মার্কিন চন্দ্রযান ‘অডিসিয়াস’ এখন চাঁদে

Spread the love

বাঙালিনিউজ বিজ্ঞানডেস্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়ভুজ আকৃতির রোবট ‘অডিসিয়া’ গতকাল ২২ ফেব্রয়ারি ২০২৪ বৃহস্পতিবার, চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করেছে। ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো মিশনের সফল চন্দ্রাভিযানের ৫০ বছর পর, আবার চাঁদের মাটিতে পা রাখলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চন্দ্রযান ‘অডিসিয়াস’।তবে এ রোবট চন্দ্রযানের চাঁদে অবতরণ খুব সহজ ছিল না।

দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী পর যুক্তরাষ্ট্রের এই চন্দ্রাভিযান দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সুদূরপ্রসারী এক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ অভিযানের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর নিকটতম নভোমণ্ডলীয় ‘প্রতিবেশী’ চাঁদে আবারও মানুষের পদচারণের পথ সুগম হলো।

রোবট অডিসিয়াস গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ‘ইস্টার্ন’এলাকায় অবতরণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটের সাহায্যে মহাকাশে যাত্রা শুরু করে এটি।

উৎক্ষেপণের পর সপ্তাহজুড়ে এটির যাত্রা দৃশ্যত ভালোই ছিল। কিন্তু অডিসিয়াসের চাঁদে নামার আগমুহূর্তের কয়েক সেকেন্ড ছিল এ অভিযান পরিচালনাকারীদের জন্য অনেকটা শ্বাসরুদ্ধকর। ওই সময় নভোযানটি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটান তাঁরা।

তবে অডিসিয়াসকে চাঁদের মাটিতে নামানোর প্রস্তুতিকালে নিয়ন্ত্রণকক্ষে থাকা পরিচালনাকারীরা বুঝতে পারেন যে এটির উচ্চতা ও আনুভূমিক বেগ নির্ধারণে প্রয়োজনীয় লেজার এবং স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মসৃণভাবে অবতরণে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা পয়েন্ট কাজ করছে না। এ অবস্থায় তাঁরা চাঁদের চারপাশে নভোযানটি চলাচলের জন্য অতিরিক্ত পথ বের করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার আপলোডের কাজ শুরু করেন তাঁরা। এর মধ্য দিয়ে অডিসিয়াসকে নাসার ডপলার লাইডার ব্যবস্থায় যুক্ত করা হয়।

রোবট অডিসিয়াসের নকশা ও এটির পরিচালনা করেছে টেক্সাসের হিউস্টনভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইনটুইটিভ মেশিনস। শেষ মুহূর্তের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে এই অভিযান নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা ঘোষণা দেন, অডিসিয়াস সফলভাবে চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছে এবং তাঁদের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান শুরু করেছে।

চাঁদে অডিসিয়াসের অবতরণের প্রায় দুই ঘণ্টা পর ইনটুইটিভ মেশিনস নিশ্চিত করেছে, ‘যোগাযোগবিষয়ক সমস্যা সমাধানের পর’ মহাকাশযানটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক মহাকাশ শিল্পের জন্য এটি এক উল্লেখযোগ্য কীর্তি।

অবতরণের কিছু সময় পর ইনটুইটিভ মেশিনস প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা টিম ক্রেইন বলেন, কোনো রকম সংশয় ছাড়া আমরা এটি নিশ্চিত করতে পারি, আমাদের নভোযান এখন চাঁদের বুকে। আমরা এটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছি। তাই অভিনন্দন।

অবশ্য এ সাফল্য সম্পর্কে প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছিলেন না ইনটুইটিভের কর্মকর্তারা। অডিসিয়াস অবতরণ করার পর প্রথম কয়েকটি মুহূর্ত এটির কাছ থেকে বার্তা পাওয়ার জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিলেন অভিযান পরিচালনাকারীরা। ওই সময় টিম ক্রেইন তাঁর দলকে উদ্দেশ করে বলে ওঠেন, ‘আমরা এখনো মারা যায়নি।’

ইনটুইটিভ মেশিনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তাঁর দলকে বলেন, ‘আমি জানি, অভিযানের ওই মুহূর্ত ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার। তবে আমরা এখন চন্দ্রপৃষ্ঠে ও মহাকাশযানটির সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান করছি। চাঁদে আপনাদের স্বাগত।’

জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্পেস পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক স্কট পেস গণমাধ্যমকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে অনুপস্থিত থাকার পর তার চন্দ্রাভিযানের সক্ষমতা নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

বাণিজ্যিক মহাকাশযানের মাধ্যমে পরিচালিত এই চন্দ্রাভিযানে অর্থায়ন করছে নাসা। এর আগে গত মাসে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের চন্দ্রাভিযান ব্যর্থ হয়। এতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চন্দ্রাভিযান পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সবশেষ ১৯৭২ সালে নাসা সফলভাবে চাঁদে অ্যাপোলো ১৭ মিশন পরিচালনা করে। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট