ভারতের লোকসভায় বিরোধীনেতা রাহুলের সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতা

Spread the love

বাঙালিনিউজ, বিশ্বডেস্ক

ভারতের অষ্টাদশ লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধীদল জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি ও দলটির অন্যতম শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁকে বিরোধী দলনেতা নির্বাচন করেছে কংগ্রেস তথা সরকার বিরোধী ‘ইনডিয়া জোট’। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইনডিয়া’জোট বিরোধী দলনেতা নির্বাচন করার পর, জীবনের প্রথম সাংবিধানিক পদ গ্রহণ করেছেন রাহুল গান্ধী। ফলে ২০ বছর পর গান্ধী পরিবারের তৃতীয় সদস্য হিসেবে বিরোধী দলনেতা হলেন রাহুল গান্ধী।

ষোড়শ এবং সপ্তদশ লোকসভায় কংগ্রেস বা অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর কাছে বিরোধী দলীয় নেতা পদের জন্য প্রয়োজনীয় ১০ শতাংশ সদস্য ছিল না। ফলে ওই দুই সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ছিল না। এবারের লোসকভা নির্বাচনে কংগ্রেস জিতেছে ৯৯টি আসন। ফলে ১০ বছর পর লোকসভা বিরোধী নেতা পাচ্ছে।

২০০৪ সাল থেকে দুই দশকের রাজনৈতিক কেরিয়ারে এই প্রথম কোনো সাংবিধানিক পদে বসলেন রাহুল গান্ধী। দীর্ঘদিন সক্রিয় রাজনীতি করছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল। এর আগে দলের সভাপতি হয়েছেন। কিন্তু কোনো সাংবিধানিক পদে বসেননি।

এই সাংবিধানিক পদ কিন্তু রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপর্ণ। এর আগে তাঁর সম্পর্কে বিজেপি নেতারা নানা সময়ে কটাক্ষ করেছেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলতেন- রাহুল গান্ধী কে? তিনি বিরোধী দলনেতাও নন, কংগ্রেসের সভাপতিও নন। তাহলে তাঁর কথাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে কেন? তবে এখন বিরোধী দলনেতা হয়ে যাওয়ার পর, রাহুল গান্ধীকে আর কটাক্ষ করতে পারবেন না বিজেপি নেতারা।

রাহুল গান্ধী ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচবার লোকসভা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ২০০৪ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন উত্তর প্রদেশের আমেথি আসন থেকে। তিনি অবশ্য ২০১৯ সালে সপ্তদশ সংসদ নির্বাচনে এই আমেথি আসনেই হেরেছিলেন, বিজেপি প্রার্থী স্মৃতি ইরানির কাছে। তবে এবার অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে আমেথি থেকে লড়েননি রাহুল। সেখানে এবার কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে গেছেন স্মৃতি ইরানী।

২০১৯ সালে রাহুল গান্ধী উত্তরপ্রদেশের আমেথিতে হারলেও, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার ওয়েনাড় আসনে জয়ী হন। ২০২৩ সালে মানহানির এক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে, কয়েকদিনের জন্য সংসদ সদস্য পদ খুইয়েছিলেন তিনি। পরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তিনি সংসদ সদস্য পদ ফিরে পান।

এবার ২০২৪ সালে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে রাহুল গান্ধী কেরালার ওয়েনাড় এবং উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলি আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন। এখন তাঁর ছেড়ে দেওয়া কেরালার ওয়েনাড় আসনে উপ-নির্বাচনে ছোট বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী লড়বেন।

রাহুল গান্ধী ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি যুব কংগ্রেসের চেয়ারপারসন। তবে সাংবিধানিক কোনও পদ রাহুল গান্ধী এর আগে গ্রহণ করেননি। ২০০৪ সালে এবং ২০০৯ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছিল ইউপিএ জোট। সেই সময় তিনি চাইলে ক্যাবিনেট মন্ত্রী বা অন্য কোনও সাংবিধানিক পদে দায়িত্ব পালন করতে পারতেন। কিন্তু, সেই দায়িত্ব তিনি নেননি।

আর তাই, রাহুল গান্ধী প্রশাসক হিসেবে কেমন, তা এখনও জানার বা দেখার সুযোগ হয়নি ভারতের জনগণের। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর পোস্টার মুখ হিসেবে অনেকেই এখনও তাঁর ওপর ভরসা পান না। এবার মন্ত্রী না হলেও, বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব গ্রহণ তাঁর নিজেকে দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে প্রমাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

নেহেরু- গান্ধী পরিবার থেকে এর আগে রাহুল গান্ধীর বাবা রাজীব গান্ধী ১৯৮৯-৯০ সালে বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। রাহুলের মা সোনিয়া গান্ধীও  ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত লোকসভায় বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন।

এবার দেখে নেওয়া যাক, বিরোধী দলনেতা হিসাবে রাহুল গান্ধীর হাতে কী কী ক্ষমতা থাকবে? বিরোধী নেতা হওয়ার কারণে, ১৯৭৭ সালের সংসদীয় আইন অনুসারে- বেতন ও ভাতার পাশাপাশি বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতা পাবেন রাহুল গান্ধী। নিয়ম অনুসারে, বিরোধী দলনেতা, ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমান মর্যাদা পাবেন। তিনি বসবেন লোকসভার স্পিকারের চেয়ারের বাম দিকের একেবারে সামনের সারিতে। এতে প্রোটোকল তালিকায় তাঁর অবস্থানও বাড়বে। বিরোধী দলের নেতা হওয়ার পর রাহুল গান্ধী পাবেন একটি বড়ো বাংলো। এছাড়াও আরো ক্ষমতা থাকবে তাঁর হাতে।

