কোনো মতেই আমি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না: প্রধানমন্ত্রী

Spread the love

‘যারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে’

বাঙালিনিউজ, দেশডেস্ক

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আবারো কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের কী বদনাম হবে না হবে, সেটা আমি পাত্তা দিই না। কিন্তু আমি এই সাজাকে আরো শুদ্ধ করে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ যাতে সৃষ্টি হয়, সেই ব্যবস্থাই নিতে চাই। কোনো মতেই আমি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ১৫ জুলাই ২০২৪, রোজ সোমবার সকালে, তাঁর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ‘বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর’এবং ‘বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি’ ও ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আবারো কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা চাই যেখানেই কোনো অনিয়ম দেখা দেবে, তার বিরুদ্ধে আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ’জিরো টলারেন্স’নীতি ঘোষণা করেছি। আর এই দুর্নীতি ধরতে গেলে আমাদের সরকারের ওপর দায়টা চাপিয়ে দেওয়া হয়। আমি এটা বিশ্বাস করি না। দুর্নীতি খুব কম লোকই করে কিন্তু তার বদনাম হয় খুব বেশি।

প্রধানমন্ত্রী এই সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সব উদ্যেগ গ্রহণ করলে দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং অর্থনীতিতে অবদান রাখবে এবং মানুষের উপকার হবে সে ধরনের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং অসমাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নেরও আহবান জানান। পাশাপাশি অপচয় রোধ, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং কৃচ্ছতা সাধনেরও আহবান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাস ও বিবেক, বিবেচনা নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সকলকে নজরদারি রাখার পাশাপাশি চক্রান্ত করে কেউ যেন খাদ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্যও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেন।

২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে সরকারি কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি কর্ম সম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতায় বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি প্রবর্তন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন সেই সংবিধানের ২১ এর ২ অনুচ্ছেদের আলোকে আমরা সেবামূখি জনপ্রসাশন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই কর্ম সম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি আওয়ামী লীগ সরকারই গ্রহণ করে। কারণ, প্রশাসনের ওপর থেকে নিন্মস্তর পর্যন্ত যদি একটা জবাবদিহিতা না থাকে, কীভাবে কার্য সম্পাদন বাস্তবায়ন হবে সে সম্পর্কে যদি ব্যবস্থা না নেই তাহলে সমস্ত কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না। তাই দ্বিতীয়বার সরকারের আসার পর এই পদ্ধতি নেই এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চালু করি। আর এরই ধারাবাহিকতায় আজকে ১১তম বারের মতো ২০২৪-২৫ সালের বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।

তিনি বলেন, আজ আপনারা যারা স্বাক্ষর করলেন সে সকল সচিব আবার নিজের মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগ আছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেগুলোর সাথেও আপনাদের ও এই চুক্তি সম্পাদন করে প্রত্যেকের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি-না নিশ্চয়ই সে ব্যাপারেও আপনাদের নজর রাখতে হবে। আর সেটা আপনারা করবেন বলে আমি আশাকরি।

তিনি বলেন, ‘স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ে একেবারে নিচের দিক পর্যন্ত আপনাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ, আমাদের ওপর দিকটা ভালো আছে কিন্তু নিচের দিকে কিছু কিছু সমস্যা হয়। কাজেই সেগুলো যাতে না হয় সবার মাঝে সেই চেতনা গড়ে তুলতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবগণ সম্পাদনকৃত এপিএ একে একে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এপিএ বাস্তবায়নে সাফল্য প্রদর্শনের স্বীকৃতি স্বরুপ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে পুরস্কৃত করেন। সার্বিক মূল্যায়নে বিদ্যুৎ বিভাগ শীর্ষ স্থান লাভ করে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রবর্তিত শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০২৩-২৪ লাভ করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি তথ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন। এপিএ কর্মসম্পাদন ব্যবস্থানায় শীর্ষস্থান অর্জনকারি বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান এবং শুদ্ধাচার পুরস্কার লাভকারি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেন নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্যমতে, বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) মূলত বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা দলিল। সংশ্লিষ্ট অর্থবছর সমাপ্ত হওয়ার পর ওই বছরের চুক্তিতে নির্ধারিত লক্ষ্য মাত্রাসমূহের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রকৃত অর্জন মূল্যায়ন করা হয়। কর্ম সম্পাদন ব্যবস্থার এই পদ্ধতিটি পরবর্তীতে দপ্তর, সংস্থা, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২৬ হাজার অফিস এপিএ বাস্তবায়ন করছে। খবর: বাসস।