টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: নেপালকে হারিয়ে সুপার এইটে বাংলাদেশ

Spread the love

বাঙালিনিউজ, খেলারডেস্ক

জিতলেই সুপার এইট—এই সমীকরণ মাথায় রেখে আর্নস ভেল গ্রাউন্ডে নেপালের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ১৯.৩ ওভারে মাত্র ১০৬ রানে অলআউট হয়। ফলে ভয় জেঁকে বসে। কারণ, গ্রোস আইলেটে অপর ম্যাচে নেদারল্যান্ডস যদি শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেয় এবং নেপাল যদি বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয়, তাহলে পড়তে হবে নেট রানরেটের হিসাবে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডস-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়নি বাংলাদেশকে। বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ নেপালকে ২১ রানে হারিয়েছে। ফলে ‘ডি’ গ্রুপের রানার্স আপ দল হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবারই প্রথম এক টুর্নামেন্টে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। এর আগে নেদারল্যান্ডস এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতেছে বাংলাদেশ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে গেছে। ফলে ৪টি ম্যাচের মধ্যে ৩টিতে বিজয়ী হয়ে মোট ৬ পয়েন্ট নিয়ে রানার্স আপ হয়ে সুপার এইটে উঠল বাংলাদেশ। অপরদিকে ৪টি ম্যাচের সবগুলো জিতে ৮ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আগেই সুপার এইটে পৌঁছে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার সুপার এইটে গ্রুপ ১-এ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তান।

ব্যাটিংয়ের জন্য একটু কঠিন উইকেটে নেপালকে ৮৫ রানে অলআউট করার জন্য বড় অবদান ছিল পেসার তানজিম হাসানের। মোস্তাফিজেরও অবদান যথেষ্ট। তবে, নিজেদের ইনিংসে প্রথম বলে বাংলাদেশ যেমন উইকেট হারিয়েছে, তেমনি নেপালের ইনিংসে প্রথম বলেই চার হজম করেছেন তানজিম। কিন্তু তৃতীয় ওভারে ফিরে তিন বলের ব্যবধানে দুটি উইকেট নিয়ে পাল্টা লড়াই শুরু করেন তানজিম।

তৃতীয় বলে তানজিমের ফুল টস বল একটু দেরিতে মুভমেন্ট করার কারণে ব্যাটে পাননি নেপালি ওপেনার কুশল ভুরতেল। ফলে বোল্ড! এক বল পরই তিনে নামা অনিল শাহকে মিড অফে নাজমুল হোসেনের ক্যাচে পরিণত করেন তানজিম। ফলে ৩ ওভার শেষে ৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় নেপাল।

পাওয়ার প্লে এর ৬ ওভার শেষে নেপালের স্কোর ৪ উইকেটে ২৪! পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে তানজিদের খাটো লেংথের বল মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রিশাদ হোসেনকে ক্যাচ দেন নেপালের অধিনায়ক রোহিত পৌড়েল। পরের ওভারে ওপেনার আসিফ শেখকে সাকিব আল হাসানের ক্যাচে পরিণত করেন মোস্তাফিজ।

 

লো স্কোরিং ম্যাচে স্বল্প পুঁজি ডিফেন্ড করার লড়াইয়ে নেমে প্রথম ৬ ওভারে দুর্দান্ত শুরু পেয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল চাপটা ধরে রাখা। তবে বোলিংয়ে বাংলাদেশ দারুণ শুরু করেছিল। আর এর পেছনে বড় ক্রেডিট তানজিমের। তাই তার ধন্যবাদ প্রাপ্য। উইকেট পাওয়ায় নেপালের ইনিংসে প্রথম ৮ ওভারের মধ্যে তানজিমের বোলিংয়ের কোটা শেষ করান বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল। তানজিমের বোলিং বিশ্লেষণ ৪-২-৭-৪! তাঁর মোট ২৪টি বৈধ ডেলিভারির মধ্যে ২১টি ‘ডট’!

জয়ের জন্য শেষ ১০ ওভারে ৬০ বলে ৬৫ রান দরকার ছিল নেপালে। তখন তাদের হাতে ছিল ৫ উইকেট। বাংলাদেশকে এখান থেকে উইকেট নিয়ে এবং রান আটকে চাপটা আরও বাড়াতে হতো। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে কুশল মাল্লা ও দীপেন্দ্র সিং জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন। সিঙ্গেলস-ডাবলস চুরি করার পাশাপাশি তাসকিন আহমেদ ও রিশাদকে সুযোগ বুঝে বাউন্ডারি মেরে রান বাড়িয়ে নেপালকে জয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন কুশল ও দীপেন্দ্র। তখন জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৪৩ রান দরকার ছিল নেপালের।

