বাঙালিনিউজ, দেশডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ১৪ জুলাই ২০২৪, রোজ রোববার, গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশকে চার ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধার আওতায় দুই বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ সহায়তা দিতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্মত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুদান, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ- চার প্যাকেজে অর্থ দিতে সম্মত হয়েছে চীন। এই চারটি প্যাকেজের আওতায় চীন বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেবে।
আজ ১৪ জুলাই রোববার বিকাল ৪টায়, গণভবনে সম্প্রতি শেষ হওয়া চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, এছাড়াও কনসেশনাল বা ছাড়যুক্ত ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণও দেবে চীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা, ফিলিস্তিন সঙ্কট, মানবাধিকার, টেকসই উন্নয়ন, জাতিসংঘ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও চীন পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
চীন সফরে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি কোন কোন মহলের এমন সমালোচনা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ কী পেল তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। তিনি বলেন, বেইজিংয়ে অবস্থানকালে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
চীন সফর নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চীনের সঙ্গে ২১ টি সমঝোতা হয়েছে। আরও ৭টি বিষয় এর বাহিরেও আছে। নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণেও তারা সম্মত হয়েছে বলেও জানান এবং এগুলো কি কিছুই নয়? সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ও দেশের মানুষের প্রতি এতটুকু দায়িত্ববোধ থাকলে এত কাজ করার পরেও কিছু দেখে না। চোখ থাকতে কেউ যদি অন্ধ হয় আর কান থাকতে বধির হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। মুখ আছে বলে যাক। শুনতে শুনতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এগুলো এক ধরনের মানসিক দৈন্যতা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আমি জানি না যারা এ কথাগুলো বলে বেড়াচ্ছেন তারা কি জেনে বলছেন, নাকি শুধু আমাকে হেয় করতে বলছেন, সেটা একটি প্রশ্ন। ভারত সফরের পর বলা হলো- দেশ বেচে দিয়েছি, এখন বলছে চীন কিছু দেয়নি৷ এগুলো যারা বলেন, তাদের মানসিক অসুস্থতা আছে৷ তাছাড়া, এভাবে এসব নিয়ে বানোয়াট প্রশ্ন তোলার কথা না। আমি এগুলোকে খুব গুরুত্ব দেইনা। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকে এ ধরনের নেগেটিভ কথা শুনে অভ্যস্ত।’
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে দ্বিপাক্ষিক সফরে ০৮ থেকে ১০ জুলাই চীন সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক সফরে আমি গত ০৮ থেকে ১০ জুলাই চীন সফর করি। ০৮ জুলাই বেইজিং পৌঁছালে বিমানবন্দরে আমাকে লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়।
শেখ হাসিনা তার এই চীন সফর প্রসঙ্গে বলেন, সফর বাংলাদেশের কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যেকার সম্পর্ক “সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব” পর্যায়ে উন্নীত হয়। শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রই নয়, ঐতিহ্যগত দিক থেকেও এশীয় দেশ হিসেবে আমাদের মধ্যে দীর্ঘ সময়ের সংযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামী বছর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্র নীতি “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়”, এটিকে মূলনীতি হিসেবে ধরে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফলভাবে তার কূটনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলছে।
তিনি বলেন, ০৯ জুলাই সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আমি এআইআইবিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ উপযোগী খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। এরপর দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না শীর্ষক একটি ব্যবসায়িক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করি। সেখানে বাংলাদেশ ও চীনের ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।
সরকারপ্রধান বলেন, সম্মেলনে আমি চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বিশ্বের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাই। এ সময় অবকাঠামো, আইসিটি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাত, জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট ফার্মিং, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ প্রযুক্তি ও উন্নয়ন খাতে বৃহত্তর বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গবেষণা, শিক্ষা, আইসিটি, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।
এ সময় সফর সংক্ষিপ্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রচণ্ড জ্বরের কারণে পুতুল আমার সঙ্গে চীনে যেতে পারেনি৷ মাত্র ছয় ঘণ্টা আগে দেশে ফিরেছি বলে এত সমালোচনা-তোলপাড়। অফিসিয়াল কাজ শেষ হলে, সফরে গিয়ে শপিং বা ঘোরাঘুরি করি না। এবারই প্রথম না, এর আগেও অনেকবার এভাবে সফর শেষ করে চলে এসেছি বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমস্যা থাকায়, তিনি তিস্তা প্রকল্প শেষ করতে ভারতকেই পছন্দ করেন। তিনি বলেন, “তিস্তা প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর, তারা (ভারত) আমাদের যা প্রয়োজন তা দেবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন ও ভারত উভয় দেশই তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে এবং তারা আলাদাভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। তাদের সম্ভাব্যতা যাচাইযের পর, আমরা সেই প্রস্তাবের জন্য যাব, যা আমাদের জন্য উপযুক্ত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ড. আহসানুল ইসলাম টিটু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।
চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হলেও দুর্নীতি, বিএসএস-এর প্রশ্নপত্র ফাঁস, কোটা আন্দোলন থেকে শিক্ষকদের আন্দোলন, তিস্তা প্রকল্প, সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, সময় নিউজ, বাসস।