্যে থাকলে তাকে মধ্যম আয়ের দেশ বলা হয়। আর মাথাপিছু আয় ১৩,২০৫ ডলারের ওপরে হলে উচ্চ আয়ের দেশ বলা হয়।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অর্জন করেছে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ থেকে আজ বাংলাদেশ অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করবে। ২০৩৭ সালের মধ্যে বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ পাঁচ বছরের প্রস্তুতিমূলক সময় পার করছে। ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশে উন্নীত করতে চায় বাংলাদেশ। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের লক্ষ্য।

এখন বাংলাদেশের সামনে দুটো লক্ষ্য। একটি হলো- উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া, যার জন্য দরকার কমপক্ষে প্রায় ৪ হাজার ২৫৫ ডলার মাথাপিছু আয় করা। তারপর উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়া, যার জন্য দরকার হবে অন্তত ১৩,২০৫ ডলার মাথাপিছু আয় অর্জন করা। বর্তমানের ২ হাজার ৮০০ ডলারের আয় নিয়ে ৫-৬ ভাগের মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে বাংলাদেশ ৭ থেকে ৯ বছরের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ে পৌঁছাতে পারবে, যা ঘটবে ২০৩১ সালের পর।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিন্ম-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশের প্রায় ৪৫ বছর লেগেছে। স্বাধীনতার সাড়ে পাঁচ দশক পরে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার পথে রয়েছে বাংলাদেশ। দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিন্ম-মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছার পর নয় বছর পূর্ণ হয়েছে। আগামী আট বছরের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয় এবং ১৮ বছরের মাথায় উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে চায় বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৭৪ গুণ বেড়েছে। মাথাপিছু আয় অনেক বেড়েছে, গড় আয়ুও বেশ বেড়েছে। প্রায় ১৭ কোটি জনগোষ্ঠীর এই দেশে নিজস্ব অর্থনৈতিক বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বাংলাদেশ।

২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত, ধনীক শ্রেণির সংখ্যা হবে ৩ কোটি ৪০ লাখ। ২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ৫ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার।

এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় পিতার ন্যায় আপসহীন মনোভাব নিয়েই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ১৯৮১ সাল থেকে গত ৪৩ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা লড়াই করে যাচ্ছেন। জনগণের রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ সার্বিক মুক্তির জন্য শেখ হাসিনাকে সহ্য করতে হয়েছে অনেক জেল-জুলুম ও অত্যাচার-নির্যাতন। অসংখ্যবার মৃত্যুর ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে।

কিন্তু জনগণের সমর্থন ও ভালোবাসায় দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে নির্ভীক ও নির্লোভ শেখ হাসিনা নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। সকল বাধা-বিপত্তি জয় করে আজ শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের দরবারে স্বমহিমায় উজ্জ্বল বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রেরণা ও প্রতীক, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

দ্যুতিময় বুলবুল: লেখক, সাংবাদিক, গবেষক।