দ্যুতিময় বুলবুল
আজ বিশ্ব বাবা দিবস। প্রতি বছরের ন্যায় জুনের তৃতীয় রোববার এই দিবসটি পালিত হয়। আজ ১৩ জুন এই বাবা দিবস পলিত হচ্ছে। প্রতি বছর বিশ্বের ১১১ দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। তবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ সেপ্টেম্বরের প্রথম রোববার বাবা দিবস পালন করে।
বাবার মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করেই পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সমর্থন, সম্মান এবং প্রশংসার জন্য এই বাবা দিবস পালিত হয়।
বাবা তাঁর সন্তানের কল্যাণ এবং তাদের মঙ্গলময় ভবিষ্যতের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেই আজ দেশে দেশে বাবা দিবস পালিত হচ্ছে। ইউরোপের রোমান ক্যাথলিক দেশগুলোতে, পিতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মধ্যযুগ থেকে ১৯ মার্চ সেন্ট জোসেফ দিবস পালিত হয।
তবে বাবা দিবসের শুরু হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এই দিবসটি পালনের জন্য প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯০৮ সালে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে এক গির্জায় ৫ জুলাই প্রথম বাবা দিবস পালন করা হয়। তবে কেউ কেউ বলেন, ওয়াশিংটনের ভ্যাংকুভারে প্রথম বাবা দিবস পালিত হয়।
অনেকের মতে, বাবা দিবসের প্রবক্তা সোনার স্মার্ট ডোড। যখন তাঁর বয়স ১৬, তখন তাঁর মা ষষ্ঠ সন্তান জন্মের সময় মারা যান। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে পরিবারে সোনার স্মার্ট ছিলেন একমাত্র কন্যা। স্ত্রীর মৃত্যুর পর, পূর্ব ওয়াশিংটনের এক গ্রামের ফার্মে সোনার স্মার্টের বাবা নবজাতকসহ পাঁচটি সন্তান মানুষ করার দায়িত্ব নেন। সোনার স্মার্ট বড় হওয়ার পর বুঝতে পারেন, ছয়টি সন্তানকে একা মানুষ করতে গিয়ে, কী ভীষণ পরিশ্রমই না করেছেন তাঁর বাবা উইলিয়াম।
উইলিয়াম তার মেয়ের চোখে ছিলেন একজন সৎ, সাহসী, সংগ্রামী এবং নিঃস্বার্থ প্রেমময় বাবা। তিনি সন্তানদের মানুষ করার জন্য নিজের জীবনের সব সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়েছিলেন।
সোনার স্মার্ট বড় হয়ে জন ব্রোস ডোডকে বিয়ে করেন। তাদের সন্তান জ্যাক ডোডের জন্মের কিছু দির পর সোনারের স্বামী জন মারা যান। এ অবস্থায় সোনার তাঁর বাবার কাছে চলে আসেন। এরপর বাবা ও মেয়ে পুরো জীবন একসঙ্গে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা এবং আদর, স্নেহে ও মায়া, মমতায় বাকি জীবন কাটিয়ে দেন।
বাবার প্রতি সম্মান জানাতে ‘বাবা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সোনার স্মার্ট ডোডের চিন্তায় আসে ১৯০৯ সালে। ওই বছর ‘মা দিবস’ উদযাপনের জন্য চার্চে যান সোনার স্মার্ট ডোড। ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে তাঁর মনে হয়, মা দিবসের মতো বাবাদের জন্যও একটি দিবস করা প্রয়োজন, যেদিন মায়েদের মতো বাবাদেরও বিশ্বব্যাপী সন্তানরা সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাবে।
সেই চিন্তু অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেন মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের কাছে সোনার স্মার্ট ডোড তাঁর পিতার জন্মদিন ৫ জুনকে ‘বিশ্ব বাবা দিবস’ঘোষণা করার জন্য প্রস্তাব পাঠান। একইসঙ্গে সোনার স্মার্ট ডোড ১৯১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যে বাবা দিবস পালন করেন। প্রথম বাবা দিবসটি পালিত হয়েছিল ১৯১০ সালের ১৯ জুন।
সোনার স্মার্ট ডোডের প্রস্তাবটি মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশনে প্রশংসিত হয়। তারা দেশব্যাপী বাবা দিবস উদযাপনেও রাজি হয়। তবে ৫ জুনকে মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশন বাবা দিবস ঘোষণা করতে রাজি হয়নি। জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটা বিল উত্থাপন করা হয়।
১৯২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৯তম প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বাবা দিবস পালনের জন্য ছুটির দিনের জন্য ওই বিলে পূর্ণ সমর্থন দেন। তারপর ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬তম প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস ঘোষণা করেন জুন মাসের তৃতীয় রোববার ।
১৯৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাবা দিবসকে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করে, ৩৭তম প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে বাবা দিবস স্বীকৃতি দিয়ে আইনে স্বাক্ষর করেন। এরপর ১৯৭২ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। মায়ের পাশাপাশি বাবাও যে সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল – এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়।
উল্লেখ্য, শিখরা ২৯ ডিসেম্বর, গুরু গোবিন্দ সিং- এর জন্মদিনে ফাদার’স ডে উদযাপন করে । বাবা দিবস ছাড়াও, ১৯ নভেম্বর পুরুষ এবং ছেলে উভয়ের সম্মানে অনেক দেশে ‘আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস’ পালিত হয়।