বাঙালিনিউজ, বিশ্বডেস্ক
আজ ২ জুলাই ২০২৪, রোজ মঙ্গলবার, উত্তর প্রদেশ রাজ্যে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে অন্তত ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অনেক লোক। হিন্দুস্থান টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
সংবাদপত্রটি জানায়, ওই রাজ্যের হাথরস জেলায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। মৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম দেবতা শিবের উদ্দেশ্যে একটি ‘সৎসঙ্গ’ (প্রার্থনা সভা) চলাকালীন এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, হাতরাসের মুঘলগড়ী গ্রামে ধর্মীয় এক আয়োজন চলার সময় এই ঘটনা ঘটে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে হাথরাস শহরে দেবতা শিবের পূজা উপলক্ষে আয়োজিত ওই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পুণ্যার্থীরা সমবেত হয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের ভিজ্যুয়ালে দেখা যায়, সেখানে বেশ কিছু লাশ আনা হচ্ছে। সেখানে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
তবে এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো নানা রকম হিসাব দিচ্ছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, অন্তত ৮৭ জন নিহত হয়েছে। আর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের হিসাবে মারা গেছে অর্ধশতাধিক। অন্যদিকে দ্য হিন্দুর হিসাবে প্রায় ৬০ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তীব্র গরমে অনুষ্ঠানস্থলে দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে, সমবেত পুণ্যার্থীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। এ সময় পদদলিত হয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইটাহ’র সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ রাজেশ কুমার বলেছেন, হাথরাসের সিকান্দ্রা রাও থানার সীমানার মধ্যে একটি গ্রামে পদদলিত হয়ে নিহতদের মধ্যে তিন শিশুও রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে অনুষ্ঠানস্থলে নিশ্বাস নিতে না পারায় ‘সৎসঙ্গে’ উপস্থিত লোকজনের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। এরপর লোকজন সেখান থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করায় এই পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ আরও জানায়, অনুষ্ঠানের সময় আবহাওয়া খুব বেশি গরম ও আদ্র ছিল।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী মিডিয়াকে বলেছেন, অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সেখানে সমবেত লোকজন হুড়াহুড়ি করে অনুষ্ঠানস্থল ছাড়তে শুরু করেন। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলের পাশে পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এক নারী জানিয়েছেন, প্রার্থনা সভাটি আয়োজন করা হয়েছিল স্থানীয় এক ধর্মীয় গুরুর সম্মানে। অনুষ্ঠান শেষে যখন মানুষ বের হয়ে যাচ্ছিলেন তখন পদদলনের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত হয়ে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তি বলেন, ‘সেখানে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। বের হওয়ার কোনো উপায়ই ছিল না। এর মধ্যেই সবাই একযোগে বের হওয়ার চেষ্টা করলে একজন আরেকজনের ওপর পড়তে থাকে। আমি যখন সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করি, দেখি একটি মোটরসাইকেল দাঁড়ানো। পরে কোনোমতে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হতে সমর্থ্য হই।’
তবে আলিগড়ের আইজি জানিয়েছেন, সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। যারা বেঁচে আছেন তাদের কাছ থেকে গোটা বিষয়টি জানার চেষ্টা চলছে।
পদদলিত হয়ে মৃত্যুর এ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এক এক্স পোস্টে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’ তবে এ ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়নি। এছাড়া এক্সে এক পোস্টে আদিত্যনাথ জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ঘটনায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ভারতে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ২০০৮ সালে রাজস্থানের যোধপুরে পদদলিত হয়ে ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। মধ্য প্রদেশে ২০১৩ সালে একটি মন্দিরের কাছে সেতুতে পদদলিত হয়ে ১১৫ জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়ছিল। সে সময় সেখানে ৪ লাখের মতো মানুষ জড়ো হয়েছিল। গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল সেতুটি ধসে পড়বে, আর তখনই এই পদদলনের ঘটনা ঘটে।
২০১৬ সালে কেরালায় একটি মন্দিরে হিন্দুদের নতুন বছর উদ্যাপনের সময় নিষিদ্ধ আতশবাজি ফুটানোর সময় ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অন্তত ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।