প্রশ্ন ফাঁসকারী ও ক্রেতা দু’জনই সমান অপরাধী, তাদের ধরা হবে: প্রধানমন্ত্রী

Spread the love

বাঙালিনিউজ, দেশডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিসিএস’র প্রশ্ন পেয়ে যারা অফিসার হয়েছেন, তাদেরও প্রয়োজনে ধরা হবে৷ প্রশ্ন ফাঁসকারী এবং ক্রেতা দু’জনই সমান অপরাধী৷ কিন্তু কথাটা হলো, তাদের ধরে দেবে কে? গণমাধ্যম চেষ্টা করলে, খুঁজে দিলে সরকার ব্যবস্থা নেবে?’ তিনি বলেন, ‘অন্যায় যে করবে, তাদের আমি ধরবই৷ এতে আমার ইমেজ নষ্ট হবে কিনা, তার পরোয়া করি না৷’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আজ ১৪ জুলাই ২০২৪, রোজ রোববার বিকেলে, আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সদ্যসমাপ্ত চীন সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিসিএস পাশ করেছেন, তাদের খুঁজে বের করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নফাঁস করে নিজেদের লোককে চাকরি দেয়া সেই জিয়ার আমল থেকে শুরু হয়েছিল। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে হাওয়া ভবন থেকে যে তালিকা দেওয়া হতো, সেটা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হতো। ঢাকা কলেজে বিশেষ হলে এসব ছাত্রদের পরীক্ষা নিয়ে তাদের নিয়োগ দেওয়া হতো। আমরা এটা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছি এবং সফল হয়েছি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কোনো পরীক্ষা নয়, হাওয়া ভবন থেকে পাঠানো তালিকায় বিসিএসে চাকরি হতো। তিনি বলেন, ২৪তম বিসিএস পরীক্ষা হয়েছিল ২০০২ সালে। বিএনপির আমলে সেই সময়ে যত পরীক্ষা হতো, চাকরি হতো, সব হাওয়া ভবন থেকে তালিকা পাঠানো হতো। সেই তালিকা অনুযায়ী চাকরি হতো। ঢাকা কলেজে সেই সময় একটা বিশেষ কামরা রাখা হতো। সেখানে বসে তাদের লোক পরীক্ষা দিতো। তাদেরই চাকরি হতো।

সরকারপ্রধান বলেন, আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। অনেকে বলে আওয়ামী লীগের ইমেজ খর্ব হচ্ছে; আমি তা মনে করি না। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখবো। আর আমরা অভিযান চালাচ্ছি বলেই আপনারা জানতে পারছেন। সাংবাদিকরা খুঁজে বের করুক। আমরা ব্যবস্থা নেবো।

শেখ হাসিনা বলেন, যদি বেনিফিশিয়ারিদের খুঁজে বের করা যায়, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবো। নেবো না কেন? তাদের তো চাকরি করার কোনো অধিকারই থাকবে না। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে দেবে কে? যদি ওরা বলতে পারে, ওমুকের কাছে বিক্রি করছিলাম, প্রমাণ করতে পারলে সেটা দেখা যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বেনিফিশিয়ারি যারা, তাদেরও ধরা উচিত। তাহলে আর ভবিষ্যতে কেউ করবে না। কারণ, ঘুষ যে নেবে, আর যে দেবে; উভয়ই অপরাধী। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

সংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হয়েছি বলেই দুর্নীতিবাজ ধরা পড়ছে৷ অনিয়ম-জঞ্জালগুলো পরিষ্কার করছি আমরা৷ এ জন্য আমার ইমেজ নষ্ট হলে হোক, আমি তাদের ধরবোই৷ এই কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে, এখানে কোনো দ্বিধা নেই৷’

পিএসসির এক গাড়িচালক কিভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হলো? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড্রাইভার কীভাবে এত কোটি কোটি টাকার মালিক হলো, সেটা কীভাবে বলবো? তাদের অপকর্ম আমরা ধরছি বলেই তো এখন জানতে পারছেন। এতদিন তো আপনারা জানতে পারেননি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের বাসার সাবেক এক কর্মীর অর্থসম্পদের বিষয়টি সামনে এনেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানাল এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।তাকে বের করে দিয়েছি। আমি যখন দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স বলেছি তা করেই ছাড়বো।

সরকার কঠোর হওয়ার কারণেই দুর্নীতিবাজরা ধরা পড়ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে এভাবে অভিযান করেনি। এর আগে জঙ্গিবাদমুক্ত করেছি। দুর্নীতি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এসব জঞ্জাল সাফ করতে হবে। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি বলেই জানতে পেরেছেন।’

নানা খাতে দুর্নীতির চিত্র সামনে আসছে। ভবিষ্যতে দুর্নীতির বিষয়ে অবস্থান কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের ধরলেই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এটা বিশ্বাস করি না। আমার দায়িত্ব, অনিয়মগুলো ধরে দেশকে একটা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। দুর্নীতি নিচের দিকে বেশি হচ্ছে। দুর্নীতি এমন পর্যায়ে ছিল, কাজই করা যেত না। সেখান থেকে পরিস্থিতি তো বদলেছে। হাত যখন দিয়েছি, ছাড়ব না। আপন-পর জানি না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সই থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। সূত্র: প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ, সময় নিউজ।