মাথার বোঝা কমাতে মাকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে গ্রেফতার

Spread the love

বাঙালিনিউজ, দেশডেস্ক

পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের উত্তর জয়পুর গ্রামে জ্যোতিকা বালা (৫০) নামে এক মহিলাকে তার আপন ছেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গত ১১ জুলাই ২০২৪, রোজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

নিহত জ্যোতিকা বালা ওই গ্রামের নারায়ণ বালার স্ত্রী। নাজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: শাহ আলম জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের স্বামী নারায়ন বালা বাদী হয়ে নাজিরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ তাদের বড় ছেলে জ্যোতিষ বালাকে গ্রেপ্তার করেছে।

জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম ইসলাম গতকাল ১২ জুলাই শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে জ্যোতিষ। গ্রেপ্তার আসামির ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তার পরিবারে অশান্তি বিরাজ করছিল। এর জন্য মাকে দায়ী করে জ্যোতিষ। তাছাড়া মায়ের ওষুধ ক্রয়ের জন্য মাসে মাসে বেশ টাকা খরচ হতো। এসব নানা কারণে মা মাথার উপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফলে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে মাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় জ্যোতিষ।

আর সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাথা থেকে বোঝা নামিয়ে ফেলতে জ্যোতিষ পরিকল্পিত ভাবে তার মাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। গতকাল ১২ জুলাই ২০২৪, রোজ শুক্রবার, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের উত্তর জয়পুর গ্রাম থেকে পুলিশ অভিযুক্ত ছেলে জ্যোতিষ বালাকে গ্রেফতারের পরে হত্যার কারণ সম্পর্কে জানতে পেরেছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নাজিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম হাওলাদার ও জেলা ডিবি পুলিশের ইনচার্জ রেজাউল করিম রাজিব।

 

নিহত জ্যোতিকা বালার ছোট ছেলে ক্ষিতিশ বালা জানায়, উপজেলার কালিবাড়িতে তাদের একটি চায়ের দোকান আছে। সেখানে বাবার সঙ্গে কাজ করে সে। অন্যান্য দিনের মতো ১১ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে সে ও তার বাবা দোকান থেকে বাড়িতে ফিরে। এর কিছু আগে বড় ভাই জ্যোতিষ বাড়িতে ফিরেছিল।

ক্ষিতিশ জানায়, বাড়ি গিয়ে সে দেখতে পায় তার মা রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে আছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় মাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য মাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মা মারা যান।

নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার জিনাত তাসনিম বলেন, ওই নারীর নাক, মুখ ও ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের কয়েকটি কোপের চিহ্ন ছিল।

গতকাল শুক্রবার রাতে এক প্রেস ব্রিফিং পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত করে নিহতের বড় ছেলে জ্যোতিষ বালাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে পুলিশের কাছে তার মাকে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে।

পুলিশের কাছে অভিযুক্ত জ্যোতিষ স্বীকারোক্তিতে বলেছে, দীর্ঘদিন যাবত আর্থিক নানা সংকট ছিল তাদের। এর মধ্যে মাসে মাসে তার মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে বেশ টাকা খরচ হতো। এ ছাড়াও পরিবারে নানা কলহ ছিল। এসব কারণে তার মায়ের উপরে ক্ষোভ ছিলো। তাই পূর্বপরিকল্পিকভাবে গত ১১ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে ঘরে থাকা দা দিয়ে তার মাকে কুপিয়ে হত্যা করে সে।

পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম আরও জানান, হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে হত্যার কারণ উদঘাটন ও ঘাতক ছেলেকে গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ। খবর: প্রথম আলো, সমকাল।