বাঙালিনিউজ, দেশডেস্ক
বগুড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশত। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কমপক্ষে ৩৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ ০৭ জুলাই ২০২৪, রোজ রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে, বগুড়া শহরের স্টেশন সড়কের সেউজগাড়ি এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
এই দুর্ঘটনায় নিহত ৫ জনের মধ্যে ৪ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, শিবগঞ্জ ভাইয়ের পুকুরের অলোক সরকার (৪০), শাজাহানপুর গোহাইলের রঞ্জিতা মহন্ত (৬০), আদমদিঘী কুন্দগ্রামের নরেশ মহন্ত (৬৫) ও তিনমাথা রেলগেটের আতশী রানী (৪০)। তাদের লাশ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। নিহত আরেকজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার লাশ বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেউজগাড়ী ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রাটি বিকেলে বের হয়। পথিমধ্যে সেউজগাড়ী আমতলা মোড় এলাকায় পৌঁছালে রথের গম্বুজটি রাস্তার উপরে থাকা হাইভোল্টজের বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে আসে। পরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এরপর পরপরই রথের গাড়িটি বিদ্যুতায়িত হলে গাড়িতে থাকা ভক্তবৃন্দসহ আশেপাশের অর্ধশতাধিক ভক্তবৃন্দ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। বিদ্যুৎপৃষ্ট মানুষদের হাসপাতালে নেওয়ার পথে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে মোট ৫ জন।
এদিকে, নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে শজিমেক হাসপাতালে। আর হাসপাতালে যারা ভর্তি আছেন তাদের অবস্থাও বেশ আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা।
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর ১০–১৫ মিনিটের মধ্যেই রথের সঙ্গে সড়কের ওপরে থাকা বিদ্যুতের তারের স্পর্শ লেগে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সেউজগাড়ি শ্রীশ্রী ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রাটি পুলিশ লাইনসসংলগ্ন শিবমন্দির অভিমুখে রওনা করেছিল।
এমন মর্মান্তিক ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে পরিদর্শনে আসেন বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান, বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভিন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাগর কুমার রায়সহ স্থানীয় প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ।
এসময় জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ধর্মীয় উৎসবের দিনে এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার পর অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে পুরো বিষয়টি। রথযাত্রাকে ঘিরে কারো কোনো গাফিলতি ছিল কিনা সেটিও তারা খতিয়ে দেখছেন।
এ ঘটনায় শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, রথযাত্রায় বিদ্যুৎপৃষ্ঠে আহতরা শজিমেক ছাড়াও সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সুচিকিৎসা দেওয়ার জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের হাসপাতালে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তিনি।
বগুড়ার সিলিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মিলাদুন্নবী মিডিয়াকে বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ৪ জনের লাশ রাখা আছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩৭ জন গুরুতর আহত ব্যক্তিকে।
এ ছাড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালেও আহত কয়েকজনকে ভর্তি করা হয়েছে। স্টেডিয়াম পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আশিক ইকবাল বলেন, একজনের লাশ আছে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে। তাঁর পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সূত্র: প্রথম আলো, বাসস, দেশটিভি।