ইয়ামালের রেকর্ডের রাতে ফ্রান্সকে বিদায় করে ফাইনালে স্পেন

Spread the love

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪

বাঙালিনিউজ, খেলারডেস্ক

গতকাল ০৯ জুলাই ২০২৪, রোজ মঙ্গলবার, বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় (১০ জুলাই বুধবার প্রথম প্রহর) ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪ এর সেমিফাইনালের প্রথম ম্যাচে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামে ফ্রান্স ও স্পেন। ম্যাচের শুরুতে ফ্রান্স ১-০ ঘোলের ব্যবধানে এগিয়ে গেলেও, শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে জয়লাভ করে স্পেন ইউরো ২০২৪ এর ফাইনালে খেলার টিকিট নিশ্চিত করে।

গতকাল রাতে ম্যাচ শুরুর মাত্র ৯ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পের সহায়তায় রানদাল কোলো মুয়ানি ফ্রান্সকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেয়। ফলে ম্যাচের শুরুতেই চাপে পড়ে ম্পেন।

তবে মাত্র ১৬ বছর বয়সী ইয়ামালের রেকর্ড গড়া গোলেই পিছিয়ে থাকা স্পেন ১-১ গোলে ফ্রান্সের সঙ্গে সমতায় ফিরে। এরপর দারুণ এক গোলে স্পেনের হয়ে ব্যবধান ২–১ করেন দানি অলমো। অনেক চেষ্টা করেও স্পেনের সঙ্গে আর সমতায় ফিরতে পারেনি এমবাপ্পের ফ্রান্স। ফলে স্পেন ২–১ গোলে ফ্রান্সকে হারিয়ে  এক যুগ পর ইউরোর ফাইনাল নিশ্চিত করে।

মিউনিখে স্পেন ও ফ্রান্সের এই সেমিফাইনাল ম্যাচে গোল করে দলের জয়ে অবদান রাখার সঙ্গে ১৬ বছরের তরুণ ইয়ামাল খেলেছেনও দুর্দান্ত। অ্যাটাকিং থার্ডে ফ্রান্সের জন্য রীতিমতো আতঙ্ক হয়েই ছিলেন এই বার্সেলোনা তারকা।

অন্যদিকে ফ্রান্স অধিনায়ক কিলিয়ান এমবাপ্পে নাক ভাঙার পর গতকাল মধ্যরাতের এই ম্যাচে প্রথম মাস্ক ছাড়াই খেলতে নেমেছিলেন। আগের ম্যাচগুলোর তুলনায় ভালো খেলেছেন। শুরুতে দলকে এগিয়ে দেওয়া গোলের প্রথম কারিগর ছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত হাসি মুখে মাঠ ছাড়তে পারেননি। হতাশা নিয়েই বিদায় নিলেন ইউরো কাপের লড়াই থেকে।

ম্যাচের শুরুতে লক্ষ্য স্পষ্ট করে স্পেন। তারা প্রেসিং ও আক্রমণে থাকবে। তবে পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি ফ্রান্সও। শুরুতে মিডফিল্ড দখলে রাখার চেষ্টা করে দিদিয়ের দেশমের দল। এর মধ্যে ম্যাচের ৫ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত স্পেন। কিন্তু লামিনে ইয়ামালের দুর্দান্ত এক ক্রসকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ফাবিয়ান রুইজ। তাঁর হেড চলে যায় বারের ওপর দিয়ে।

পাল্টা আক্রমণে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দারুণভাবে ঠেকিয়ে দেন ৩৮ বছর বয়সী ডিফেন্ডার জেসুস নাভাস। নিষেধাজ্ঞার কারণে দানি কারভাহাল না থাকায় ‘বুড়ো’ নাভাসের কাঁধেই ছিল এমবাপ্পেকে থামানোর দায়িত্ব। তবে প্রথম যাত্রায় সফল হলেও দ্বিতীয়বার আর এমবাপ্পেকে আটকাতে পারেননি নাভাস।

