বাঙালিনিউজ, বিনোদনডেস্ক
বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা। তিনি ছিলেন বলিউডের সেরা অভিনেত্রীদের একজন। অনেক জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন। পেয়েছেন বহু পুরস্কার। এখন তিনি নেটফ্লিক্স সিরিজে অভিনয় করছেন।
মনীষা কৈরালার জন্ম ১৯৭০ সালের ১৬ আগস্ট, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে। দেশটির বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরিবার, কৈরালা পরিবারের সন্তান তিনি। তার বাবার নাম প্রকাশ কৈরালা, মায়ের নাম সুষমা কৈরালা। নেপালের ২২তম প্রধানমন্ত্রী বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালার নাতনী তিনি।
কর্মজীবনে কৈরালা তিনটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, একটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দক্ষিণ ও একটি স্ক্রিন পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২০০১ সালে নেপাল সরকার তাকে নেপালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘অর্ডার অব গোর্খা দক্ষিণ বাহুয়’ পদকে ভূষিত করে।
আজও জনপ্রিয় অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা, বলিউডে তার কাজের অভিজ্ঞতা, তার জীবন, প্রেম ও সংসার নিয়ে সব সময় খোলা মনে কথা বলেন। সম্প্রতি, ফিল্মফেয়ারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জীবনের গল্প বলেছেন তিনি। একইসঙ্গে তার সময় অভিনেত্রীদের প্রতি ইন্ডাস্ট্রির পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব কেমন ছিল, সেটাও তুলে ধরেছেন বলিউডের এই নেপালি অভিনেত্রী।
১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ভাষার ‘সওদাগর’ ছিলো মনীষা অভিনীত প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র। তারপর তিনি বম্বে, আকেলে হাম আকেলে তুম, গুড্ডু, ক্রিমিনাল, 1942: এ লাভ স্টোরি, খামোশি: দ্যা মিউজিক্যাল, দিল সে, আচানক, পূজা, মুদালভান, মন, আলাভান্দান, বাবা, চমুন্ডেশ্বরী, মুম্বাই এক্সপ্রেস, প্রস্থানাম প্রভূতি ছবিতে অভিনয় করেছেন।
মনীষা কৈরালা ফিল্মফেয়ারকে জানান, সেই সময় অভিনেত্রীরা মদ্যপান করলে, তা গোপন করে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতো। অভিনেত্রী বলেন, ‘সওদাগর’ ছবিতে অভিনয়ের সময় নরম পানীয়ের সঙ্গে ভদকা মিশিয়ে আমাকে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল মদ্যপান করছি, সেটা কাউকে না জানাতে। আমি নরম পানীয় খাচ্ছি, সেটাই বলতে বলা হয়েছিল।
মনীষা জানান, বিষয়টা তিনি পরে তার মাকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার মা সব সময় সত্যি কথা বলার পরামর্শ দেন মেয়েকে। মনীষা বলেন, “যদি আমি কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়াই, তা হলে আড়াল করব কেন? কেউ আমাকে তার জন্য বিচার করতেই পারেন। কিন্তু আমি আমার নিজের শর্তে বাঁচতে চাই।”
কথা প্রসঙ্গে মনীষা জানান, “সেই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে নায়কের একাধিক প্রেমিকা থাকা নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে বলতে হতো, ‘না, না আমায় কেউ স্পর্শ করেনি!’ ফলে অনেকেই মনে করতেন যে, অভিনেত্রীদের সঙ্গে সহজেই সম্পর্কে জড়ানো যায়।”
মনীষা জানান, কোনও অভিনেত্রী যদি তার ব্যক্তিগত জীবনে বেশি মন দিতেন, তাহলে অনেকেই তাকে ‘অপেশাদার’ বলে মনে করতেন। মনীষার কথায়, “ব্যক্তিগত জীবন বা কারও সঙ্গে সম্পর্কে থাকার অর্থ এটা নয় যে, আমি কাজের প্রতি সৎ থাকব না।”অভিনেত্রীর মতে, সেই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে খুবই সঙ্কীর্ণ মনোভাবের দাপট ছিল, যার সঙ্গে তিনি নিজেকে মেলাতে পারেননি।
মণিষা জীবন, সংসার, দাম্পত্য এবং প্রেম নিয়েও খোলামেলা কথা বলেছেন। অভিনেত্রী মণিষা কৈরালা বলেছেন কীভাবে তিনি সর্বদা ‘ভুল পুরুষদের’সঙ্গে প্রেম করেছেন। তার অতীতের রোম্যান্সগুলো ব্যবচ্ছেদ করে বলেন, “আমি যাচাই করে দেখেছি, কেন আমি কেবল ভুল পুরুষদের প্রেমে পড়েছি। আমি ভেবেছি কেন আমি বারবার ভুল পুরুষের প্রেমে পড়েছি। আমার মধ্যে কিছু ভুল আছে কিনা, যা সবচেয়ে বেশি সমস্যার সৃষ্টি করছে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম যে আমি এখন পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে একা রয়েছি এবং আমি এখনও অনেক কিছু অনুভব করছি। আমার নিজের উপর কাজ করা দরকার।”
