চাঁদের দক্ষিণ মেরুর সম্পদ খুঁজতে যাচ্ছে চিন

Spread the love

বাঙালিনিউজ বিজ্ঞানডেস্ক

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে লুকিয়ে আছে বিশেষ মূল্যবান সম্পদ! সেই সম্পদ খুঁজতে চিনের অত্যাধুনিক চন্দ্রযান চন্দ্রাভিযানে যাচ্ছে।
চিনের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তাঁরা মহাকাশযান পাঠাবেন। সেই চন্দ্রাভিযানের নাম ‘চাংই-৭’। সম্প্রতি সেই অভিযানের উদ্দেশ্য এবং অভিযানে কী কী অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহৃত হতে পারে, তা প্রকাশ করেছে চিন।

চিনের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ‘চাংই-৭’ অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো বরফে ঢাকা চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি অন্ধকারে ডুবে থাকা এলাকাগুলো ঘুরে দেখা। চিন জানিয়েছে, তাদের সেই আসন্ন অভিযানে যে সব তথ্য উঠে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে তা ভবিষ্যতে চাঁদে বাসস্থান তৈরি করতে এবং গভীর মহাকাশ অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

চিনের এই ‘চাংই-৭’ অভিযান শুরু হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। মহাকাশে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতেই এই অভিযানে যেতে চাইছে চিন। ওই অভিযান মহাকাশ বিজ্ঞানে নিজেদের আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে চিনের বৃহত্তর কৌশলের অংশ বলেও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।

বিজ্ঞান পত্রিকা ‘ন্যাশনাল সায়েন্স রিভিউ’তে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে চিনের ‘চাংই-৭’ অভিযানের উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অভিযানের উদ্দেশ্য চাঁদের মাটিতে বিভিন্ন উপাদান বিশ্লেষণ করা, চাঁদের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ গঠন ও চাঁদের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রগুলো তদন্ত করা।

একই সঙ্গে চাঁদের দক্ষিণ মেরু, পৃথিবীর ম্যাগনেটোটেল এবং প্লাজমা স্তরের ওপর গবেষণা চালানোও এই অভিযানের উদ্দেশ্য।চিনের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মোট ১৮টি পেলোড নিয়ে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেবে ‘চাংই-৭’। সেই পেলোডগুলোর মধ্যে থাকবে অত্যাধুনিক সব যন্ত্র। মহাকাশযানে একটি অরবিটার, একটি ল্যান্ডার, একটি রোভার এবং একটি ছোট উড়ন্ত যান (মিনি-ফ্লাইং প্রোব)-ও থাকবে।

ল্যান্ডারটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে একটি গর্তে অবতরণ করবে। সেখানে এটি ক্যামেরা, রাডার, খনিজ ও জল বিশ্লেষক, স্পেকট্রোমিটার, ম্যাগনেটোমিটার-সহ একাধিক সরঞ্জাম নিয়ে গবেষণা চালাবে রোভার। তবে, ‘চাংই-৭’ অভিযানের আগে ‘চাংই-৬’ অভিযানে যাচ্ছে চিন।

চীন চলতি ২০২৪ সালেই ‘চাংই-৬’ ৬ চন্দ্রযান প্রেরণের পরিকল্পনা করেছে। চীনের ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বলেছে, ২০২৪ সালের দিকে চাঁদের দূরবর্তি দক্ষিণ মেরুর আইটকেন বেসিনে নমুনা সংগ্রহের জন্য চ্যাংই- ৬ চন্দ্রযান প্রেরণের পরিকল্পনা রয়েছে চীনের।

চলতি বছর ২০২৪ সালের প্রথমার্ধেই চিনের এই মহাকাশযান চাঁদের মাটি ছোঁবে বলে আশা করা হচ্ছে। চাঁদের বুক থেকে নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই মহাকাশযানকে।

সংস্থাটি জানায়, ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে চীন তার ছুয়েছিয়াও ২ কমিউনিকেশন রিলে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে। এর মাধ্যমে চাঁদ ও পৃথিবীর সঙ্গে মহাশূন্যযানটির সংযোগ সহজ হবে। চ্যাংই-৬ চন্দ্র অভিযানে ফ্রান্স, ইতালি, পাকিস্তান এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা থেকে পেলোড এবং স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম বহন করা হবে।

উল্লেখ্য, গত বছর ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রথম চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে ভারত। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর চন্দ্রযান-৩ এই সফল অভিযান চালায়। এই সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের মাটিতে মহাকাশযান নামানো দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে ভারতের নাম। এর আগে কেবল আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের এই কৃতিত্ব ছিল।

শুধু তাই নয়, আরো একটি ইতিহাস ছুঁয়েছে ইসরো। চাঁদের দক্ষিণ মেরু এতদিন পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত ছিল। ভারতই প্রথম দেশ হিসাবে চাঁদের এই প্রান্তে পা রেখেছে। চাঁদের ‘কুমেরু’ আবিষ্কারের কৃতিত্ব তাই ভারতের।

দক্ষিণ মেরুতে ভারতের সাফল্যের পর চাঁদের সেই গোলার্ধ নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে ভারতের পড়শি দেশ চিন।২০২০ সালে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং জার্মান এরোস্পেস সেন্টারের যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত সোফিয়া (স্ট্র্যাটোস্ফেরিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারড অ্যাস্ট্রোনমি) টেলিস্কোপ চাঁদের দক্ষিণ মেরু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করে। জানা যায়, এই অংশে জল এবং অন্যান্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সূর্যের আলো পড়ে না। এই অংশটি চিরআঁধারে নিমজ্জিত। বিজ্ঞানীদের মতে, এই অংশে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য উপযোগী সম্পদ পাওয়া যেতে পারে।তবে চাঁদের সেই অংশ যতটা সম্ভাবনাময়, ততটাই ‘বিশ্বাসঘাতক’। দক্ষিণ মেরুর পদে পদে রয়েছে বিপদ এবং প্রতিকূলতার হাতছানি। অংশটি সম্পূর্ণ রূপে বরফ ঢাকা। সেখানে বিশাল বিশাল কিছু খাদ রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খাদের বিস্তার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। আলো কম থাকায় উন্নত প্রযুক্তি সম্বলিত মহাকাশযানও এই অংশে এসে কাবু হয়।