উসমান দেম্বেলের কাছ থেকে বল পেয়ে নাভাসের মার্কিংয়ের ফাঁদ এড়িয়েই এমবাপ্পে অসাধারণ একটি ক্রসে বল বাড়ান কোলো মুয়ানির উদ্দেশে। নিঁখুত হেডে বল স্পেনের জালে জড়িয়ে দেন এই স্ট্রাইকার। পুরো টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত এটিই ছিল ওপেন প্লেতে (ফ্রি–কিক, পেনাল্টি, আত্মঘাতী নয় এমন গোল) করা ফ্রান্সের প্রথম গোল। এই গোলে মিশেল প্লাতিনি ও জিনেদিন জিদানের পর তৃতীয় ফরাসি খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ ও ইউরোর সেমিফাইনালে গোলের কীর্তিও গড়েন মুয়ানি।

 

গোল খেয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে স্পেন। প্রেসিং ও পাসিংয়ের শক্তি দেখিয়ে একাধিকবার আক্রমণে যায় তারা। যদিও সেসব আক্রমণ গোলের জন্য যথেষ্ট ছিল না। উল্টো ১৯ মিনিটে দারুণ এক পাল্টা–আক্রমণে স্প্যানিশ ডিফেন্স কাঁপিয়ে দেন এমবাপ্পে। শেষ পর্যন্ত গোল হয়নি।

 

অবশেষে ২১ মিনিটে স্পেনের ইয়ামাল গোল করে ফ্রান্সের সঙ্গে স্পেনের ১-১ গোলে সমতা আনেন। স্পেনের আক্রমণের ধারায় ইয়ামাল বলটি পান বক্সের কিছুটা বাইরে। তারপর ২৫ মিটার দূর থেকে চার ডিফেন্ডারকে হতভম্ব করে অবিশ্বাস্য এক শটে বাঁ পাশের ওপরের কোনা দিয়ে বল জালে জড়ান ইয়ামাল। মনে রাখার মতো এক গোল!

এই গোলে ইউরোতে নতুন এক ইতিহাসও লিখলেন ১৬ বছর বয়সী এ উইঙ্গার। ইয়ামালই এখন ইউরোতে ১৬ বছর বয়সে গোল করা একমাত্র ফুটবলার। পাশাপাশি এই গোলে ইউরো ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হলেন ইয়ামাল (১৬ বছর ৩৬২দিন)। এর আগে ১৯৫৮ বিশ্বকাপে ১৭ বছর ২৩৯ দিনে গোল করেছিলে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল সম্রাট পেলে।

সমতায় ফিরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় স্পেন। ম্যাচের ২৫ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে স্পেন। দুর্দান্ত এক আক্রমণে নাভাসের শট প্রতিহত হয়। ফিরতি বল দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শট নেন অলমো। যা ইউলেস কুন্দের গায়ে জালে জড়ালে ২–১ গোলে এগিয়ে যায় স্পেন।

বিরতির পর দ্রুত আক্রমণে ফ্রান্স ডিফেন্সকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে স্পেন। তবে দ্রুত পাল্টা জবাব দিয়ে স্পেনকে চাপে ফেলার চেষ্টা করে ফ্রান্স। পরপর দু’বার আক্রমণে গিয়ে স্প্যানিশ সমর্থকদের চাপে ফেলে ফরাসি ফরোয়ার্ডরা। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তবে ম্যাচের ৬০ মিনিটে দেম্বেলের শট কোনোরকমে ফেরান স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমন। এ সময় সমতায় ফেরার চেষ্টায় ফ্রান্স বেশ চাপে রাখে স্পেনকে।

দলীয় প্রচেষ্টা কাজে না আসায় এমবাপ্পে একক নৈপুণ্যের কিছু ঝলকও দেখিয়েছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে আবারও সুযোগ হাতছাড়া করে ফ্রান্স। আক্রমণে এগিয়ে থাকলেও স্পেনকে যতটা কোণঠাসা করার কথা ততটা পারেনি ফ্রান্স। ৮১ মিনিটে ইয়ামালের শট বার ঘেঁসে বাইরে না গেলে ম্যাচটা তখনই শেষ হয়ে যেতে পারত। ৮৬ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণে সুযোগ নষ্ট করেন এমবাপ্পে। ম্যাচের বাকি সময়ে চেষ্টা করেও ফ্রান্সকে আর সমতায় ফেরাতে পারেননি এমবাপ্পে–গ্রিজমানরা। ফলে দারুণ জয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে স্পেন। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের মধ্যে সেমিফাইনালের লড়াইয়ে বিজয়ী দলের সঙ্গে ইউরো কাপ ২০২৪ ফাইনালে লড়বে স্পেন।