বলিউড ও হলিউডে নজর কেড়েছেন সাহসী সবিতা

Spread the love

হাজারো অডিশনে বাদ পড়েছিলেন তিনি

বাঙালিনিউজ, বিনোদনডেস্ক

ওটিটির কল্যাণে সবিতা ধুলিপালা এখন গ্লামার জগতের পরিচিত মুখ। তবে এখন পরিচিতি পেলেও, সিনেমার দুনিয়ায় আসতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। করতে হয়েছে সাধনা। সেটা এতটাই যে, শুরুতে হাজারবার অডিশন দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

সেই সবিতা ‘দ্য নাইট ম্যানেজার’ সিরিজে সাহসী এক চরিত্র করে সবার নজর কাড়েন। ডিজনি প্লাস হটস্টরের জনপ্রিয় এই সিরিজের দ্বিতীয় পর্বেও আসতে চলেছেন এই অভিনেত্রী। সবিতা ধুলিপালাকে ‘পোন্নিইন সেলভান টু’ছবিতে শেষ বড় পর্দায় শেষ দেখা গেছে।

২০২৩ সালের এপ্রিলে মুক্তি পাওয়া মণিরত্নমের ছবিটিতে মূল চরিত্রে ছিলেন বলিউড নায়িকা ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। ঐতিহাসিক ড্রামাভিত্তিক এই ছবি বক্স অফিসে ভালোই সাড়া ফেলেছিল। এ ছবিতে আরও অনেক তারকার ভিড়ে কিছুটা কম সুযোগ পান সবিতা।

দৈনিক পত্রিকা অমর উজালা-কে এক সাক্ষাৎকারে সবিতা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পোন্নিইন সেলভান’-এর মতো ছবির অংশ হতে পেরেই আমি খুশি। তাই ছবিতে কম সুযোগ পেলেও আমি ধন্য। এই ছবিতে আমি খুবই স্বচ্ছন্দে কাজ করেছি। এত বড় বড় তারকার ভেতর ছোট একটা অংশ হওয়া আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। নানা রকম পরিস্থিতির মধ্যে আমি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আর এসব আমার দারুণ লেগেছে।’

অভিনেত্রী সবিতা আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, “বৈচিত্র্য”এমন এক জিনিস, যা একজন অভিনয়শিল্পীকে সামনে এগিয়ে যেতে এবং আরও উন্নতি করতে সাহায্য করে। রাতারাতি তারকা হওয়ার স্বপ্ন আমি কখনোই দেখিনি। কখনো এ রকম তাগিদও বোধ করিনি। আমি দীর্ঘ এবং সফল একটা ক্যারিয়ার চেয়েছি, যেখানে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাব। প্রতিটি চরিত্রের প্রতি আমি ন্যায়বিচার করতে চাই।’

সবিতা বলেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই এমন কোনো চরিত্র পাইনি, যেখানে আমার পর্দায় উপস্থিতি বেশি। আর তাই যতটুকু সুযোগ পেয়েছি, তার মধ্যে নিজেকে কীভাবে সুন্দর করে মেলে ধরা যায়, সেই চেষ্টা করেছি। ছোট ছোট চরিত্রকে বড় আকারে তুলে ধরার জন্য পরিশ্রম করেছি।’

২০২৩ সালের ৩০ জুন ডিজনি প্লাস হটস্টারে মুক্তি পায় ‘দ্য নাইট ম্যানেজার টু’। এই সুপারহিট সিরিজে সবিতা ছাড়া মূল চরিত্রে ছিলেন অনিল কাপুর, আদিত্য রায় কাপুর, তিলোত্তমা সোম।

তবে সবিতা ধুলিপালা এখন আর শুধু বলিউড নায়িকা নন। তিনি হলিউডের পথে পা বাড়িয়েছেন। আর এটাই ছিল তাঁর স্বপ্নের ঠিকানা। দেব প্যাটেলের সঙ্গে হলিউডের ছবি ‘মাঙ্কি ম্যান’–এ কাজ করেছেন সবিতা। পরিশ্রম, সংগ্রাম এবং সাধনা তাঁর এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

তা্ই নিজের হলিউড যাত্রা নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত হিন্দী, তামিল, তেলেগু, মালয়ালম আর ইংরেজি ভাষার ছবিতে অভিনয় করা সবিতা ধুলিপালা। এ প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘পাঁচ বছর আগে “মাঙ্কি ম্যান”ছবির জন্য অডিশন দিয়েছিলাম। কিছুদিন পরই স্ক্রিন টেস্টের জন্য ফোন এসেছিল। সেই দিনটার কথা আরও বিশেষভাবে মনে আছে। কারণ, এই দিনই আমি আমার ক্যারিয়ারের প্রথম ছবি “রমন রাঘব টু পয়েন্ট জিরো” এর জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে যাচ্ছিলাম। তখনই এলো ফোন। আর জীবন বদলে গেল। ছবিটিকে ঘিরে সফরের এত বছর পর ব্যক্তিগত জীবনে নানা মোড় এসেছে। আমি জানতাম যে আমার এই সফরটা বিশেষ হবে। আমি আমার চরিত্রকে উপভোগ করেছি। গ্ল্যামার আর বিষাদ সব মিশে আছে আমার চরিত্রের সঙ্গে।’

