বাঙালিনিউজ, বিশ্বডেস্ক
গতকাল ০৯ জুলাই ২০২৪, রোজ মঙ্গলবার, রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়াকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির রাজধানী মস্কোর একটি আদালত। একটি ‘চরমপন্থী সংগঠনের’ সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আদালত এ নির্দেশ দেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তাস নিউজ এজেন্সির বরাতে আজ ১০ জুলাই বুধবার এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
তাস নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, বর্তমানে রাশিয়ার বাইরে বসবাস করছেন ইউলিয়া নাভালনায়া। তার বিরুদ্ধে ‘একটি চরমপন্থি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। রুশ আদালত জানান, তদন্তকারীদের আবেদন আমলে নিয়ে ইউলিয়াকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ইউলিয়ার অনুপস্থিতিতেই আদালত তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে রাশিয়ায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ইউলিয়াকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। মস্কোর আদালত রায় দিয়েছে, ইউলিয়াকে হেফাজতে নিয়ে রিমান্ডে নেওয়া উচিত এবং রাশিয়াতে তাকে ওয়ান্টেড ঘোষণা করা হয়েছে।
গত এক দশকে রাশিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিরোধী নেতা ছিলেন অ্যালেক্সি নাভালনি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের কারা কলোনিতে বন্দী অবস্থায় মারা যান অ্যালেক্সি নাভালনি। বন্দীদের ওপর নিষ্ঠুরতার জন্য কারাগারটি কুখ্যাত।
সাধারণত প্রচারের আলোর বাইরে থাকতে পছন্দ করেন ইউলিয়া। কিন্তু কারাগারে স্বামীর মৃত্যুর পর বিচারের দাবিতে তিনি সরব হন। ৪৭ বছর বয়সী ইউলিয়া অ্যালেক্সির মৃত্যুর পর ভ্লাদিমির পুতিন সরকারের বিরুদ্ধে স্বামীর লড়াই চালিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে ‘ভবিষ্যতে সুন্দর এক রাশিয়া গড়ার’ যে স্বপ্ন তাঁর স্বামী দেখেছিলেন, তা পূরণে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন ইউলিয়া।
গতকাল ০৯ জুলাই মঙ্গলবার, আদালতের নির্দেশ আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নিজের সমর্থকদের বার্তা দেন ইউলিয়া। সেখানে তিনি সমর্থকদের শুধু তার বিরুদ্ধে দেওয়া আদালতের নির্দেশের দিকে মনোযোগ না দিয়ে বরং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়েও মনোযোগ দিতে বলেছেন।
ইউলিয়া লেখেন, “যখন আপনি এটা নিয়ে লিখবেন, দয়া করে মূল বিষয়টি নিয়েও লিখতে ভুলবেন না—ভ্লাদিমির পুতিন একজন খুনি এবং একজন যুদ্ধাপরাধী। তার জায়গা কারাগারে এবং সেটা হেগের কোথাও আরামদায়ক কোনো কারাকক্ষে টিভি দেখতে দেখতে নয়, বরং রাশিয়ায়—ঠিক ওই কারা কলোনিতে, দুই বাই তিন মিটারের ওই কারাকক্ষে, যেখানে তিনি অ্যালেক্সিকে হত্যা করেছেন।”
গত ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ কারাবন্দী অবস্থায় অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যুর খবর আসে। কারাগার থেকে দেওয়া সনদে তার স্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলা হয়। কিন্তু তার স্ত্রী ইউলিয়ার দাবি, পুতিনের নির্দেশে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ক্রেমলিন থেকে অ্যালেক্সিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
রুশ বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি ১৯ বছর ধরে চরমপন্থার অভিযোগে কারাভোগ করছিলেন। তার এই কারাভোগ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসাবে দেখা হয়।
গত মার্চে স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে ইউলিয়া যোগ দিতে পারেননি। তবে স্বামীর মৃত্যুর পর ইউলিয়া বেশ কয়েকজন পশ্চিমা প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন, যাদের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও রয়েছেন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন ইউলিয়াকে তাদের প্রধান করে। ইউলিয়া বলেছেন, তিনি তার এই নতুন ভূমিকাকে ব্যবহার করে পুতিনের বিরুদ্ধে তাঁর স্বামীর লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এক্সে এক পোস্টে তখন ইউলিয়া বলেছিলেন, ‘পুতিনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, ভবিষ্যতের সুন্দর রাশিয়ার জন্য লড়াই করতে, যা কিছু কার্যকর হতে পারে, তার সবই আমি করে যাব।’ সূত্র: অনলাইন নিউজ।