বাঙালিনিউজ অনলাইন ডেস্ক
প্রতিবেশী ইউক্রেনের সঙ্গে ২০২২ সাল থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, জাপান-সহ বহু দেশ একজোট হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা সরাসরি ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে তাদের অস্ত্র ও অর্থ সহ নানাভাবে সহযোগিতা করছে। কিন্তু এই যুদ্ধ কি শুধু রাশিয়ার ও ইউক্রেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে? ইউক্রেনের পক্ষ শক্তিগুলো কি সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে যাবে?
সমর বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কারো কারো মতে, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কী সেসব ঘটনা, যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
প্রথমেই আসা যাক, সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি ঘটনায়। ক’দিন আগে রাশিয়ায় জোড়া সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম ঘটনাটি ঘটে রাশিয়ার দাগিস্তান এলাকায়। কয়েকজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী সেখানকার ক্রিস্টানদের গির্জা এবং ইহুদিদের উপাসনালয়ে হামলা চালিয়েছে। এমনকী, গির্জার পাদ্রির গলা নৃশংস ভাবে কেটে তাকে হত্যা করেছে।
শুধু তা-ই নয়, ইহুদিদের উপাসনালয়ে হামলা চালিয়ে আগুনও ধরিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। পাশাপাশি এলাকার আরও কয়েকটি জায়গায় হামলা করেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এই নৃশংস হামলা কি শুধুই ধর্মীয় কারণে, না কি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে?
এই পরিস্থিতির মধ্যেই গত ২৩ জুন ২০২৪ রোজ রবিবার রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। গত দু’বছর ধরে ইউক্রেন মূলত রুশ আক্রমণ প্রতিহত করে আসছিল। অথচ গত রবিবার রুশ অধিকৃত অঞ্চলে সরাসরি হামলা চালায় ইউক্রেন।
এই হামলার ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। আহত শতাধিক। এই ঘটনার পর থেকেই বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা করছে বিশ্বের অনেক রাজনীতি ও সামরিক বিশ্লেষক। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এখন শুধু রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ সীমাবদ্ধ থাকবে না, ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও।
কেন এই আশঙ্কার জন্ম হলো? ক্রিমিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে মস্কো। রাশিয়া মনে করছে এই হামলা ইউক্রেন চালালেও, এর নেপথ্যে রয়েছে আমেরিকা। এই হামলার ঘটনার পরই রাশিয়ার আমেরিকান রাষ্ট্রদূতকে তলব করে মস্কো। সেখানে তাঁকে এই নিয়ে কড়া কথা শোনানো হয়েছে।
ক্রিমিয়ায় হামলা নিয়ে ভ্লামিদির পুতিন সরকার এখনও পর্যন্ত বেশি কিছু বলেনি। শুধু এক বাক্যে বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে অবশ্যই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই হামলার নেপথ্যে আমেরিকা-যোগ কী ভাবে খুঁজে পাচ্ছে রাশিয়া? এই প্রশ্নই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত কূটনৈতিক মহলে। ক্রিমিয়ায় যে ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে তা হলো ‘আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস)’। এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি হয় আমেরিকাতেই। অর্থাৎ, ইউক্রেনকে আমেরিকাই এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে।
২০২২ সালে রাশিয়ার হামলার পরই ইউক্রেনের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সামরিক দিক থেকে তো বটেই, অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইউক্রেনকে সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয় হোয়াইট হাউস।
তবে এতদিন জ়েলেনস্কি সরকার মূলত রুশ হামলা প্রতিহত করছিল। যদি ইউক্রেনের জমিতে ঢুকে রুশ সেনা হামলা করে, তা হলেই পাল্টা জবাব দিচ্ছিলো ইউক্রেন সেনা। রাশিয়ায় গিয়ে হামলা চালানো থেকে প্রায় বিরতই ছিল তারা।
কিন্তু রবিবারের হামলার পর বোঝা যাচ্ছে, ইউক্রেন ‘রক্ষণাত্মক’ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। তারাও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। এতদিন ‘চুপ’থাকার পর কেন আক্রমণের পথ বেছে নিলো ইউক্রেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
রাশিয়ার মতে, আমেরিকার মদত পেয়েই ইউক্রেন এই হামলা চালিয়েছে। এর জন্য জি-৭ সম্মেলনের মাঝে জ়েলেনস্কি-বাইডেন বৈঠককেই দায়ী করছে রুশ প্রশাসন।
আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, সূত্রের খবর- সেই বৈঠকেই যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে রাশিয়ার যে কোনও জায়গায় আমেরিকান অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানোর জন্য ইউক্রেনকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে আমেরিকা। সেই খবর প্রকাশ্যে আসার পরই শোরগোল পড়ে গেছে বিশ্বে।
রবিবারের হামলার পর, আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন তুলেছে রাশিয়া। তাদের মতে, ক্রিমিয়ায় যেহেতু আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তাই বলাই যায় আমেরিকার ইশারাতেই ইউক্রেন ওই হামলা করেছে।
একই সঙ্গে দাগিস্তানে আততায়ী হামলার নেপথ্যেও আমেরিকা রয়েছে বলে মনে করছে রাশিয়া। কেন এই ধারণা? ওই হামলার কিছু ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সব ভিডিওতে সন্ত্রাসীদের দেখা গেছে, তারা অস্ত্র হাতে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সেই অস্ত্র নিয়েই চলছে আলোচনা। সন্ত্রাসীদের হাতে যে বন্দুক দেখা গেছে, তা সবই আমেরিকায় তৈরি। প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে সন্ত্রাসীরা ওই বন্দুক পেলো? কাদের মদতে এই হামলা? রাশিয়া এ ব্যাপারে তেমন প্রতিক্রিয়া না দিলেও, ক্রিমিয়া হামলা নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
উল্লেখ্য, ক্রিমিয়া নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের বিরোধ নতুন নয়। আগে ওই এলাকা ইউক্রেনের অংশ ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে রাশিয়া সেখানে আক্রমণ করে এবং সরাসরি দখল করে নেয়। তারপর থেকে ক্রিমিয়া রাশিয়ার দখলে রয়েছে।
২০১৪ সালে রাশিয়াকে এই হামলার দাম চোকাতে হয়। জি ৮ থেকে বার করে দেওয়া হয় পুতিনের দেশকে। সেই থেকে বিশ্বে জি ৭ ছড়ি ঘোরাচ্ছে।
সেই ক্রিমিয়ায় নতুন করে ইউক্রেনের হামলা দেখে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকেই। তাঁদের ধারণা, আমেরিকা এতদিন পরোক্ষ ভাবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে ছিল। এবার সরাসরি শুরু হতে পারে রাশিয়া-আমেরিকা যুদ্ধ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকা কেন সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চাচ্ছে? কূটনৈতিক মহলের কারো কারো মতে, সাম্প্রতিক সময়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের উত্তর কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম সফর চিন্তায় ফেলেছে আমেরিকার বাইডেন প্রশাসনকে।
উত্তর কোরিয়া যে আমেরিকার বড় শত্রু, তা সবাই জানে। সেই উত্তর কোরিয়ায় গিয়ে প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের সঙ্গে পুতিনের বৈঠক ও চুক্তি ভাল চোখে দেখছে না হোয়াইট হাউস। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।