তিনি সঙ্গী পেতে চান কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মনিষা বলেন, “এই সব বলার পরেও, আমি একটি ভালো সংযোগ রাখতে পছন্দ করব, যেখানে আমি অনুভব করব যে আমরা উভয়ই দুজন-দুজনকে গ্রহণ করেছি এবং আমরা কোথায় আছি সে সম্পর্কে সৎ থাকি। এটা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের বেড়ে ওঠার জন্য কী কী শিক্ষা দরকার এবং যদি আমরা আমাদের যাত্রায় একে অপরকে সমর্থন করতে পারি, আমি এমন একজনের সঙ্গে থাকতে চাই, যার স্বপ্ন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে। কারণ আমি খুব আবেগপ্রবণ একজন মানুষ।”
মনীষা তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব ক্ষমাশীল হওয়ার কথাও বলেছেন। “আমি ভারতে একজন বহিরাগত ছিলাম, আমি নেপাল থেকে এসেছি এবং কাউকে চিনতাম না। সঠিক বা ভুল জানতাম না। আমি অনুভব করেছি যে একাকীত্ব একজন প্রেমিক বা সঙ্গী পূরণ করবে। কিন্তু তা কখনো হয়নি। একাকী না হওয়ার একটি সৃজনশীল উপায় খুঁজে পেয়েছিলাম, সম্পর্কের বিষয়ে। আমি ভাবতাম যে প্রতিবার একটি লাল পতাকা ছিল, কিন্তু আমি ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। সময় এবং বয়স ভেদে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি আমার চারপাশে অনেক অপ্রয়োজনীয় লোক সংগ্রহ করেছি।”
তার সমসাময়িক সবাই বিয়ে করে সংসারী হলেও, ৫৩ বছর বয়সী মনীষা এখনও সিঙ্গেল। জীবন, সংসার ও সন্তান নিয়ে তার দর্শন অন্যদের থেকে একটু আলাদা।
সাক্ষাৎকারে মনীষা কৈরালা জানান, দুনিয়ার চোখে ভালো বিয়ে, ভালো সংসার, সন্তান ইত্যাদি নিখুঁত, কিন্তু সংসারের ভেতরে গণ্ডগোল থাকে। বিয়ে ও সন্তান মানেই জীবন সুন্দর, এমন নয়। অধিকাংশ সময় বৈবাহিক জীবন বা সন্তানসহ সংসার দেখে সঠিক জীবনের তকমা দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা সুখকর হয় না। সংসারে ভুলভ্রান্তি মনোমালিন্য থাকার কারণে জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
তার মতে, নিজের জীবন ও অবস্থানকে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হচ্ছে, সেটা জরুরি। জীবনকে কোন দিকে চালানো হচ্ছে, তা ভাবতে হবে। সর্বোপরি জীবনে খুশি থাকতে পারাটাই মুখ্য। মনীষা কৈরালার ভাষ্য, নিজের জীবনের মালিকানা নিজের হাতে। নিজেকে যে জায়গায় দেখছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকলে জীবন এমনিতেই সুন্দর। নিজের জীবন নিয়ে গর্ব করা উচিত।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে প্রেমিক সম্রাট দাহালকে বিয়ে করেন মনীষা কৈরালা। কিন্তু সেই সংসার দুই বছরের বেশি টেকেনি। এ জন্য অবশ্য সাবেক স্বামী সম্রাটকে দায়ী করেন না তিনি। মনীষা নিজেই স্বীকার করেছেন যে তাঁর সংসার ভাঙার পেছনে তিনি নিজেই দায়ী। ২০১২ সালে ব্যবসায়ী দাহালের সঙ্গে দাম্পত্য জীবনের ইতি টানেন নেপালি বংশোদ্ভূত এই অভিনেত্রী।
অভিনেত্রী বলেন, ‘আমার কাছে মনে হতো, বিয়ে বিষয়টাই খুব স্বপ্নময়। কিন্তু খারাপ সম্পর্ক বয়ে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে তা ভেঙে ফেলাই আসলে ভালো। তাহলে আর কোনো তিক্ততা সৃষ্টি হয় না।’ যদিও একবার এক সাক্ষাৎকারে এই অভিনেত্রী বলেছিলেন, সারা দিন পর বাড়ি ফিরে যখন গোটা বাড়ি খালি দেখেন, তখন খুব একাকী লাগে তাঁর। কেউ ঘরে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে না—এই বোধও তাঁকে কষ্ট দেয়।
মনীষা জানান, ব্যবসায়ী সম্রাট দাহালকে বিয়ে করার জন্য তিনিই তাড়াহুড়ো করেছিলেন। মনীষার ভাষ্য, ‘আমি পরে বুঝতে পারি যে বিয়ে আসলে আমার জন্য নয়। আমি এ জন্য অপর পক্ষকে কোনো দোষ দিতে চাই না।’
অভিনয় ছাড়াও মনিষা কৈরালা নারীর অধিকার, নারীর প্রতি সহিংসতা দমন, মানব পাচার ও ক্যান্সার বিষয়ক সচেতনতায় কাজ করেন।
বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা বিখ্যাত পরিচালক সঞ্জয়লীলা বানসালির ‘হীরামান্ডি: দ্য ডায়মন্ড’ নেটফ্লিক্স সিরিজে অভিনয়ের জন্য আবার আলোচনায় এসেছেন। এর আগে, তিনি ২০২৩ সালে শেহজাদা এবং ২০১৮ সালে সঞ্জুতে অভিনয় করেছিলেন। সূত্র: অনলাইন নিউজ।