বাঙালিনিউজ, বিশ্বডেস্ক
কর্নাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইন বা পকসো-য় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলা বাতিলের জন্য আজ ২৮ জুন শুক্রবার কর্নাটক হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বিএস ইয়েদুরাপ্পা।
এক ১৭ বছর বয়সী নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহের মামলায় অভিযুক্ত কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পা। আজ ২৮ জুন ২০২৪ রোজ শুক্রবারই বিশেষ আদালতে ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে কর্নাটক পুলিশ।
চলতি বছর ২০২৪ সালের মার্চে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইয়েদুরাপ্পাকে তলব করেছিল সিট। কিন্তু তিনি হাজির না হওয়ায় গত ১২ জুন তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে ইয়েদুরাপ্পার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ জুন গ্রেফতারি পরোয়ানায় স্থগিতাদেশ দেয় কর্নাটক হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে ১৭ জুন সোমবার তাঁকে সিট-এর মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দেয়। বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পাকে রক্ষাকবচ দিয়ে হাই কোর্ট জানায়, পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না।
চলতি বছর ২০২৪ সালের মার্চের প্রথম দিকে ১৭ বছরের এক নাবালিকা এবং তার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ৮৫ বছরের ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা দায়ের করে বেঙ্গালুরুর সদাশিবনগর থানার পুলিশ। পরে ঘটনার তদন্তের জন্য ‘সিট’গঠন করা হয়।
পুলিশ জানায়, চলতি বছর ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ওই নাবালিকা এবং তার মা একটি প্রতারণার মামলায় সহায়তা চাইতে ইয়েদুরাপ্পার কাছে গিয়েছিলেন। সে সময়ই যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগে বলা হয়।
চলতি জুন মাসের প্রথম দিকে তদন্তের প্রয়োজনে ফের ইয়েদুরাপ্পাকে তলব করেছিল সিট। কিন্তু তিনি হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চেয়ে চিঠি পাঠান। তার পরেই ১২ জুন কর্নাটকের পুলিশমন্ত্রী পরমেশ্বর বলেন, ‘‘ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু হয়েছে। সিআইডির বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) ঘটনার তদন্ত করছে। প্রয়োজন মনে করলে অভিযুক্তকে তারা গ্রেফতারও করবে।” এর পর ১২ জুন বিকেলেই জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা।
অভিযোগে বলা হয়, একটি ধর্ষণ অভিযোগ জানাতে বি এস ইয়েদুরাপ্পার কাছে গিয়েছিল ১৭ বছর বয়সী ওই মেয়েটি। সেই অভিযোগ শোনার নামে তাকে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশকে ওই নাবালিকার মা জানিয়েছেন, দরজার আড়ালে তাঁর মেয়েকে ‘নিগ্রহ’ করেন ইয়েদুরাপ্পা। পরে মেয়ের হাতে টাকা গুঁজে দেন তিনি। কর্নাটকের বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পুলিশের চার্জশিটের ছত্রে ছত্রে লেখা রয়েছে এই ঘটনার বিবরণ। চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি এই যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি ওই নাবালিকার।
কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর বলেছেন, ‘এক নাবালিকার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সত্যিটা প্রকাশ্যে না আসা অবধি কিছু বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। একজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টার সঙ্গে জড়িয়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়টির সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। ওই নাবালিকাকে আমরা চিনিও না। পুলিশ তদন্ত করুক।’ ইয়েদুরাপ্পার অফিস থেকে অবশ্য এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে।
এদিকে, পকসো মামলায় অভিযুক্ত ইয়েদুরাপ্পা আজ ২৮ জুন শুক্রবারে কর্নাটক হাই কোর্টে যান পকসো আইন প্রত্যাহারের আর্জি নিয়ে। আবার আজই বিশেষ আদালতে ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে পুলিশ। সেই চার্জশিটের বয়ানেই প্রকাশ্যে এসেছে নির্যাতিতার মায়ের কথায় ঘটনার বিবরণ। তাতে বলা হয়েছে, ইয়েদুরাপ্পা বাঁ’হাতে ওই নাবালিকার ডান হাতটি ধরে টানতে টানতে মিটিং রুমে নিয়ে যান। যে ঘরে মেয়েটি তার মায়ের সঙ্গে গিয়ে ইয়েদুরাপ্পার সঙ্গে দেখা করেছিলেন, সেই ঘরের লাগোয়া মিটিং রুমটি। ঘরে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন ইয়েদুরাপ্পা।
নাবালিকার মায়ের অভিযোগ, ঘরের ভিতরে মেয়েটিকে ইয়েদুরাপ্পা জিজ্ঞাসা করেন, যিনি তাকে ধর্ষণ করেছেন, তাঁকে সে দেখলে চিনতে পারবে কি না। জবাবে মেয়েটি জানিয়েছিল, সে চিনতে পারবে। কিন্তু ওই জবাব সম্ভবত পছন্দ হয়নি বিজেপি নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার। তাই শোনামাত্র তিনি মেয়েটিকে ধাক্কা মারেন এবং শারীরিক নির্যাতন করেন। পরে ঘর থেকে বেরনোর সময় তার হাতে টাকা গুঁজে দেন। আরও পরে তার মাকেও টাকা দেন ইয়েদুরাপ্পা।
পুলিশের চার্জশিটে বলা হয়েছে, এই ঘটনার পরে ফেসবুকে ওই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর, গত ২০ ফেব্রুয়ারি ইয়েদুরাপ্পা নাবালিকার মাকে ডেকে পাঠিয়ে ওই ভিডিও মুছে ফেলতে বলেন। এজন্য দুই লাখ টাকাও দেন। গত মার্চ মাসে ৮৫ বছরের ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা করেন ওই মহিলা।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ইয়েদুরাপ্পা। ২০১৮ সালের মে মাসে অতি অল্প সময়ের জন্য এবং আবার ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হয়েছিলেন তিনি। খবর: আনন্দবাজার পত্রিকা, আজকাল।