বাঙালিনিউজ, বিশ্বডেস্ক
আজ ২৬ জুন ২০২৪ রোজ বুধবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ফাঁসের ষড়যন্ত্রে সঙ্গে জড়িত থাকার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকা নর্দান মারিয়ানা আইল্যান্ডসের একটি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করেন। এই দোষ স্বীকারের ফলে দীর্ঘদিন কারাভোগের পর, চূড়ান্তভাবে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন অ্যাসাঞ্জ।
অ্যাসাঞ্জ যে মার্কিন আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করবেন, তা গতকাল ২৫ জুন মঙ্গলবারই জানা গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁসের যে ফৌজদারি অভিযোগ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, আদালতে তা স্বীকার করবেন।
২০১০ ও ২০১১ সালে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন সামরিক-কূটনৈতিক নথি ফাঁস করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে ১৮টি মামলার তদন্ত করছে মার্কিন বিচার বিভাগ। পাঁচ বছর ধরে তিনি যুক্তরাজ্যের কারাগারে আটক ছিলেন। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
দোষ স্বীকার করে নেওয়ার সিদ্ধান্তের পর, যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় ২৪ জুন সোমবার বেলামার্শ কারাগার থেকে মুক্তি পান অ্যাসাঞ্জ। এরপর তিনি প্রশান্ত মহাসাগরের নর্দান মারিয়ানা আইল্যান্ডসের উদ্দেশে পাড়ি দেন। আজ ২৬ জুন বুধবার সকালে দ্বীপটিতে অবস্থিত মার্কিন আদালতে পৌঁছান তিনি। সেখানে শুনানি শেষে অ্যাসাঞ্জের সাজা ঘোষণা করবেন বিচারকেরা। তাঁর পাঁচ বছর দুই মাস কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে।
তবে যুক্তরাজ্যে এরই মধ্যে পাঁচ বছর কারাভোগ করেছেন তিনি। মার্কিন বিচার বিভাগের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, কারাগারে থাকা ওই সময়কে তাঁর সাজাভোগের সময় হিসেবে ধরা হবে। ফলে তাঁকে নতুন করে আর কারাগারে থাকতে হবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে উইকিলিকস জানিয়েছে, শুনানি শেষে নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রওনা দেবেন অ্যাসাঞ্জ।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ২০০৬ সালে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে উইকিলিকস থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর বহু গোপন নথি প্রকাশ করে দেন তিনি। এতে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন সামরিক-কূটনৈতিক নথি প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। এরপর সারা বিশ্বে শোরগোল পড়ে যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের রোষানলে পড়েন অ্যাসাঞ্জ। তাঁর বিরুদ্ধে ১৮টি মামলার তদন্ত শুরু করে মার্কিন বিচার বিভাগ।
তখন সুইডেনে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকে লন্ডনে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর দুই বছর আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর ২০১২ সালে ইকুয়েডরের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন।
তার পর থেকেই লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। অবশেষে ইকুয়েডরে তাঁর নাগরিকত্বের মেয়াদ শেষ হলে, ২০১৯ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলে ভরে ব্রিটিশ পুলিশ।
২০২১ সালে লন্ডনের ওল্ড বেইলি কোর্টে নির্দেশ দেওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা যাবে না অ্যাসাঞ্জকে। কিন্তু পরের বছর ২০২২ সালে আকস্মিকভাবে তাঁর প্রত্যর্পণের অনুমোদন দেয় ব্রিটিশ সরকার।
একটানা ১৪ বছর ধরে টানাপোড়েনের পরে অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলেন অ্যাসাঞ্জ। তবে প্রত্যর্পণ নয়, আত্মসমর্পণের কারণে ফিরেছে।
দীর্ঘ পাঁচ বছর ব্রিটিশ কারাগারে সাজা ভোগের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে অবশেষে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে উইকিলিকস জানিয়েছে, আজ ২৬ জুন ২০২৪ বুধবার শুনানি শেষে নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রওনা দেবেন অ্যাসাঞ্জ। খবর: রয়টার্স।