টাইব্রেকারে মেসির মিস, মার্টিনেজ বীরত্বে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা
বাঙালিনিউজ, খেলারডেস্ক
গ্রুপ পর্বের লড়াইয়ের পর এবার আটটি দল জায়গা করে নিয়েছে কোপা আমেরিকা ২০২৪-এর (Copa America 2024) কোয়ার্টার ফাইনালে। আজ ০৫ জুলাই ২০২৪, রোজ শুক্রবার সকালে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায়) আর্জেন্টিনা ও ইকুয়েডর কোয়ার্টার ফাইনালে গ্রুপ এ থেকে লড়াইয়ে নামে।
তবে ম্যাচের প্রথম সেরা সুযোগ পায় ইকুয়েডর। অষ্টম মিনিটে মোয়াসেস কাইসেডো বল নিয়ে আর্জেন্টাইন বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন। তার শট সোজাসুজি মার্টিনেজের হাতে ধরা পড়ে। ১৫তম মিনিটে আরেকবার আক্রমণে যায় ইকুয়েডর। সারমিয়েন্তোর শট মার্টিনেজ ফিরিয়ে দিলেও বল পড়ে পায়েজের সামনে। তার শট লক্ষ্যে থাকেনি।
ইকুয়েডরের গোল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা কিপার। অন্যদিকে আর্জেন্টাইন আক্রমণ গোলকিপারের কাছে পৌঁছানোর আগেই প্রতিহত করতে থাকে ইকুয়েডরিয়ান রক্ষণভাগ। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি।
৩৫ মিনিটে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা গোল পায়। মেসির কর্নার থেকে ম্যাক অ্যালিস্টার বল ফ্লিক করে দূরের পোস্টে পাঠান। লিসান্দ্রো মার্টিনেজ হেড করে জাল কাঁপান। ইকুয়েডর কিপার ডোমিঙ্গেজ বল পাঞ্চ করলেও ততক্ষণে গোললাইন পেরিয়ে যায়। আর্জেন্টিনার জার্সিতে লিসান্দ্রোর এটি ছিল প্রথম গোল। ফলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় কোপা আমেরিকার বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা আর্জেন্টিনা।
৪১ মিনিটে এঞ্জো ফের্নান্দেজ আর্জেন্টিনাকে আরো এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। দূরের পোস্টে নেওয়া তার কোনাকুনি শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বিরতি থেকে ফিরে ৫৬ মিনিটে ইকুয়েডরের বক্সের মধ্যে লাউতারো বুক দিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শট নেন। কিন্তু তার দুর্বল শট কাজে লাগেনি।
পরের মিনিটে ইকুয়েডর পরপর দুটি কর্নার পেরেও কাজে লাগাতে পারেনি। ৫৯ মিনিটে কাইসেডো বক্সের মধ্যে সারমিয়েন্তোকে খুঁজে পেয়ে বল তুলে দেন তার কাছে। কিন্তু লিসান্দ্রো সময়মতো হেড করে বল বিপদমুক্ত করেন। পরের মিনিটে রদ্রিগো ডি পলের ভুলে পেনাল্টি পায় ইকুয়েডর। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল বক্সের মধ্যে তার হাতে লাগে। ভিএআর চেক করেও একই সিদ্ধান্ত জানান রেফারি।
সহজ সুযোগ পেয়ে ইকুয়েডর সমতা ফেরাতে পারেনি। ৬২ মিনিটে এনার ভ্যালেন্সিয়ার পেনাল্টি শট মার্টিনেজকে ভুল দিকে পাঠিয়েছিল। কিন্তু বল বাঁ পাশের পোস্টে আঘাত করে তাকে হতাশায় ভাসায়। যদিও কিছুক্ষণের জন্য ইকুয়েডর আশার আলো দেখে, রেফারি ভিএআর চেক করে দেখতে চেয়েছিলেন ভ্যালেন্সিয়া শট নেওয়ার সময় মার্টিনেজের দুটো পা লাইনে ছিল কি না।
বড় বাঁচা বেঁচে গেলেও আর্জেন্টিনা মাত্র এক গোলের লিড নিয়ে বাকি সময় অস্বস্তিতে ছিল। শেষ দিকে ইকুয়েডর চাপ দিয়ে খেলতে থাকে। তাতে ছন্দ হারিয়ে এই টুর্নামেন্টে প্রথম গোল হজম করে আর্জেন্টিনা। ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে ইয়েবোয়াহর চমৎকার ক্রসে কেভিন রদ্রিগেজের হেডে জালে জড়ায় বল। গোল নিয়ে সংশয় থাকায় রেফারি বেশ সময় নিয়ে ভিএআর চেক করেন। তবে গোল বহাল থাকে। ফলে ১-১ গোলে সমতায় পৌঁছে ইকুয়েডর।
একেবারে শেষ মুহূর্তে ইকুয়েডরের আরেকটি প্রচেষ্টা ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। বাঁ দিক থেকে রদ্রিগেজের ক্রসে কাইসেডো হেড করলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ে স্কোর ১-১ এ শেষ হয়। কোপা আমেরিকায় শুধু ফাইনাল বাদে অন্য নকআউট ম্যাচে অতিরিক্ত সময় না থাকায় দুই দলের খেলা সরাসরি টাইব্রেকারে গড়ায়।
আর্জেন্টিনার হয়ে টাইব্রেকারে প্রথম শটই মিস করেন লিওনেল মেসি। বল ক্রসবারে মারেন। আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ অবশ্য ইকুয়েডরের প্রথম শটটিও ঠেকিয়ে দেন।
এরপর দ্বিতীয় শটটিও ঠেকিয়ে টাইব্রেকারে আবারও ‘অতিমানব’হয়ে ওঠেন মার্তিনেজ। ইকুয়েডরের হয়ে প্রথম দুটি শট নেওয়া অ্যাঞ্জেল মেনা এবং অ্যালান মিন্দার শট ঠেকান মার্তিনেজ। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের জয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা।
ইকুয়েডরের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিতে হলো আর্জেন্টিনাকে। কোপা আমেরিকার চলতি আসরে প্রথম গোল হজম করতে হলো আর্জেন্টিনাকে। শেষ পর্যন্ত ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা টানা পঞ্চমবার সেমিফাইনালে উঠে গেলো।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে পেরুর বিপক্ষে ইনজুরির কারণে ছিলেন না মেসি। শঙ্কা উড়িয়ে ইকুয়েডরের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের আজ প্রথম একাদশে জায়গা পেলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। প্রথমার্ধে গোলমুখের সামনে তাকে ও লাউতারো মার্তিনেজকে খুব একটা চোখে পড়েনি। ৪-৪-২ ফরমেশনে রণকৌশল সাজান লিওনেল স্কালোনি। গ্রুপ পর্বে সবচেয়ে বেশি ৬৬ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল আর্জেন্টিনা। সূত্র: অনলাইন নিউজ।