করোনাকালের মধ্যে সবিতা চার মাস ইন্দোনেশিয়াতে ‘মাঙ্কি ম্যান’ছবির শুটিং করেছেন। এ প্রসঙ্গে এই বলিউড তারকা বলেছেন, ‘এই অতিমারির মধ্যে শুটিং করার সময় অনেক অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তবে আমার জন্য আমার অভিনীত চরিত্রটি খুব একটা চ্যালেঞ্জিং ছিল না। আমি এই সফরের প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি। অনেক যত্ন আর আবেগ দিয়ে এই প্রকল্পটি বানানো হয়েছে।’

নিজের এই হলিউড সফর নিয়ে ২০২১ সালের মার্চে ২৮ বছর বয়সী সবিতা ধুলিপালা বলেছিলেন, ‘আমি আজ এই জায়গায় পৌঁছানোর জন্য নিজেকে তিলে তিলে গড়েছি। অনেক ঘাম ঝরিয়েছি। কাজের ক্ষেত্রে আমি আমার রক্ত আর আত্মা দুটোকেই ব্যবহার করেছি।’ সবিতা ‘মেজর’ছবিতে কাজ করেছেন। দুলকর সালমানের সঙ্গে ‘কুরূপ’ছবিতেও আছেন তিনি। আছেন ‘মেড ইন হেভেন এসটু’ প্রকল্পেও।

ভারতীয় গণমাধ্যম ডিএনএ জানাচ্ছে, স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় সবিতা নানা সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তবে এসব কার্যক্রমের মধ্যে অভিনয় ছিল না। সবিতা বলেন, ‘স্কুল-কলেজে পড়তে ভালোবাসতাম, লেখারও নেশা ছিল। এ ছাড়া শাস্ত্রীয় নৃত্য, ভরতনাট্যমে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। শিল্পের প্রতি এই নেশাই হয়তো আমাকে অভিনয়ে নিয়ে এসেছে।

ছোটবেলা থেকেই দৃঢ়চেতা সবিতা। কলেজের পড়ালেখার পাট চুকিয়ে নিজেকে তিন বছরের চ্যালেঞ্জ দেন। ঠিক করেন, তিন বছরের মধ্যে নিজের ক্যারিয়ারের গতিপথ ঠিক করবেন, এরপর আবার পড়াশোনায় ফিরবেন। চ্যালেঞ্জে ঠিকই উতরে যান সবিতা।

সবিতা ধুলিপালা নিজের সংগ্রামের দিনগুলো নিয়ে বলেন, ‘আমার পরিবারের কেউ সিনেমার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমাকে সুযোগ পেতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমি এক হাজারের বেশি অডিশন দিয়েছি।’

দক্ষিণ ভারতের মেয়ে হলেও সিনেমায় অভিষেক হয় হিন্দিতে। অনুরাগ কশ্যপের ছবিতে। হিন্দি ভাষা রপ্ত করতে তাই দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়েছে সবিতা ধুলিপালাকে। ২০১৬ সালে ‘রমন রাঘব ২.০’ -এর পর সবিতাকে দেখা গেছে তেলেগু, তামিল ও মালয়ালম সিনেমায়ও।

২০১৬ সালে অভিষেকের পর এ পর্যন্ত ‘পোন্নিইন সেলভান’, ‘কুরুপ’ ইত্যাদি সিনেমায় তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে; ‘দ্য নাইট ম্যানেজার’, ‘মেড ইন হেভে’-এর মতো সিরিজ সমালোচকদের বাহবা পেয়েছে। বৈচিত্র্যময় ও সাহসী চরিত্রে অভিনয় করে কয়েক বছর ধরে আলোচনায় এই অভিনেত্রী।

নিজের কাজ নিয়ে সবিতা বলেন, ‘আমি মনে করি, “বৈচিত্র্য”এমন এক জিনিস, যা একজন অভিনয়শিল্পীকে সামনে এগিয়ে যেতে এবং আরও উন্নতি করতে সাহায্য করে। রাতারাতি তারকা হওয়ার স্বপ্ন আমি কখনোই দেখিনি। কখনো এ রকম তাগিদও বোধ করিনি। আমি দীর্ঘ এবং সফল একটা ক্যারিয়ার চেয়েছি, যেখানে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাব। প্রতিটি চরিত্রের প্রতি আমি ন্যায়বিচার করতে চাই।’

এখন নিয়মিত হিন্দিতে কাজ করলেও এই ভাষা রপ্ত করতেও কম সংগ্রাম করতে হয়নি সবিতাকে। তাঁর ভাষ্যে, ‘আমি হিন্দিটা শিখেছি মুম্বাইয়ে আসার পর।’ সূত্র: ইন্টারনেট, অনলাইন নিউজ।