টিউলিপ সিদ্দিকের বিপুল বিজয়, মেয়ের জয়ে উচ্ছ্বসিত শেখ রেহানা

Spread the love

বাঙালিনিউজ, বিশ্বডেস্ক

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো জিতেছেন টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি এবং শেখ রেহানার মেয়ে।

উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়েন টিউলিপ। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ প্রার্থীর চেয়ে টিউলিপ প্রায় তিনগুণ ভোটে জিতেছেন। আজ ০৫ জুলাই ২০২৪, রোজ শুক্রবার, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে এই ফল প্রকাশ করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে ২৩ হাজার ৪৩২ ভোট পেয়েছেন টিউলিপ। এই জয়ের মাধ্যমে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী ডন উইলিয়ামস পেয়েছেন ৮ হাজার ৪৬২টি ভোট। কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামসকে প্রায় ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর ভোটগ্রহণের পর গভীর রাতে আসা ফলাফলে দেখা যায়, লেবার পার্টির প্রার্থী টিউলিপ ২৩ হাজার ৪৩২ ভোট (৪৮.৩ শতাংশ) ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ডন উইলিয়ামস পেয়েছেন ৮ হাজার ৪৬২ ভোট (১৭.৪ শতাংশ)। আর তৃতীয় অবস্থানে গ্রিন পার্টির লরনা রাসেল পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৩০ ভোট (১৩.৭ শতাংশ)। এছাড়া রিফর্ম ইউকে থেকে ক্যাথরিন বেকার দুই হাজার ৯৪০ ভোট পেয়েছেন।

এছাড়া রিজয়েন ইইউ থেকে ক্রিস্টি এলান-কেন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে স্কট এমেরি, জোনাথন লুই লিভিংস্টোন (স্বতন্ত্র) উল্লেখযোগ্য ভোট অর্জন করতে পারেননি।

২০১৫ সালে শক্তিশালী ৭ প্রার্থীকে হারিয়ে প্রথমবার এমপি হয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। পরের দফায় ২০১৭ সালের নির্বাচনে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন। এরপর নির্ধারিত সময়ের তিন বছর আগেই ২০১৯ সালের শেষে যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন হয়। তাতে কনজারভেটিভ পার্টির জনি লুককে ১৪ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হারান টিউলিপ।

২০১৯ সালের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করে বিবিসি দেখিয়েছে, আসনটিতে লেবার পার্টির ভোট বেড়েছে ০.৭ শতাংশ। অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টি খুইয়েছে ৫.৮ শতাংশ ভোট। আগেরবারের তুলনায় আসনটিতে সবচেয়ে বেশি ভোট বেড়েছে গ্রিন দলের, ১০ শতাংশ।

নির্বাচনে বিজয়ের প্রতিক্রিয়ায় টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, “সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনাদের দোয়ায় আমি চতুর্থবার নির্বাচিত হলাম। আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটি আমাকে সবসময় সাপোর্ট করে। আমি খুব গ্রেটফুল, এইবারও ওনারা আমাকে সাপোর্ট করেছেন।”

টিউলিপ বলেন, “আমি চাই যে- আমাদের আরও তিনটা বোন যে আছে-রূপা, রুশনারা, আফসানা-সবাই যেন জয়ী হয়, আমরা সবাই যেন লেবার গভমেন্টে সার্ভ করতে পারি।”

এবারের নির্বাচনে লেবার পার্টির বিপুল বিজয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন কিয়ার স্টারমার। নিজের আসন হলবর্ন অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাসে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যখন সমর্থকদের সামনে হাজির হন, টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিরোধী দল লেবার পার্টির এমপি হিসাবে ছায়া সরকারে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করা টিউলিপ এবার লেবার সরকারের মন্ত্রী হতে পারেন বলেও জোর আলোচনা আছে।

একদিকে পারিবারিক পরিচয়, অন্যদিকে লন্ডনের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে প্রার্থিতার কারণে টিউলিপ সব সময়ই ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। ৪১ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিককে পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।

মেয়ের বিপুল জয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, সবার কাছে দোয়া চাই, টিউলিপ যেন তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে পারে। শুধু নির্বাচনী এলাকায় না, যেখানে অসহায় মানুষ আছে-তাদের পাশে থাকবে। সবার সেবার জন্য তার জীবনকে নিয়োজিত করবে। সবার কাছে তার জন্য চোয়া চাই, সে যেন, সব সময় সৎভাবে থাকতে পারে।

সময় সংবাদকে শেখ রেহানা বলেন, আমার মেয়ে আবার এমপি নির্বাচিত হলো। মানুষের সেবায় সে নিষ্ঠার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করবে। শুধু নির্বাচনের সময় নয়, সারা বছরই সে এলাকায় কাজ করে। সবার কাছে দোয়া চাই, সে যেন তার কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করতে পারে। শুধু নির্বাচিত এলাকায় নয়, যেখানেই প্রয়োজন এবং সব অসহায় মানুষের পাশে সে (টিউলিপ) থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ রেহানা।

শেখ রেহানা আরও বলেন, আমি আসলে স্বপ্ন দেখিনি, সে রাজনীতিতে আসুক। এটা তার নিজের ইচ্ছায়। আমি চাচ্ছিলাম সে টিচার হোক, জজ-ব্যারিস্টার হোক বা অন্যকিছু হোক। রাজনীতিতে সে চলে গেছে। এখানে আমার অবদান নেই। এখানে সম্পূর্ণ তার নিজের ইচ্ছায়। মা হিসেবে সন্তানকে যেভাবে দেখার। আমি সেভাবেই দেখি।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী লড়াই করেছেন। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অন্তত ৩৪ ব্রিটিশ নাগরিক। এর মধ্যে লেবার পার্টির হয়ে আটজন ও কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে লড়েছেন দুজন বাংলাদেশি।

এছাড়া লেবার পার্টি থেকে গত মেয়াদের চার এমপি রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, ড. রূপা হক ও আফসানা বেগম এবারও লড়েছেন। একই দল থেকে এবার ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন আরও চারজন। তারা হলেন- রুমী চৌধুরী, রুফিয়া আশরাফ, নুরুল হক আলী ও নাজমুল হোসাইন। কনজারভেটিভ দলের মনোনয়ন নিয়ে ভোটে অংশ নেন আতিক রহমান ও সৈয়দ সাইদুজ্জামান।

এছাড়া, ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন থেকে ছয়জন এবং রিফর্ম পার্টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি ও সোশ্যালিস্ট পার্টি থেকে আছেন একজন করে লড়েছেন। গ্রিন পার্টি থেকে তিনজন, আর স্বতন্ত্র হিসেবে ১১ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী লড়েছেন এবার ভোটের মাঠে। সূত্র: অনলাইন নিউজ।