যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পেট্রোডলার চুক্তি আর নবায়ন করবে না সৌদি আরব!

Spread the love

বাঙালিনিউজ, অর্থনীতিডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পেট্রোডলার চুক্তি আর নবায়ন করবে না সৌদি আরব।  এবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা পেট্রোডলার চুক্তি থেকে তারা বেরিয়ে আসতে চলেছে। দীর্ঘ পাঁচ দশক পর এই চুক্তি আর নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে।

ধারণা করা হচ্ছে, সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পেট্রোডলার চুক্তি নবায়ন না করলে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে। বিপাকে পড়তে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন।

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে ১৯৭৪ সালের ৮ জুন এই পেট্রোডলার চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। এই চুক্তির বদৌলতে বিশ্ববাণিজ্যে মার্কিন ডলারের ব্যবহার বেড়েছিল। চুক্তিটির আওতায় পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল রফতানির জন্য ব্যবহৃত মার্কিন ডলারকেই পেট্রোডলার বলা হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্যে সোনা আদান-প্রদানের নীতি বাতিল করে পেট্রোডলার চালু করেছিল মার্কিনিরা।

১৯৭৩ সালে মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায় আরব দেশগুলো। ইয়োম-কিপ্পুর সেই যুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো। ফলে বিপাকে পড়ে ওয়াশিংটন।

আর সেই সংকট কাটাতেই সৌদি আরবের সঙ্গে পেট্রোডলার চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তি অনুযায়ী, সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রকে তেল দেবে আর বিপরীতে পাবে মার্কিন সামরিক সহায়তা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। সেই চুক্তির আরো শর্ত ছিলো সৌদি আরব শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় অন্য সব দেশের কাছেও তেল বিক্রি করবে মার্কিন ডলারে।

চুক্তিতে আরও বলা হয়েছিল, পেট্রোডলার থেকে যে রাজস্ব আয় হবে, তার লাভের ভাগও পাবে যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে সৌদি আরব সামরিক সুরক্ষা পেয়েছিল আর যুক্তরাষ্ট্র পেয়েছিল অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। কিন্তু ইতোমধ্যে চলতি বছর ২০২৪ সালের ৯ জুন এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু সৌদি সরকার সেই চুক্তি আর নবায়নে আগ্রহী নয়। এর জেরে ভূরাজনীতি ও অর্থনীতিতে ধাক্কা আসবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

পেট্রোডলার চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় সৌদি আরব একভাবে মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন থেকে সৌদি আরব শুধু ডলার নয়, অন্যান্য দেশের মুদ্রায়ও খনিজ তেল বিক্রি করতে পারবে। চীনের ইউয়ান, ইউরোপের ইউরো, রাশিয়ার রুবল, জাপানের ইয়েন—যেকোনো মুদ্রায় লেনদেন করতে পারবে দেশটি।

এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন আর নিছক দেশীয় মুদ্রাতেই হয় নয়, বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সিতেও লেনদেন হয়। জানা গেছে, সৌদি আরব এখন ক্রিপ্টাকারেন্সিতেও লেনদেন করবে। সৌদি আরবের এ সিদ্ধান্তের জেরে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা ধাক্কা খাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই এক সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের লেনদেন অনেকটা কমবে।

এমনিতেই গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলার কিছুটা প্রাধান্য হারিয়েছে। একের পর এক দেশ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলারনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসছে বা আসার চেষ্টা করছে। যদিও ডলারের বিকল্প হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো দেশের মুদ্রা এককভাবে উঠে আসেনি। ইউয়ান, রুবল কিংবা ইয়েনের ব্যবহার পাল্লা দিয়ে বেড়েছে; এসব মুদ্রার বিনিময় হারও বেড়েছে।

তবে বিশ্ববাণিজ্য এখনো অনেকাংশে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে। সেই নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার বা টিকিয়ে রাখার মূল হাতিয়ার হলো ডলার। বেশির ভাগ লেনদেনের ক্ষেত্রেই সারা বিশ্বে মার্কিন ডলার ব্যবহার করা হয়। এই মুদ্রা দিয়ে সারা বিশ্বের অর্থব্যবস্থার নাটাই নিজেদের হাতে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ডলারের বিনিময় হার বাড়ল না কমল, তার ওপর বিশ্ব অর্থনীতির অনেক কিছু নির্ভর করে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বাড়ালে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যায়। নীতি সুদ বাড়লে বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এ কারণে ডলারের চাহিদা ও বিনিময় হার বেড়ে যায়।

পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডলারের হৃত গৌরব ফেরাতে আন্তর্জাতিক নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। চীনের প্রাধান্য খর্ব করতে আরও উদ্যোগী হতে হবে। কারণ, এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে চীন।

সৌদি আরবের সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের কতটা ক্ষতি হবে, এখনই তা হয়তো বলা যাবে না। তবে ডলারের রাজত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে কি না বা তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কোন কোন ক্ষেত্রে নমনীয় হতে হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। খবর: নাসডাক ডটকম, ইন্ডিয়া টুডে।