৬০তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪ উপলক্ষে
বাঙালিনিউজ, বিশ্বডেস্ক
চলতি বছর ২০২৪ সালের আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দ্বিতীয় দফা প্রার্থী জো বাইডেন এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান পার্টির তৃতীয় দফা প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রামের মধ্যে প্রথম মুখোমুখী বিতর্ক গতকাল ২৭ জুন ২০২৪ রোজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে (বাংলাদেশ সময় আজ ২৮ জুন শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে) অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বিতর্ক মঞ্চে উঠলে প্রথা অনুসারে করমর্দন করেন। কিন্তু বাইডেন ও ট্রাম্প পরস্পরের সঙ্গে বিতর্কের আগে করমর্দন করেননি। চার বছরের মধ্যে এই প্রথম পরস্পরের মুখোমুখি হলেন তাঁরা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
ট্রাম্প ও বাইডেনের বিতর্কে পররাষ্ট্রনীতি, ইউক্রেন ও গাজার যুদ্ধ, অর্থনীতি, সীমান্ত ইস্যু, সামাজিক নিরাপত্তা, চাইল্ড কেয়ার, কংগ্রেস ভবনে হামলা এবং অভিবাসন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ, গর্ভপাত ও দুই নেতার বয়সসহ বিভিন্ন ইস্যু উঠে আসে। এসময় তাঁরা একে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ আনেন এবং পরস্পরকে তীব্র বাক্যবাণে ঘায়েল করার চেষ্টা করেন। প্রথম আধঘণ্টা তেমন সুবিধা করতে না পারলেও, বিতর্কের দ্বিতীয় ধাপে কিছুটা ভালো পারফরম্যান্স করেন বাইডেন। তবে অনেকেই ট্রাম্পকেই বিতর্কে এগিয়ে রাখছেন।
সিএনএন ও এবিসি নিউজ আয়োজিত এই বিতর্ক চলাকালে কথা বলার সময়ের দিক থেকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্পকে জোরালোভাবে মোকাবিলা করতে পারেননি জো বাইডেন। এই সুযোগে ট্রাম্প অনর্গল মিথ্যা বলে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল ২৭ জুন বৃহস্পতিবার রাতে, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যকার এই প্রথম বিতর্কটি আটলান্টায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪০ মিনিট ১২ সেকেন্ডের মতো কথা বলেছেন। অপরদিকে জো বাইডেন কথা বলেছেন ৩৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড। যদিও প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে দুই প্রার্থীরই সমান সুযোগ ছিল।
বিতর্কে দুই প্রার্থী একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভূমিকায় হতাশ হয়েছেন কোনো কোনো ডেমোক্র্যাট–সমর্থক। তাঁরা বলছেন, বিতর্কে ট্রাম্পের মিথ্যা কথাগুলোর ঠিকঠাক পাল্টা জবাব দিতে পারেননি বাইডেন। এমনকি নিজের লক্ষ্য কী, তিনি দেশের জন্য কী কী কাজ করেছেন, সেগুলোও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারেননি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এক আইনপ্রণেতা এটাকে বাইডেনের ‘বিপর্যয়’বলে অভিহিত করেছেন। সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই আইনপ্রণেতা বলেন, ‘ট্রাম্পকে দেখে মনে হয়েছে, তিনি যুক্তি খণ্ডনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন, যদিও তিনি ঘণ্টায় ৬০ মাইল গতিতে মিথ্যা বলে গেছেন। কিন্তু বাইডেনের কথাবার্তা ছিল অস্পষ্ট।’ আরেক আইনপ্রণেতা মনে করেন, বাইডেন ধীরে ধীরে ভালো করছিলেন, কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাইডেনের শীর্ষস্থানীয় এক দাতা প্রেসিডেন্টের কর্মক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে তাঁকে ‘অযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
ডেমোক্র্যাটদের মূল উদ্বেগ হলো, অন্যান্য সময়ের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি প্রস্তুত ট্রাম্প। অপর এক আইনপ্রণেতা সিএনএনকে বলেন, ‘আমি মনে করি, বিতর্কের প্রথম ১৫ মিনিটের তুলনায় পরে বাইডেন ভালো করছিলেন। তবে আমার আশা ছিল, জো বাইডেন আরও অনেক দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁকে (ট্রাম্প) মোকাবিলা করবেন।’
এমনকি জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও স্বীকার করেছেন, বাইডেন ধীরগতিতে শুরু করেছিলেন। তবে তাঁর দাবি, ‘বাইডেন পরে দৃঢ়ভাবেই বিতর্ক শেষ করতে পেরেছেন।’ অবশ্য তিনি এও যুক্তি দিয়েছেন যে, ভোটারদের উচিত বাইডেন ও ট্রাম্পকে ক্ষমতায় থাকাকালীন তাঁদের কাজ দিয়ে বিচার করা। সিএনএন হোস্ট অ্যান্ডারসন কুপারকে কমলা হ্যারিস বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে বিগত ৯০ মিনিট নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি না। যেহেতু আমি গত সাড়ে তিন বছর ধরে তার পারফরম্যান্স দেখছি।’
