বাঙালিনিউজ, দেশডেস্ক
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকরা এখন ভেতরে কাউকে যেতে দিচ্ছেন না।’
আজ ২২ জুন ২০২৪ রোজ শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি হাসপাতালে যান। সেখানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর এভারকেয়ার হাসাপাতালে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকরা এখন ভেতরে কাউকে যেতে দিচ্ছেন না। আমি তার চিকিৎসা নিয়োজিত ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝলাম, তার অবস্থা বেশ ক্রিটিক্যাল। এসময় খালেদা জিয়ার সুস্থতায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চান বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান মিডিয়াকে জানান, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হাসপাতালে যান। তিনি খালেদা জিয়াকে দেখে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার ও সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের কাছ থেকে বিস্তারিত খোঁজ নেন।
এর আগে সকাল সাড়ে নয়টায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও এভারকেয়ার হাসপাতালে যান এবং খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডাম সিসিইউতে ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। চিকিৎসা চলছে। এ মুহূর্তে এর বাইরে কিছু বলার নেই।” বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে এবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খালেদা জিয়া। হৃদস্পন্দন কমে গেছে। রক্তচাপেও সমস্যা আছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচবি রুহুল কবির রিজভী দলীয় চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এভারকয়োর হাসপাতালে যান। বাদ যোহর তিনিসহ নেতা-কর্মীরা খালদো জিয়ার রোগ মুক্তি কামনা করে মিলাদ ও দোয়ায় অংশ নেন।
গুলশানের ভাড়াবাসা ‘ফিরোজা’য় গতকাল ২১ জুন শুক্রবার রাতে হঠাৎ খালেদা জিয়ার শ্বাস কষ্ট বেড়ে গেলে, রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এর আগেও চলতি বছর, গত মে মাসে খালেদা জিয়াকে এই হাসপাতালের সিসিইউতে রেখে দুই দিন চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, হৃদ্রোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।
গত বছর ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন পাঁচ মাসের বেশি সময় চিকিৎসা নেন তিনি। এরপর চলতি বছর ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি বাসায় ফেরেন। এরপর লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত বছর ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তাঁর স্বাস্থ্য কিছুটা স্থিতিশীল হলে সে দফায় পাঁচ মাসের বেশি সময় পর তাঁকে বাসায় নেওয়া হয়েছিল।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন তিনি। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে তাঁর সেই সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে তাঁকে মুক্তি দিয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। খবর: প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন।