বাঙালিনিউজ, দেশডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ২৫ জুন ২০২৪ রোজ মঙ্গলবার, নোবেল বিজয়ী ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে তাঁর সঙ্গে বিতর্কের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছেন, ইউনুস তাঁর কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন এবং এখন তিনি অবৈধভাবে সংগৃহিত অর্থ ব্যবহার করে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাঁকে ঈর্ষা করার কিছু নেই। তিনি এসে আমার সঙ্গে বিতর্ক করতে পারেন, যেমনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করা হয়।”
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক দুই দিনের ভারত সফরের উপর আজ ২৫ জুন ২০২৪ রোজ মঙ্গলবার, ঢাকায় গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
তাঁর বিরুদ্ধে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত নিবন্ধ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডক্টর ইউনূস তাঁর অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ ব্যবহার করে তাঁর বিরুদ্ধে লিখছেন। তিনি বলেন, এর আগে বেশ কয়েকজন নোবেল বিজয়ীর প্রকাশিত বিবৃতি ছিল একটি বিজ্ঞাপন।
শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, “তিনি এত জনপ্রিয় হলে কেন তাঁকে বিজ্ঞাপন দিতে হলো।” তিনি বলেন, সারা বিশ্বের মানুষেরই তো তাঁর পক্ষে কথা বলার কথা। কিন্তু, কেউ তাঁর পক্ষে কথা বলতে এগিয়ে আসেননি।
ইউনূস তাঁর কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক যে আমরা তাঁকে উপরে তোলার জন্য আরো অনেক কিছু করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড. ইউনূস একজন ব্যবসায়ী। তাঁর সঙ্গে আমার কোনো তুলনা নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শেখ হাসিনা কারো প্রতি ঈর্ষান্বিত নন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। অন্তত এই আসনটি কেউ নিতে পারবে না। আমি এটা নিয়ে গর্ব বোধ করি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীত্ব সাময়িক। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি সব সময় দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে থাকেন। তিনি বলেন, “আমি কখনোই দেশ বা দেশের স্বার্থ (কারো কাছে) বিক্রি করি না।”
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুদ্রঋণকে দারিদ্র্য বিমোচনের একটি ভালো পদক্ষেপ মনে করে তিনি দেশে ও বিদেশে এর প্রচার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তবে তিনি ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছেন যে- ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্রতাকে লালন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গ্রামীণ ব্যাংককে তিন ধাপে ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে টিকে থাকতে সাহায্য করা সত্ত্বেও ইউনূস এখন তাঁকেই সবচেয়ে বেশি দোষারোপ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনকি তিনি টেলিনরের সঙ্গে অংশীদারিত্বে ইউনূসকে গ্রামীণ ফোনের ব্যবসাও দিয়েছিলেন। ইউনূস টেলিফোন ব্যবসার টাকা দিয়ে ব্যাংক পরিচালনার অঙ্গীকার করেছিলেন। তবে তিনি গ্রামীণ ফোনের ব্যবসা থেকে একটি পয়সাও ব্যাংককে দেননি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য প্রাপ্ত বিদেশি অনুদান ব্যাংকটির টিকে থাকার জন্য ব্যবহার করেননি। প্রতিটি ক্ষেত্রে, তিনি তাঁর নিজস্ব ব্যবসার উদ্দেশ্যে অর্থ ব্যবহার করেছেন এবং তিনি সেই ব্যবসার জন্য কর দেননি। যখনই ইউনূসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে, তখন তিনি কর হিসাবে কিছু টাকা দিয়েছেন এবং এভাবে তিনি প্রমাণ করেছেন যে-তিনি কর ফাঁকি দিয়েছেন।
ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের টাকা না দিয়ে ব্যবসা করতেন এবং ২০০৬ সাল থেকে শ্রমিকদের তহবিলে কোনও অর্থ প্রদান করেননি। গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মচারীরা ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা করেন এবং সেই মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে আমার দোষ কি?”
সরকার কোনো মামলা করেনি, বরং ইউনূস সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা করেছেন এবং সে মামলায় হেরে গেছেন।
বছরের পর বছর কেউ ট্যাক্স ফাঁকি দিলে এবং শ্রম কল্যাণ তহবিলের টাকা আত্মসাৎ করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করলে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো কী ব্যবস্থা নেয়- সে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জেনারেল এরশাদের শাসনামলে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ড. ইউনূসকে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক করা হয়। “তিনি নিজে এই ব্যাংকটি (প্রতিষ্ঠা) করেননি।” শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে চাকরি করতেন ও বেতন পেতেন- এটি একটি সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ। সরকার থেকে বেতন ও অন্যান্য ভাতা দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু এমনভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছে, যেন তিনিই (ড.ইউনূস) এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প গ্রহণযোগ্য নয়- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, তাঁর ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের আওতায় ঋণের জন্য জনগণকে ৪০-৪৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হবে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, দেশে তাঁর ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পটি এতো কার্যকর হলেও কেন দারিদ্র্য বিমোচন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমিই বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন করেছি। আমি মাত্র ১৫ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪১.৬ থেকে ১৮.৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, কারো সঙ্গে তাঁর কোনো বিরোধ নেই এবং কখনো নোবেল পাওয়ার ইচ্ছাও তাঁর নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি-চুক্তি সম্পাদনের জন্য তাঁর ভূমিকা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এটি একটি অনন্য শান্তি-চুক্তি ছিল। কারণ এতে প্রায় ১,৮০০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করে এবং অস্ত্র জমা দেয়।
তিনি বলেন, শান্তি চুক্তির পর দেশ-বিদেশের অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার জন্য লিখেছিলেন, কিন্তু তিনি কখনো তাঁদের বলতে যাননি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি ব্যাংকের এমডি যখন নোবেল পুরস্কার পান, আমি কেন তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাব?
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ইউনূস ২০০৭ সালে রাজনীতিতে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের সুদের প্রচণ্ড চাপে থাকা জনগণের কাছ থেকে তিনি কোনো সাড়া পাননি।
হিলারি ক্লিনটনের উপস্থিতিতে যশোরে এক অনুষ্ঠানে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া ব্যক্তিরা আজ কোথায়- গণমাধ্যমকে তা তিনি বের করতে বলেন। তাদের জিনিসপত্র বিক্রি করে এলাকা ছাড়তে হয় এবং ঋণের সুদ পরিশোধের চাপে তাদের অনেকেই আত্মহত্যা করে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্যগণ, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও কাজী জাফরুল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এম নাঈমুল ইসলাম খান। খবর: বাসস।