১৩ বছর পর ভারতের বিশ্বকাপ জয়
বাঙালিনিউজ, খেলারডেস্ক
অবশেষে ১৭ বছর পর, ২৯ জুন ২০২৪ রোজ শনিবার, ভারত দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে দ্বিতীয়বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট জিতলো। এর আগে ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত, মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে। তার চার বছর পর, ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতে ভারতীয় ক্রিকেট দল, সেটাও মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে। এরপর থেকেই শিরোপার খরায় ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল।
২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও শ্রীলংকার বিপক্ষে হেরে যায় ভারত। ২০১৭ সালেও ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে যায়। ২০২১ ও ২০২৩ সাল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায় ভারত।
সবশেষ গত বছর ২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতের আহমেদাবাদে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মারা।
২০১১ সালের পর আইসিসিরি চারটি ইভেন্টে ৫বার ফাইনালে উঠেও শিরোপার নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেনি ভারত। দীর্ঘ ১৩ বছর পর আজ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের খরা কাটালো ভারত। ভারতের অনেক দিনের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নপূরণ হলো। প্রতীক্ষার প্রহর কাটলো।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এতদিন দুটি করে শিরোপা জয়ের কীর্তি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের। আজ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর ফলে উইন্ডিজ ও ইংরেজদের মতো দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের মাইলফলক স্পর্শ করলো ভারত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও অস্ট্রেলিয়া।
বার্বাডোজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালে ২৯ জুন ২০২৪ রোজ শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে ২০২৪ সালের শিরোপা জিতলো ভারত। ফলে ভারত সমর্থকদের অনেক দিনের প্রত্যাশা পূর্ণ হলো।
শনিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এই নবম আসরের ফাইনাল ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান করে ভারত। দলকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর উপহার দিতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন সাবেক অধিনায় বিরাট কোহলি। ফাইনালের আগে ৭ ম্যাচে ৭৫ রান করা বিরাট, ট্রফি নিশ্চিত করার ম্যাচে করেছেন ৫৯ বলে ৭৬ রান।
টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৪ উইকেটে ১৪৭ রান করে জয়ের পথেই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ দিকে জয়ের জন্য তাদের করতে হতো ৩০ বলে মাত্র ৩০ রান। হাতে ছিল গুরুত্বপূর্ণ ৬ উইকেট। কিন্তু শেষ দিকে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণে ২২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬৯/৮ রানের বেশি করতে পারেনি প্রোটিয়ারা। ফলে ৭ রানের জয়ে শিরোপার উল্লাসে মেতে ওঠে ভারত।
তবে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে উইকেট হারাতে থাকে ভারত। সেখান থেকে ইনিংস ধরেন বিরাট আর অক্ষর। দুরন্ত খেলে ৭৬ রান করে সাজঘরে যান বিরাট। জবাবে প্রথমে ধাক্কা খেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাও। কিন্তু সেখান থেকে সাফল্যের দিকে নিয়ে আসেন সেই বুমরাহই। সঙ্গ দেন অর্শদীপও। আর শেষ ওভারে ১৬ রান বাঁচাতে নেমে দুরন্ত বোলিং হার্দিকের। শেষ পর্যন্ত ৭ রানে ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন টিম ইন্ডিয়া।
২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে কার্লস ব্র্যাথওয়েটের ক্ষেত্রে যে কথাটা বলা হয়েছিল, সে কথাটি ২৯ জুন ২০২৪ রোজ শনিবার সূর্যকুমার যাদবের ক্ষেত্রে বললে এতটুকু অত্যুক্তি হবে না। ২০তম ওভারে ডেভিড মিলারের অবিশ্বাস্য ক্যাচ নিলেন তিনি। আর যে ক্যাচটার সুবাদে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলো ভারত।
১১ বছরের খরা কাটিয়ে, এবার আইসিসি ট্রফি জিতলো টিম ইন্ডিয়া। ওই ক্যাচটা না হলে জসপ্রীত বুমরাহ, আর্শদীপ সিং, হার্দিক পান্ডিয়াদের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স সত্ত্বেও হয়তো হেরে মাঠ ছাড়তে হতো রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৬ বলে ১৬ রান দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। স্ট্রাইকে ছিলেন মিলার। প্রথম বলটা খুব একটা আহামরি করেননি হার্দিক পান্ডিয়া। বল শট মারতে যান মিলার। ঠিকমতো ব্যাট এবং বলের সংযোগ হয়নি। তাতেও বলটা ছক্কা হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু অবিশ্বাস্য ক্যাচ ধরেন সূর্য।
দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ শেষ হয়ে গেল সেখানেই। শেষ ওভারে এলো ৮ রান। ব্যর্থ হলো হেনরিখ ক্লাসেনের ২৭ বলে ৫৪ রানের দুর্দান্ত সেই ইনিংস। ৭ রানের জয়ে বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন ভারত।
শনিবার টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে অফফর্মে থাকা বিরাট কোহলির ব্যাট আজকে হেসেছে। রোহিত শর্মা, ঋষভ পান্ত ও সূর্যকুমার যাদব রান না পেলেও কোহলি দলের হাল ধরেছিলেন প্রায় শেষ পর্যন্ত। ৫৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। পাঁচে নামা অক্ষর প্যাটেলের ৪৭ আর শিভম দুবের ২৭ রানে ভর করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান করে ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দুইটি করে উইকেট নিয়েছেন কেশভ মহারাজ ও এনরিখ নরকিয়া।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইতিপূর্বে কোনো দল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়নি। ভারত সেই রেকর্ড ভাঙলো। বাংলাদেশ সময় গত ২ জুন ডালাসে শুরু হয়েছিল ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ৫৫তম ও শেষ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হলো ২৯ জুন শনিবার। ফাইনালে বার্বাডোজের ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে মুখোমুখি হয় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা, দুই দলই অপরাজিত ছিল।
ফাইনালে হেরে গেলেও, দক্ষিণ আফ্রিকা এবার প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্বকাপ ফাইনাল খেললো। ভারতের জন্য সর্বশেষ আট বিশ্বকাপে এটি তৃতীয় ফাইনাল। তবে ট্রফিটা দুদলের কাছেই যেন একদিক থেকে একই রকম কাঙ্ক্ষিত ছিল—দক্ষিণ আফ্রিকা তো কখনই জেতেনি, ভারতের সর্বশেষ বিশ্বকাপ ২০১১ সালে, সর্বশেষ বৈশ্বিক ট্রফিও ১১ বছর আগে।