কোটা ইস্যুতে আদালতের সমাধান ছাড়া সরকারের কিছু করার নেই: প্রধানমন্ত্রী

Spread the love

বাঙালিনিউজ, দেশডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে আদালত থেকে সমাধান না আসা পর্যন্ত তাদের কিছু করার নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ১৪ জুলাই ২০২৪ রোজ রোববার বিকেলে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে গত ০৮ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত তার চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কোটা নিয়ে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ী দাঁড়ানোর কোনো অধিকার সরকারের নেই উল্লেখ করে প্রথানমন্ত্রী বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসবে ততক্ষণ আমাদের কিছু করার থাকে না। আদালতের রায়ের বিষয়, সেটার সমাধান সেখানেই হবে। এ বাস্তবতা তাদের (কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী) মানতে হবে। না মানলে কিছুই করার নেই।

:সরকার প্রধান বলেন, রাজপথে আন্দোলন করছে, তবে কোনও ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে, কেউ কিছু বলছে না। তবে এর বাইরে কিছু করলে কিংবা পুলিশের গায়ে হাত দিলে, গাড়ি ভাংচুর করলে বা তারা যদি অন্যকিছু করতে যায়, তখন তো আইন আপন গতিতে চলবে।

কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, একবার তারা এ ধরনের আন্দোলন করেছিল, শুধু আন্দোলন না, আরো সব ঘটনা ঘটাচ্ছিল যেমন আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ, মানুষের ওপর আঘাত করা। দেশের কিছু জ্ঞানী-গুণী আছে, ঘরের ভেতর বসে তারা মিথ্যা-অপপ্রচার রেকর্ড করে ছেড়ে দিল। এ সমস্ত দেখে আমি খুব বিরক্ত হয়ে যাই। তখন এক পর্যায়ে আমি বললাম, ঠিক আছে কোটা বাদই দিলাম। সেটার উদ্দেশ্য ছিল কোটা বাদ দিলে কী হয় তা দেখা।

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন কী অবস্থা হয়েছে? বেশিদূর যাওয়া লাগবে না। সর্বশেষ বিসিএসে দেখেন, ফরেন সার্ভিসে দুইজন মেয়ে নিয়োগ পেয়েছে, পুলিশে চারজন। নারী অধিকারের কথা বলি। সব ধরনের ব্যবস্থা করছি। বঙ্গবন্ধু নারীদের জন্য ১০ শতাংশ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রেখেছিলেন। আমরা বলেছিলাম যে, কোটা পূর্ণ হবে না, যারা তালিকায় পরবর্তীতে থাকবে তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেটাই আমরা শুরু করে দিয়েছিলাম। তারপরে যখন আন্দোলন শুরু হলো সব বন্ধ করলাম।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় (২০১৮) যারা আন্দোলন করেছিল, সেখানে নারীও ছিল। যারা বলেছিল নারী কোটা চাই না, মেধা দিয়ে চাকরি করব, সে কি চাকরি পেয়েছে? সে কি বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে? বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে পাস করেছে? তারা যদি এই বড় কথাগুলো না বলত, কোথাও না কোথাও চাকরি করত। দেশের সব এলাকা সমানভাবে উন্নত না।

তিনি বলেন, অনগ্রসর সম্প্রদায় আছে। সেইসব মানুষের কি কোনও অধিকার থাকবে না? সেটা বিবেচনা করে প্রত্যেক জেলা থেকে মানুষ যাতে চাকরি পায় সেই ব্যবস্থা। কোটা বন্ধ করার পরে হিসাবটা কী দাঁড়িয়েছে? কোনো কোনো জেলা নয়, ২৩ জেলার একটা লোকও পুলিশে চাকরি পায়নি, প্রশাসন বা কোথাও না।

কোটা বাতিলে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলার পরে কোর্ট যখন কোনো রায় দেয়, সে বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। সেখানে সমাধান করতে হবে। যারা আন্দোলন করছে, তারাতো আইন মানবেন না, আদালত মানবেন না, সংবিধান কি তারা চিনবেন না। ভালো পড়ালেখা করে, ভালো নম্বর পাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এরা নেতৃত্ব দেবে, তাদের তো ধারণাগুলো দরকার, জানা উচিত। রাষ্ট্র পরিচালনায় কী ধরনের কাজ হয়, সেটা কি তাদের জানা আছে? ধারণা তো দেখি না।

তিনি আরও বলেন, যখন আদালতে চলে গেল, সেটার সমাধান সেখানেই হবে। আদালত তাদের সুযোগ দিয়েছে। তারা আদালতে যাক, বলুক। তা না করে তারা রাজপথে সমাধান করবে, আমাকে তাই বলছে। আদালত যখন কথা বলেছে, রায় হয়ে গেছে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে আমার তো দাঁড়ানোর অধিকার নেই, সংবিধানও বলে না। সংসদও বলে না, কার্যপ্রণালিবিধিও বলে না। কিছুই না।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ড. আহসানুল ইসলাম টিটু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন। সূত্র: বাসস।