বাইডেনের প্রচারণা শিবিরের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত কয়েক দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঠান্ডা লাগায় তাঁর কণ্ঠস্বরে সমস্যা হয়েছে। বাইডেনের প্রচারণা শিবির শুরুতে তাঁর ঠান্ডা লাগার কথা প্রকাশ করেনি। বিতর্ক শুরু হওয়ার ৪৫ মিনিটের মাথায় তাঁরা সাংবাদিকদের এ কথা জানায়।
আসলে বিতর্কে কথা বলার সময় বাইডেনের কণ্ঠ খসখসে শোনাচ্ছিল। এ সময় বাইডেনের মিত্ররা তাঁর চেহারায় আত্মবিশ্বাস ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন। হোয়াইট হাউজের দুই কর্মকর্তা বলেন, বাইডেনের সর্দি ছিল। তাই কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছিল। তবে প্রেসিডেন্টের পক্ষে সাফাই দিলেও বিতর্কে বাইডেনের দুর্বল পারফরম্যান্স ডেমোক্র্যাটদের বিচলিত করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভোটাররা ৮১ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্টকে আরও ৪ বছর মেয়াদে কাজ করার জন্য বয়স্ক মনে করবেন কীনা।
বিতর্কে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ট্রাম্পের ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিয়ে তাঁকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন বাইডেন। একইসঙ্গে ট্রাম্পের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বাইডেন বলেন, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ ট্রাম্পের সাবেক মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্যই ট্রাম্পের প্রচারণাকে সমর্থন করেননি। তিনি বলেন, ‘তাঁরা তাঁকে ভালো করে জানেন। তাঁরা তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন। তাহলে তাঁরা তাঁকে সমর্থন করছেন না কেন?’
ট্রাম্পও বাইডেনকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তিনি বাইডেনের বিরুদ্ধে অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তীব্র ভাষায় মন্তব্য করেন। ট্রাম্প বাইডেনকে একজন অভিযোগকারী হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রকে অনিরাপদ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের সুনাম নষ্ট করেছেন।
ইরানে বাইডেন নীতি নিয়েও সমালোচনা করেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প। তিনি বলেন, বাইডেন নীতির কারণে হামাস ইসরায়েলের ওপর হামলা চালাতে পেরেছে। সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা নরকবাস করছি।
ট্রাম্প আরও বলেন, আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি, যা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। রিপাবলিকান এই প্রার্থী বলেন, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন এবং চীনের শি জিনপিংয়ের মতো বিদেশি স্বৈরচারীরা বাইডেনকে কোনো সম্মানও করে না, ভয়ও পায় না। ট্রাম্প বলেন, আমি যদি প্রেসিডেন্ট থাকতাম তাহলে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করত না। এর জবাবে বাইডেন বলেন, ট্রাম্প তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চান।
অন্যদিকে বাইডেন বলেন, ট্রাম্প বিস্তর অপরাধ করেছেন। তিনি রাতে এক পর্নো তারকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন, অথচ তখন ঘরে তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। জবাবে বাইডেনের ছেলের বন্দুক কেনা এবং মাদক ব্যবহারে মিথ্যা বলা নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন ট্রাম্প। এ ছাড়া বাইডেন অভিযোগ করেন, ট্রাম্প সামাজিক নিরাপত্তা ও মেডিকেয়ার সুবিধা কমাতে চান।
বিতর্কে বাইডেনের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত-সংকটে কেন ভোটাররা তার ওপর আস্থা রাখবেন। জবাবে বাইডেন বলেন, মার্কিন কংগ্রেসে একটি দ্বিদলীয় সীমান্ত বিল পাশ করার জন্য তাঁর প্রশাসন অনেক চেষ্টা করেছে।
বিশ্বজুড়ে নানা সংকটের মধ্যেই ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এই নির্বাচন উপলক্ষে ইতোমধ্যে মার্কিন রাজনীতি নিয়ে মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। অনেক মার্কিন ভোটারের আশঙ্কা— নির্বাচনের পর সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এদিকে নোবেলজয়ী ১৬ অর্থনীতিবিদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সূত্র: ইন্টারনেট, অনলাইন নিউজ।