বাঙালিনিউজ দেশডেস্ক
আজ ০৯ জুলাই ২০২৪, রোজ মঙ্গলবার সকালে, ভোলার মেঘনায় ড্রেজার ডুবিতে নিখোঁজ ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ড্রেজার ডুবির তিনদিন পর ২ জনের লাশ উদ্ধার হলেও, এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরো ৩ জন।
জানা গেছে, গত ০৭ জুলাই ২০২৪, রোজ রোববার রাতে ভোলা সদর উপজেলার মেঘনা নদীতে একটি ড্রেজার ডুবে ৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। মেঘনা নদীর গাজীপুর চর নামক এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের সময় আফসানা-১ নামের ড্রেজারটি ৫ জনকে নিয়ে ডুবে যায়। এই ঘটনার পর, ৭ জুলাই রাতেই ভোলা মডেল থানায় একটি জিডি করা হয়।
গতকাল ০৮ জুলাই সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মালিকপক্ষের ভাড়া করা ডুবুরি দল ডুবন্ত ড্রেজারটি থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার করে। তার আগে ঘটনার পর, গতকাল ০৮ জুলাই সোমবার সকাল থেকে ডুবুরি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। দিনব্যাপী যৌথভাবে চেষ্টা চালায় ভোলার ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের দল। ড্রেজার শনাক্ত হওয়ার পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
আজ ০৯ জুলাই মঙ্গলবার সকালে আবারো উদ্ধার অভিযান শুরু হলে ২ জনের লাশ উদ্ধার হয়। উদ্ধার করা দুজন হলেন সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের বাঘারহাট গ্রামের বাসিন্দা নুরে আলম (৪১) ও আরিফুল ইসলাম (২১)।
অন্যদিকে নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন মো. সিয়াম আহমেদ (২২), হারুনুর রশিদ (৪০) ও মো. তানজিল আহমেদ (২১) নামের তিন শ্রমিক। আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ওই তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের ৫ জনেরই বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার ৩ নম্বর পশ্চিম ইলিশা ইউপির পাঙ্গাশিয়া গ্রামে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত রোববার দিবাগত রাতে ইলিশা ইউনিয়ন ও কাচিয়া ইউনিয়নের সীমানায় গাজীপুর চরসংলগ্ন মেঘনা নদীতে আফসানা-১ নামের বালুকাটা ড্রেজারটি ডুবে যায়। রাতে মালবাহী কোনো লাইটার জাহাজের ধাক্কায় ড্রেজারটি ডুবে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই সময় চালক-কর্মকর্তাসহ পাঁচজন বের হতে পারেননি।
কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, গতকাল সারা দিন ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড চেষ্টা করে বিকেলের দিকে ডুবে যাওয়া ড্রেজারের সন্ধান পায়। নিখোঁজ ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়াটে ডুবুরি দল নামাতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ। দলটি রাত তিনটা পর্যন্ত চেষ্টা করে দুজনের লাশ উদ্ধার করেছে। আজ মঙ্গলবার আবার তাঁদের উদ্ধার তৎপরতা চালানোর কথা।
এদিকে ড্রেজারডুবির ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের বাড়িতে মাতম চলছে। গতকাল নিখোঁজ হারুনের মেয়ে আঙ্কুরা বেগম (১৯) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত বৃহস্পতিবার দিনের ভাগে তাঁর বাবা ফোন করে মুঠোফোনে রিচার্জ করে দিতে বলেন। এরপর কারও সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। হারুনের স্ত্রী নুর জাহান আহাজারি করে বলেন, ‘আমার তিন মাইয়া। ওর বাহের কিছু অইয়া গেলে, ওরা তো এতিম অইয়া যাইবোগো। ও আল্লাহ! আমার ক্যামনে চলব, কে দরব সংসারের হাল!’
এ দুর্ঘটনার পর ভোলা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন জানিয়ে মালিক মো. শাহে আলম বলেন, এক মাস ধরে মেঘনা নদীতে ড্রেজার দিয়ে সরকারি ইজারাদারের বালু কাটা হচ্ছিল। গত শনিবার তিনি ড্রেজারে না গিয়ে তাঁর ভাতিজা আরিফকে পাঠিয়েছিলেন। গত রোববার থেকে তিনি নিখোঁজ। গতকাল রাতে তাঁর ভাতিজার (আরিফুর) লাশ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জেলা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র পাল জানান, ডুবে যাওয়া ড্রেজারটি খুঁজে পেতে গতকাল সারা দিন লেগে যায়। আজ ডুবুরিরা আবার উদ্ধারকাজ শুরু করবেন। তবে নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান। তিনি বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ইলিশা নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিদ্যুৎ কুমার বড়ুয়া জানান, নিখোঁজদের সন্ধানে নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের টিম সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে রয়েছে। তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, ডেইলি বাংলাদেশ।