বাঙালিনিউজ, দেশডেস্ক
আজ ১০ জুলাই ২০২৪, রোজ বুধবার রাতে বেইজিং সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পূর্বনির্ধারিত সুচি অনুযায়ী চারদিনের সফর শেষে আগামীকাল ১১ জুলাই বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার কথা ছিল সরকারপ্রধানের।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা ও অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের অসুস্থতার খবরে বেইজিং সফর সংক্ষিপ্ত করে একদিন আগে, আজ দেশে ফিরছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের অসুস্থতার কারণে বেইজিংয়ে রাত্রিযাপন না করে দেশেই ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ ১০ জুলাই বুধবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সব কর্মসূচি শেষ হওয়ায় তিনি বেইজিংয়ে রাত্রিযাপন করবেন না। স্থানীয় সময় বুধবার তিনি বাংলাদেশের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল দেশে অবস্থান করছেন। তিনি কিছুটা অসুস্থ। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী রাতেই দেশে ফিরছেন।
ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে বেইজিংয়ে যাওয়া একজন কর্মকর্তা জানান, ৮ জুলাই বেইজিংয়ে পৌঁছার পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ জুলাই দেশে ফেরার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। রাষ্ট্রাচার বিভাগ তৎক্ষণাৎ সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়, সে অনুযায়ী বেইজিংয়ের স্থানীয় সময় রাত ১০টায় বিমান উড্ডয়নের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
পরিবর্তিত সুচি অনুযায়ী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটটি বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে রওনা করে বাংলাদেশ সময় বুধবার মধ্যরাতে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান জানান, ১০ জুলাই বেইজিং সময় রাত ১০টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে উঠবেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ঢাকার শাহজাললাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন।
এদিকে গতকাল ০৯ জুলাই মঙ্গলবার বিকালে বেইজিংয়ের গ্রেট হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিং। এ বৈঠকের ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সিপিপিসিসির জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যানের বৈঠক হয়েছে। এতে উভয় নেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করেন। তারা দলীয় নেতাদের পারস্পরিক সফরের বিষয়েও ঐকমত্যে পৌঁছান।’ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থেকে চীন সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তার আগে, গতকাল ০৯ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন। এ ব্যাপারে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এআইআইবিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। এআইআইবি প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিকে অভূতপূর্ব বলে বর্ণনা করেন।’
০৯ জুলাই ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বৈঠক ছাড়াও একগুচ্ছ রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি শেষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের ১৪০টির বেশি দেশে আমাদের ওষুধ রফতানি হয়। আমরা চীনেও এর প্রসার চাই। পাশাপাশি পাট ও চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক, আম প্রভৃতি রফতানির মাধ্যমে আমরা চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছি।’
এদিকে আজ বুধবার দুপুরের আগে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এবং বিকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রীর। দুই বৈঠকের মাঝে ২০ থেকে ২২টি চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আগামীকাল ১১ জুলাই ২০২৪, রোজ বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর।
গত ৯ জুলাই ২০২৪, রোজ মঙ্গলবার, বেইজিংয়ের সেন্ট রেজিস হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সফর সংক্ষিপ্ত করার তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সব অনুষ্ঠান অপরিবর্তিত রয়েছে। শুধু সূচিতে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরকারপ্রধানের দেশে ফেরার কথা ছিল ১১ জুলাই সকালে। কিন্তু এর পরিবর্তে ১০ জুলাই বুধবার রাতে ঢাকায় ফিরবেন তিনি।
গত ০৮ জুলাই ২০২৪, রোজ সোমবার সকালে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় তাকে ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান চীন সরকারের ভাইস মিনিস্টার, বেইজিংয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এসময় শেখ হাসিনাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইত্তেফাক, বণিকবার্তা, কালেরকণ্ঠ, বিডিনিউজ ২৪.কম, ঢাকাপোস্ট.কম, বাসস, সময় নিউজ।