বাঙালিনিউজ, খেলারডেস্ক
নিউইয়র্কে গতকাল ১২ জুন বুধবার ৭ উইকেটের জয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে উঠে গেছে ভারত। ১০ বল বাকি থাকতে ১১১ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেছে তারা। ২২ রানে জীবন পেয়ে অপরাজিত ৫০ রানের ইনিংসে দলের জয় নিয়ে ফেরেন সুরিয়াকুমার। ব্যাটিং দুরূহ উইকেটে তার ৪৯ বলের ইনিংসটি গড়া ২টি করে চার ও ছক্কায়।
ছোট পুঁজি নিয়ে বোলিংয়ে ভালোই লড়াই করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম ১৪ বলের মধ্যে ভারতের দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দেন সৌরভ নেত্রাভালকার। তিনিই পরে হাতছাড়া করেন সুরিয়াকুমার ইয়াদাভের ক্যাচ। জীবন পেয়ে দায়িত্বশীল ফিফটিতে ভারতকে জেতান টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান।
ম্যাচের সেরা অবশ্য আর্শদিপ সিং। এই পেসার ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে ৪টি উইকেট নেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যা ভারতের সেরা বোলিং, আর্শদিপের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংও।
৩ ম্যাচের সবগুলো জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষে আছে ভারত। আগের দুই ম্যাচে জেতা যুক্তরাষ্ট্র ৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে। সুপার এইটে যাওয়ার ভাগ্য এখনও তাদের হাতেই আছে। ৩ ম্যাচে ২ পয়েন্ট করে নিয়ে পাকিস্তান তিনে, কানাডা চারে আছে। ২ ম্যাচের দুটিই হেরে তলানিতে আয়ারল্যান্ড। আইরিশদের বিপক্ষেই একটি করে ম্যাচ বাকি আছে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের।
গ্রুপের শীর্ষ দুই দল পাবে সুপার এইটের টিকেট।
নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই জোড়া ধাক্কা খায় যুক্তরাষ্ট্র। ওভারের প্রথম ও শেষ বলে শায়ান জাহাঙ্গির ও আন্দ্রেয়াস হাউসকে ফিরিয়ে দেন আর্শদিপ। পাওয়ার প্লেতে আর কোনো বিপদ না হলেও তারপর নিয়মিত উইকেট হারায় যুক্তরাষ্ট্র। নিয়মিত অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেলের অনুপস্থিতিতে এই ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া অ্যারন জোন্স ১১ রান করতে খেলেন ২২ বল।
পনেরো ছাড়াতে পারেন কেবল দুজন। ৩০ বলে ২ ছক্কায় ২৪ রান করেন ওপেনার স্টিভেন টেইলর। নিতিশ কুমার সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন ২৩ বল খেলে। বাউন্ডারিতে দুর্দান্ত ক্যাচে তাকে ফেরাতে বড় ভূমিকা রাখেন মোহাম্মদ সিরাজ। লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের একটু একটু অবদানে একশ ছাড়ায় স্বাগতিকের সংগ্রহ।
রান তাড়ায় ভারতের শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম ওভারে পেসার নেত্রাভালকারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন ভিরাট কোহলি, পান গোল্ডেন ডাক এর তেতো স্বাদ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই প্রথম শূন্য রানে আউট হলেন তিনি। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত একটি আইপিএল কাটিয়ে আসার পর চলতি বিশ্বকাপে প্রথম তিন ম্যাচে তার সম্মিলিত রান স্রেফ ৫!
অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ভারতের হয়ে খেলা নেত্রাভালকারের পরের ওভারে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রোহিত শার্মাও। ১৫ রানের মধ্যে বিদায় নেন দুই ওপেনার। দলকে এগিয়ে নেন এরপর রিশাভ পান্ত ও সুরিয়াকুমার। পান্তকে ফিরিয়ে ২৯ রানের এই জুটি ভাঙেন আলি খান। একটি করে চার ও ছক্কায় ভারতের কিপার ব্যাটসম্যান ২০ বলে করেন ১৮ রান। প্রথম ১০ ওভারে ভারতের রান ছিল ৩ উইকেটে ৪৭।
ত্রয়োদশ ওভারে সুরিয়াকুমারকে ফেরানোর সুযোগ আসে, কিন্তু ক্যাচ মুঠোয় জমাতে ব্যর্থ হন নেত্রাভালকার। সুযোগ পেয়ে শিভাম দুবের সঙ্গে দলকে এগিয়ে নেন সুরিয়াকুমার। শেষ ৫ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৩৫ রান। তবে ষোড়শ ওভার শুরুর আগেই তা নেমে আসে ৩০ রানে! ইনিংসে তিনবার এক মিনিট সময়ের মধ্যে নতুন ওভার শুরু করতে না পারায় পেনাল্টি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাটিং দলের স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৫ রান।
এরপর আর পেরে ওঠেনি যুক্তরাষ্ট্র। দুবের সঙ্গে ৬৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬৭ রানের জুটিতে কাজ শেষ করে ফেরেন সুরিয়াকুমার। ৩৫ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন দুবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
যুক্তরাষ্ট্র: ২০ ওভারে ১১০/৮ (জাহাঙ্গির ০, টেইলর ২৪, হাউস ২, জোন্স ১১, নিতিশ ২৭, অ্যান্ডারসন ১৫, হারমিত ১০, শাকউইক ১১ জাসদিপ ২; আর্শদিপ ৪-০-৯-৪, সিরাজ ৪-০-২৫-০, বুমরাহ ৪-০-২৫-০, পান্ডিয়া ৪-১-১৪-২, দুবে ১-০-১১-০, আকসার ৩-০-২৫-১)
ভারত: ১৮.২ ওভারে ১১১/৩ (রোহিত ৩, কোহলি ০, পান্ত ১৮, সুরিয়াকুমার ৫০*, দুবে ৩১*; নেত্রাভালকার ৪-০-১৮-২, আলি খান ৩.২-০-২১-১, জাসদিপ ৪-০-২৪-০, শাকউইক ৪-০-২৫-০, অ্যান্ডারসন ৩-০-১৭-০)
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আর্শদিপ সিং