১০ বছর পর ফের ভারতীয় লোকসভা ফের বিরোধী দলনেতা পাওয়ায়, এখন আর বিরোধী দলীয় নেতার সমর্থন ছাড়া মোদি সরকারের পক্ষে একতরফা কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কঠিন হবে।

বিরোধী দলনেতা একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমান মর্যাদা, বেতন এবং ভাতা পান। সেই হিসেবে রাহুল গান্ধীর বেতন হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার রুপি। ক্যাবিনেট মন্ত্রী পর্যায়ের নিরাপত্তাও পাবেন তিনি। অর্থাৎ জেড প্লাস (Z+) ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পাবেন রাহুল। ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের মতো সরকারি বাংলোও পাবেন সাবেক এই কংগ্রেস সভাপতি।

ডেপুটি স্পিকারের আসনের পাশেই থাকবে তাঁর আসনটি। এছাড়া সংসদ ভবনে সচিবালয়সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি ঘরও পাওয়া পাবেন। এছাড়াও রাহুল আরও কিছু সুবিধা পাবেন। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচিত স্পিকারকে মঞ্চে নিয়ে যাওয়া এবং রাষ্ট্রপতি যখন সংসদের উভয় কক্ষে ভাষণ দেন তখন সামনের সারিতে আসন দেওয়া।

সেই সঙ্গে রাহুল গান্ধী থাকবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং দুই নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের তিন সদস্যের প্যানেলেও। তবে এখানে তিনি থাকবেন সংখ্যালঘু হিসেবে। কারণ, তিনি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও, এই প্যানেলে থাকবেন আরও একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। অবশ্য লোকসভায় এবার বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায়, রাহুল গান্ধীর ওপর কোনও সিদ্ধান্ত ‘চাপিয়ে’ দেওয়া কঠিন হবে।

সিবিআই, ইডি বা সিভিসির মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর প্রধানদের বাছাই করার কমিটিরও সদস্য হবেন বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী। এই কমিটিগুলো বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাহুলের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা থাকবে। তিন সদস্যের এই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। আর তৃতীয় সদস্য হিসেবে থাকবেন ভারতের প্রধান বিচারপতি বা সুপ্রিম কোর্টের কোনও একজন বিচারপতি। এটা বিরোধী পক্ষের জন্য বড় উৎসাহজনক হতে পারে।

কারণ বিরোধীরা বারবারই অভিযোগ করেন, বিরোধী নেতাদের হয়রানি করতেই বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে অপব্যবহার করে মোদির বিজেপি সরকার।

এছাড়া সংসদ ভবনে সচিবালয়সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি ঘরও পাবেন বিরোধী নেতা। রাহুল আরও যে সব সুবিধা পাবেন তার মধ্যে রয়েছে নির্বাচিত স্পিকারকে মঞ্চে নিয়ে যাওয়া এবং রাষ্ট্রপতি যখন সংসদের উভয় কক্ষে ভাষণ দেন তখন সামনের সারিতে আসন লাভ।

বিরোধী দলের নেতা হিসেবে রাহুল গান্ধী লোকপাল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার, সিবিআই ডিরেক্টর, সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন, সেন্ট্রাল ইনফরমেশন কমিশন এবং সেন্ট্রাল ইনফরমেশন কমিশনের নির্বাচন ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগের প্যানেলের সদস্য হবেন। প্রধানমন্ত্রী এই সব প্যানেলের প্রধান।

বিরোধী দলনেতা হিসেবে তাঁর অন্যতম প্রধান ভূমিকা সরকারের নীতির উপর কার্যকর প্রশ্ন উত্থাপন করা। বিরোধী নেতার পদটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। কারণ, তাঁকে আইনসভা এবং জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এই পদে তাঁকে সরকারি প্রস্তাব বা নীতির বিকল্প উপস্থাপন করতে হবে।

রাহুল গান্ধী বিরোধী দলনেতা হিসেবে ধারা 3A উল্লিখিত বেতন ও অন্যান্য সুযোগ –সুবিধা লাভের পাশাপাশি একজন এমপি হিসেবে একই মর্যাদা ও বেতন স্কেলে একজন সচিবের সাহায্য পাওয়ার অধিকারী হবেন। ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মীও থাকবে।

রাহুল গান্ধী একজন ব্যক্তিগত সচিব, দুজন অতিরিক্ত ব্যক্তিগত সচিব, দুই সহকারী ব্যক্তিগত সচিব, দুই ব্যক্তিগত সহকারী, একজন হিন্দি স্টেনো, একজন কেরানি, একজন ঝাড়ুদার এবং চারজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী পাবেন। এছাড়াও রাহুল গান্ধী আতিথেয়তা ভাতা ছাড়াও ১৯৫৪ আইনের ধারা ৪ এর অধীনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একই হারে নির্বাচনী ভাতা পাবেন। সূত্র: ইন্টারনেট, অনলাইন নিউজ।