বাঙালিনিউজ, খেলারডেস্ক
ব্রাজিল ৪:১ প্যারাগুয়ে
অবশেষে দুর্দান্ত খেলে প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে সহজেই ম্যাচ জিতলো ব্রাজিল। হতাশ ভক্ত-সমর্থকরাও যেন প্রাণ ফিরে পেলেন। আনন্দে মেতে উঠলো গ্যালারিসহ বিশ্বব্যাপী ব্রাজিল ফুটবলের ভক্তকূল। ব্রাজিলের এই জয়ের মূল নায়ক ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। সিনেমার নায়কের মতোই ব্রাজিলকে হতাশামুক্ত করলেন তিনি।
কোপা আমেরিকার প্রথম ম্যাচের পর নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ভিনিসিয়ুস। ব্রাজিলের জার্সিতে তাঁর সামগ্রিক পারফরম্যান্সও ছিল খুব হতাশাজনক। ৩১ ম্যাচ খেলে মাত্র ৩ গোল করেছিলেন। তাই অনেকেই বলেছিলেন, এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকা শুধুই ক্লাবের খেলোয়াড়!
কিন্তু আজ তিনি সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করলেন। জ্বলে উঠলেন দুর্দান্ত প্রতাপে। জোড়া গোল করলেন। পাশাপাশি বল পায়ে নিয়েও তিনি প্রচণ্ড দাপটের সঙ্গে খেললেন। মূলত তাঁর কারণেই ব্রাজিলের ফুটবল ফিরলো স্বমহিমায়। ভিনিসিয়ুসের জোড়া গোলের সঙ্গে সাভিও এবং লুকাস পাকেতার একটি করে গোলে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিল জিতেছে ৪-১ গোলে। অবশ্য পাকেতার প্যানাল্টি মিস না করলে ফলাফলটা হতে পারতো ৫-১।
আজকে দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের কারণে গ্রুপ ‘ডি’তে ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দুই নম্বরে এলো ব্রাজিল। অন্যদিকে আজ অন্য এক ম্যাচে কোস্টারিকাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে কলম্বিয়া। আগামী বুধবার গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া।
নেভাদায় আজ ২৯ জুন শনিবার ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে ব্রাজিল। বাঁ প্রান্ত দিয়ে পরপর দুবার আক্রমণে যান ভিনিসিয়ুস জুনিয়র; যদিও শেষ পর্যন্ত গোল আসেনি। সমালোচনার জবাব দিতেই হয়তো আজ শুরু থেকে গতিময় ও প্রত্যয়ী ছিলেন ভিনি।
প্যারাগুয়ে চেষ্টা করছিল ভিনিসহ ব্রাজিলের আক্রমণের গতি নষ্ট করার। ১৫ মিনিটে অবশ্য খেলার ধারার বিপরীতে গোলটা প্রায় পেয়েই গিয়েছিল প্যারাগুয়ে। বক্সের বাইরে থেকে দামিয়ান বোবাদিয়ার শট ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মিলিতাওয়ের গায়ে লেগে জালে জড়াতে গেলে দুর্দান্ত দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন আলিসন। প্যারাগুয়ে এ সময় চেষ্টা করছিল বল নিজেদের পায়ে রেখে ব্রাজিলকে সহজাত খেলাটা খেলতে না দেওয়ার।
এর মধ্যে আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে ম্যাচের ৩০ মিনিটে ব্রাজিলকে পেনাল্টির সুযোগ করে দেয় প্যারাগুয়ে। সেই সুযোগ অবশ্য কাজে লাগাতে পারেনি ব্রাজিল। পেনাল্টি মিস করেন লুকাস পাকেতা। কিন্তু ৩৫ মিনিটে দুর্দান্ত এক আক্রমণে গোল করেন ব্রাজিলের ভিনিসিয়ুস।
ম্যাচের শুরু থেকে গতিময় ও দুর্দান্ত খেলতে থাকা ভিনিসিয়ুস দারুণ ফিনিশিংয়ে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন ব্রাজিলকে। ভিনিসিয়ুসের এই গোলে অবশ্য অবদান রাখেন পেনাল্টি মিস করা পাকেতা। প্রথম গোল খেয়ে জেগে ওঠার চেষ্টা করে প্যারাগুয়ে। পরপর দুবার আক্রমণেও যায় তারা। কিন্তু সমতায় ফিরতে পারেনি।
ম্যাচের ৪৩ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে ব্রাজিল। দারুণ এক আক্রমণ থেকে শুরুতে রদ্রিগোর শট প্রতিহত হলেও, ফিরতি শটে বল প্যারাগুয়ের জালে জড়ান সাভিও। ফলে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল।
তবে এই গোলের পর দুই দলের খেলোয়াড়েরা সংঘাতেও জড়ান। কিন্তু গোল ও সংঘাতের রেশ কাটার আগেই যোগ করা সময়ে নিজের দ্বিতীয় ও দলের তৃতীয় গোল করেন ভিনিসিয়ুস। ব্রাজিলের বিদ্যুৎ–গতির আক্রমণে রদ্রিগোকে ঠেকিয়ে দেয় প্যারাগুয়ে ডিফেন্স, কিন্তু ছুটে এসে নেওয়া দারুণ এক শটে গোল করেন ভিনিসিয়ুস। ফলে ব্রাজিল ৩-০ গোলে এগিয়ে যায়।
বিরতির পর, ম্যাচের ৪৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে প্যারাগুয়ের ওমর আলদারেত দুর্দান্ত এক গোল করেন। ফলে ব্রাজিলের সঙ্গে প্যারাগুয়ের গোলের ব্যবধান দাঁড়ায় ৩-১। এক গোল শোধ করার পর ব্রাজিলের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করে প্যারাগুয়ে। এর মধ্যে আলিসন বাধা না হলে, ব্যবধান ৩-২ করতে পারত প্যারাগুয়ে। তবে প্যারাগুয়ে দ্বিতীয় গোল না পেলেও ব্রাজিল কিন্তু চতুর্থ গোল করে ম্যাচের ৬৩ মিনিটে, বক্সের ভেতর প্যারাগুয়ের খেলোয়াড়ের হ্যান্ডবলের কারণে আবার পেনাল্টি পায় ব্রাজিল।
প্রথমবারের মতো এবারও শট নিতে আসেন পাকেতা। তবে এবার আর তিনি গোল মিস করেননি। ব্রাজিলকে এনে দেন ম্যাচের চতুর্থ গোল। ফলে ৪-১ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। চার গোল খেয়ে ম্যাচে ফেরার আর কোনো সুযোগ ছিল না প্যারাগুয়ের। উল্টো ৮১ মিনিটে প্যারাগুয়ের মিডফিল্ডার কুবাস লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় প্যারাগুয়ের জন্য। তবে ব্রাজিল আর কোনো গোল করতে পারেনি। ফলে গ্রুপ ‘ডি’তে ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দুই নম্বরে এলো ব্রাজিল। সূত্র: ইন্টারনেট, অনলাইন নিউজ।