ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪
বাঙালিনিউজ, খেলারডেস্ক
জার্মানির হামবুর্গে গতকাল ০৫ জুলাই, বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে (৬ জুলাই প্রথম প্রহরে) ফ্রান্সের কাছে টাইব্রেকারে ৫-৩ ব্যবধানে হেরে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল। ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে এই মুখোমুখি লড়াইয়ে সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল ও ফ্রান্সের লড়াইয়ে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন রোনালদো আর এমবাপ্পে। এদের দুজনের কেউই মাঠে গোল করতে না পারলেও, অবশ্য শেষ হাসি হেসেছেন এমবাপ্পের। আর টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হেরে চোখের জলে মাঠ ছেড়েছেন রোনালদো ও তার তার দল পর্তুগাল।
প্রথম ঘণ্টার সাদামাটা ফুটবলের পর, অল্প সময়ের জন্য হলেও খেলায় প্রাণ ফেরে। ভালো কয়েকটি সুযোগও পায় দুই দল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মতো অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও নির্ধারক হয়ে উঠতে পারেনি কেউ। শেষে গিয়ে পর্তুগালের জন্য কান্না হয়ে আসে টাইব্রেকারে ফেলিক্সের মিস শট। এরই সঙ্গে শেষ হয়ে গেল ইউরোয় ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর যাত্রা। এবারের আসর দিয়ে ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতাটিতে নিজের পথচলা শেষের কথা আগেই জানান ৩৯ বছর বয়সী পর্তুগিজ মহাতারকা।
বড় মঞ্চের বাড়তি উত্তেজনা, সঙ্গে নিজেদের সেরা রূপে মেলে ধরার চাপ-সবকিছুর প্রভাবই যেন পড়ে দল দুটির ওপর। শুরু থেকে তাদের খেলায় গতির ঘাটতি খুব বেশি না থাকলেও, আক্রমণগুলো ঠিক গোছানো ছিল না। ২০তম মিনিটে গিয়ে লক্ষ্যে প্রথম শটের দেখা মেলে। দূর থেকে বুলেট গতির শট নেন থিও এরনঁদেজ, তবে নাগালের মধ্যে থাকায় ঠেকাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি গোলরক্ষকের। দু্ই মিনিটের মধ্যে আরেকটি আক্রমণে ছয় গজ বক্সে সতীর্থকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেন কিলিয়ান এমবাপে, সেটাও রুখে দেন কস্তা।
প্রথমার্ধে পর্তুগিজদের পারফরম্যান্স ছিল দুর্বল। পজেশন রাখায় এগিয়ে থাকলেও, বিরতির আগে একবারের জন্যও প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের পরীক্ষা নিতে পারেনি তারা। ডি-বক্সের বাইরেই তাদের অপরিকল্পিত আক্রমণগুলো ভেস্তে যাচ্ছিল। আর ফরাসিদের তিন শটের মধ্যে এরনঁদেজের ওই একটিই শুধু ছিল লক্ষ্যে।
বিরতির পর এমবাপের পায়ে গতির ঝলক দেখা যায়। ৫০তম মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে তড়িৎ জায়গা করে নিয়ে শট নেন তিনি; কিন্তু সেটাও গোলরক্ষক বরাবর। এর কিছুক্ষণ পরই বের্নার্দো সিলভার হেডে বল মুখের একপাশে লাগে এমবাপের। নাক ভেঙে যাওয়ায় মুখে মাস্ক পরে খেলছেন তিনি। শুয়ে পড়ে মাস্ক খুলে ফেলেন, কিছুক্ষণ নাক ধরে রাখতে দেখা যায় তাকে। একটু পরই অবশ্য উঠে দাঁড়ান তিনি, কেটে যায় শঙ্কা।
পরের কয়েক মিনিটে পর্তুগালের আক্রমণে যেন প্রাণ সঞ্চার হয়। প্রতিপক্ষের ওপর ছোটখাটো একটা ঝড় বইয়ে দেয় দলটি। ৬১তম মিনিটে লক্ষ্যে প্রথম শট নিতে পারে পর্তুগাল। ব্রুনো ফের্নান্দেসের কোনাকুনি শটটি ঝাঁপিয়ে রুখে দেন মাইক মিয়াঁ। সুযোগ ছিল তারপরও, আলগা বল পেয়ে জোয়াও কানসেলোর প্রচেষ্টা হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। দুই মিনিট পর আবার ফ্রান্সের বক্সে হানা দেয় পর্তুগাল। এবার ভিতিনিয়ার শট ক্ষীপ্রতায় রুখে দেন মিয়াঁ।
এরপরই পাল্টা-আক্রমণে যায় ফ্রান্স। রান্দাল কোলো মুয়ানির কোনাকুনি শট স্লাইড করে আটকে দেন রুবেন দিয়াস। একটু পরেই এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার শট দূরের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ৭৪তম মিনিটে ফ্রান্সের হতাশা বাড়ে আরও। প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে উসমান দেম্বেলের শটে পোস্টের বাইরের দিকে লেগে বেরিয়ে যায় বল।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলেছে পরেও। যদিও কোনোটাই প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে সেভাবে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি। নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিট বাকি থাকতে বিপজ্জনক পজিশনে ফ্রি কিক পায় পর্তুগাল। কিন্তু পুরোটা সময় নিজের ছায়া হয়ে থাকা রোনালদোর শট রক্ষণ দেয়ালে বাধা পায়।
অতিরিক্ত সময়ের তৃতীয় মিনিটে ডেডলক ভাঙার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও হতাশ করেন রোনালদো। ডান দিক থেকে সতীর্থের পাস বক্সে পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় উড়িয়ে মারেন আন্তর্জাতিক ফুটবলের রেকর্ড গোলদাতা।
১০৫তম মিনিটে এমবাপেকে তুলে নেন কোচ দেশম। বদলি নামান বার্কোলাকে। তরুণ ফরোয়ার্ড আসায় তাদের আক্রমণে গতি কিছুটা বাড়ে; কিন্তু উল্লেখযোগ্য কিছু কেউ করতে পারেনি। স্কোরবোর্ড গোলশূন্য থাকায় টাইব্রেকারে নির্ধারিত হয় ম্যাচের ভাগ্য।
শুটআউটে রোনালদো গোল পেলেও দল হেরেছে। জোয়াও ফেলিক্সের নেওয়া পর্তুগালের চতুর্থ শট পোস্টে লেগে মিস হলে সেটিই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়। বিপরীতে পাঁচ গোলের সব জয়টি জালে জড়িয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফ্রান্স।
শেষ ষোলোয় অবিশ্বাস্য তিন সেভে পর্তুগালের নায়ক হয়ে ওঠা গোলরক্ষক দিয়োগো কস্তা এবার আর পারলেন না। ফলে টাইব্রেকারে ভাগ্য সহায় হয় ফ্রান্সের, কপাল পুড়েছে পর্তুগালের। ২০১৬ আসরের ফাইনালে রোনালদো-পেপেদের কাছে হেরেই শিরোপাস্বপ্ন ভেঙেছিল ফরাসিদের। আগামী ৯ জুলাই মঙ্গলবার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে স্পেনের মুখোমুখি হবে দিদিয়ে দেশমের দল ফ্রান্স। সূত্র: অনলাইন নিউজ।