ইউক্রেনে শিশু হাসপাতাল সহ বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, চিকিৎসকসহ নিহত ৩৬

Spread the love

নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক আজ

বাঙালিনিউজ, বিশ্বডেস্ক

গতকাল ০৮ জুলাই ২০২৪, রোজ সোমবার ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৬ জন নিহত হয়েছেন। জানা গেছে, গতকাল সকালে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সংঘটিত হয়েছে। এতে এক চিকিৎসকসহ প্রাপ্ত বয়স্ক দুজন নিহত হয়েছেন।

এই হামলার ঘটনার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছে ইউক্রেন। তবে ইউক্রেনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে মস্কো। তাদের দাবি, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরা অংশ নিজেদের ওই হাসপাতালে আঘাত হেনেছে।

হাসপাতালটিতে অতর্কিত হামলাটিকে রুশ হামলা বলে অভিহিত করে নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমা ও জাতিসংঘের নেতারা। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র এটিকে ‘বিশেষভাবে মর্মান্তিক হামলা’ উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইকুয়েডর, স্লোভেনিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে আজ ০৯ জুলাই মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠকে বসবে।

জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড বলেন, আমরা হাসপাতালে রাশিয়ার কাপুরুষোচিত ও বিকৃত হামলার জবাব দেব। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার ‘নিষ্পাপ শিশুদের ওপর হামলাকে’ ‘জঘন্য কাজ’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন।

ঘটনার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। জেলেনস্কি বলেছেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের জন্য আমাদের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র কিয়েভের ওখমাতদিত হাসপাতালে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর রাজধানীতে সবচেয়ে ভারী হামলার অংশ ছিল এটি।

টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে জেলেনস্কি লিখেছেন, রাশিয়ার সমস্ত অপরাধের জন্য অবশ্যই পুরোপুরি জবাবদিহি করতে হবে। মানুষের বিরুদ্ধে, শিশুদের বিরুদ্ধে এবং সাধারণভাবে মানবতার বিরুদ্ধে এই হামলা।

বিকট শব্দে বিস্ফোরণে দেশটির বৃহত্তম শিশু হাসপাতাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অজ্ঞাত আরও অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে। সেখানে উদ্ধার অভিযান চলছে।

ওমাৎজিৎ নামের ওই হাসপাতালের চিকিৎসক লেসিয়া লিসাৎজিয়া বলেন, হঠাৎ যেন চলচ্চিত্রের কোনো দৃশ্যের ঘটনা ঘটে গেল— তীব্র আলো এবং পরপরই ভয়ংকর একটি শব্দ। তিনি জানান, হামলায় হাসপাতালের একটি অংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, অপর একটি অংশে আগুন ধরে যায়। তাঁর মতে, হাসপাতালটির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, ওই হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে চিকিৎসাধীন শিশুদের অন্যত্র সরানো হচ্ছে। এসব শিশুর মধ্যে কারো কারো হাতে স্যালাইনের পাইপও লাগানো রয়েছে।

জানা গেছে, শুধু এই হাসপাতাল নয়, গতকাল সোমবার ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্ট্যাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক বলেন, এদিন এসব হামলায় ৩৬ জন নিহত ও ১৪০ জন আহত হয়েছেন।

কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো বলেন, হাসপাতালের হামলার ঘটনায় একজন চিকিৎসকসহ দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তবে উদ্ধারকারীরা শঙ্কা করছেন, ধ্বংস স্তূপের নিচে আরও অনেক মানুষ চাপা পড়ে থাকতে পারেন।

ওমাৎজিৎ ইউক্রেনের বড় হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি। এখানে শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসার পাশাপাশি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজও করা হয়ে থাকে।

হাসপাতালটির যে অংশে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছিল সে অংশে প্রায় ২০টি শিশু চিকিৎসাধীন ছিল বলে হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এই হামলার প্রতিবাদে ও হতাহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় টেনিস খেলোয়াড় এলিনা সভিতোলিনা। গতকাল বিকেলে তিনি উইম্বলডনের রাউন্ড-১৬ খেলার সময় কালো ফিতা (ব্ল্যাক রিবন) পরেছিলেন।

কিয়েভের মেয়র অভিযোগ করেন, রাশিয়া ইউক্রেনের নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্ববাসী দেখুক তারা কীভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও কামিকাজে ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনের শান্তিপূর্ণ শহরটির (কিয়েভ) নাগরিকদের হত্যা করেছে। তিনি জানান, কিয়েভের নিপ্রস্কি জেলায় পৃথক হামলায় একটি প্রসূতি-সেবা হাসপাতালের অংশ ধ্বংস হয়েছে। এতে ৭ জন নিহত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, কিয়েভ, নিপ্র, ক্রিভি রিহ, স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাত্রর্স্কসহ বিভিন্ন শহরে ৪০টির বেশি নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি পশ্চিমা-মিত্র দেশগুলোকে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, আলজাজিরা, বিবিসি।