মাহমুদউল্লাহর করা ১৬তম ওভারে একটি ছক্কা ও একটি চার মেরে মোট ১২ রান নিয়ে ম্যাচটি আরও জমিয়ে তোলেন নেপালের দীপেন্দ্র ও কুশল। জয়ের জন্য নেপালের সমীকরণ নেমে আসে মাত্র ২৪ বলে ৩০ রানে। কিন্তু ১৭তম ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে কুশলকে (৪০ বলে ২৭) তুলে নিয়ে খেলা ঘুরিয়ে দেন মোস্তাফিজ। ফলে বাংলাদেশের দিকে জয়ের পাল্লা ভারী হয়ে যায়। দারুণ এক ওভার করেন এই বাঁহাতি পেসার। এর মধ্য দিয়ে ভেঙে যায় কুশল ও দীপেন্দ্রর ৫৮ বলে ৫২ রানের জুটি। ১৮ বলে ২৯ রানের একটু সমীকরণে পড়লেও, তাসকিনের করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে আবারও বাংলাদেশকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন নেপালের দীপেন্দ্র।

কিন্তু ওই ১৮তম ওভারেই পঞ্চম বলে নেপালের গুলশান ঝা-কে তুলে নেন তাসকিন। তখন জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে ২২ রান দরকার ছিল নেপালের। ১৯তম ওভার মেডেন নেওয়ার পাশাপাশি দীপেন্দ্রকে (৩১ বলে ২৫) তুলে নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের পাল্লা ভারী করেন মোস্তাফিজ। ৪ ওভারে ১ রানে ৭ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দারুণ অবদান এই পেসারের। শেষ ওভারে ২২ রানে খুব কঠিন সমীকরণে পড়ে নেপাল। এ অবস্থায় নেপালের শেষ দুটি উইকেট প্রথম দুই বলে তুলে নেন সাকিব আল হাসান। ফলে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়।

এর আগে ম্যাচের শুরুতে বাংলাদেশের ব্যাটিং মোটেও ভালো হয়নি। ইনিংসের প্রথম বলেই একটি বাজে শট খেলে আউট হন ওপেনার তানজিদ হাসান। দ্বিতীয় ওভারে নেপালের দীপেন্দ্রর বলে বোল্ড হয়ে চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রানখরা কাটাতে পারেননি অধিনায়ক নাজমুল (৪)। পরিস্থিতি আরও সঙিন হয় পঞ্চম ও ষষ্ঠ ওভারে লিটন দাস (১০) ও তাওহিদ হৃদয় (৯) আউট হওয়ার পর।

পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৩১। এরপরও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। নেপালের স্পিনার সন্দীপ লামিচানে, পেসার দীপেন্দ্র সিংরা বোলিংবান্ধব উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের যথেষ্ট ভুগিয়েছেন। ৯ম ওভারে সাকিবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে মাহমুদউল্লাহ ১৩ রান করে আউট হওয়ার পর একটি জুটির বড় প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। তবে ২২ রানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ।

কিন্তু ১৭ রান করে সাকিব ১২তম ওভারে এলবিডব্লিউ হওয়ার পর ভালো একটি স্কোর গড়ার সম্ভাবনা প্রায় হারিয়ে যায়। ৯ম উইকেটে তাসকিন-রিশাদের ১০ বলে ১৩ এবং ১০ম উইকেটে মোস্তাফিজ ও তাসকিনের ১৪ বলে ১৮ রানের জুটিতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ১৯.৩ ওভারে ১০৬। ফাইটিং স্কোর হিসেবে এই স্কোর যথেষ্ট না হলেও, বাংলাদেশের দারুণ বোলিংয়ের কারণে ১৯.২ ওভারে মাত্র ৮৫ রানেই থেমে গেছে নেপাল। ফলে ২১ রানে বিজয়ী হয়ে ২০২৪ সালের ১৬ জুন রোজ রোববার রাতে (বাংলাদেশ সময়) টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ১৯.৩ ওভারে ১০৬ (সাকিব ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৩, রিশাদ ১৩, জাকের ১২, তাসকিন ১২, লিটন ১০, হৃদয় ৯; লামিচানে ২/১৭, সোমপাল ২/১০, দীপেন্দ্র ২/২২, রোহিত ২/২০, কুশল ০/২২, অবিনাশ ০/১০)।

নেপাল: ১৯.২ ওভারে ৮৫ (কুশল ২৭, দীপেন্দ্র ২৫, আসিফ ১৭, ভুরতেল ৪, রোহিত ১, সুদীপ ১; তানজিম ৪/৭, মোস্তাফিজ ৩/৭, সাকিব ২/৯, তাসকিন ১/২৯, রিশাদ ০/১৫, মাহমুদউল্লাহ ০/১৫)।

ফলাফল: বাংলাদেশ ২১ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: তানজিম হাসান (বাংলাদেশ)। সূত্র: প্রথম আলো।