আজ পবিত্র হজ

Spread the love

বাঙালিনিউজ, বিশ্বডেস্ক

আজ ১৫ জুন ২০২৪ রোজ শনিবার, লাখো কণ্ঠে আরাফাতের ময়দানে ধ্বনিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুল্‌ক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।

আজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন সারা বিশ্ব থেকে জড়ো হওয়া লাখো মুসলমান। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আরাফাতে অবস্থানই হলো হজ (মুসনাদে আহমদ ৪/৩৩৫)।

হজ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ বিধান। হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান সব মুসলমান পুরুষ ও নারীর ওপর হজ ফরজ। জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট দিনে (মূলত ৯ জিলহজ) হজের নিয়তসহ ইহরাম পরিধান করে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা এবং পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করা হজ।

সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে গেলে অত্যন্ত বিনয়ী ও তাকওয়ার সঙ্গে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন হাজিরা। এ দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম, এ জন্যই আরাফায় আসেন তাঁরা। কিবলার দিকে মুখ করে দুই হাত উঁচু করে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, ক্ষমা চান, দয়া কামনা করেন ও মনের আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ তাআলার কাছে ব্যক্ত করেন।

আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ‎, দরুদে ইবরাহিম, তালবিয়া, তাকরির, জিকির, ইস্তিগফার ও দোয়া করেন। নিজের জন্য ও পরিবার-আত্মীয়স্বজনদের জন্য তারপর প্রতিবেশী-পরিচিতজনদের জন্য এবং পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করেন হাজিরা।

হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে দূরে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর প্রকৃত হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়’ (বুখারি: ১/২০৬)।

কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ‘সাঈ’ (সাতবার দৌড়াবেন) করবেন হাজিরা। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন থাকবেন, তত দিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর মারবেন। আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর নিজ নিজ দেশে ফিরবেন।

পবিত্র কাবাঘর প্রদক্ষিণ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান, সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে দৌড়ানো, মিনার জামারায় পাথর নিক্ষেপ, আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি ইত্যাদি হজের ইবাদত। এর প্রতিটি ইবাদতের মধ্যেই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য। এগুলোর সঙ্গে হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর কোরবানি, আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা–বিশ্বাস, আনুগত্যের শিক্ষা রয়েছে।

সৌদি আরবের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র জানিয়েছে, হজের সময় মক্কার তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি বা তার বেশি থাকতে পারে।

মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা কেউ ট্রেনে, কেউ গাড়িতে, কেউ হেঁটে মিনায় যাবেন এবং নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরবেন। মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড় বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন।

আজ সূর্যাস্তের আগপর্যন্ত সব হাজি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকেন। আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের প্রতিদানস্বরূপ আল্লাহ হাজিদের নিষ্পাপ ঘোষণা করেন। হাদিসে আছে, ‘আরাফার দিন আল্লাহ এত বেশি পরিমাণ জাহান্নামিকে অগ্নি থেকে মুক্তি দেন, যা অন্য কোনো দিবসে দেন না।’ (মুসলিম)

আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরাহ থেকে আজ হজের খুতবা দেওয়া হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সারা বিশ্বের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান কেউ গাড়িতে, কেউবা হেঁটে মিনায় পৌঁছান। মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দান। আজ আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন হাজিরা। তাঁরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে মুজদালিফায় (আরাফাতের ময়দান থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে) গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে এবং শয়তানের প্রতিকৃতিতে নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করবেন।

কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ‘সাঈ’ (সাতবার দৌড়াবেন) করবেন হাজিরা। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন থাকবেন, তত দিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর মারবেন। আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর নিজ নিজ দেশে ফিরবেন।

জামারায় শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের পর হাজিদের পশু কোরবানির প্রস্তুতি নিতে হয়। তাঁরা আগামীকাল কোরবানি দেবেন। অধিকাংশ হাজি নিজে বা বিশ্বস্ত লোক দিয়ে মুস্তাহালাকায় (পশুর হাট ও জবাই করার স্থান) গিয়ে কোরবানি দেন। কেউ কেউ ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকে ৭২০ রিয়াল জমা দিয়ে কোরবানি দেন।

হজ পালন করছেন ২৫-৩০ লাখ মানুষ
বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশের ২৫-৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনের লক্ষ্যে এখন সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ থেকে গেছেন ৮৫ হাজার মানুষ। পবিত্র হজ পালন করতে এসে এ পর্যন্ত ১৭ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন।

প্রথম আলো জানায়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার গতকাল শুক্রবার বলেছেন, বাংলাদেশের হাজিরা সুস্থ আছেন। হজ কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণকক্ষে হজযাত্রীদের সার্বিক বিষয়ে দেখভাল করা হয়। মৃত হাজির তালিকাসহ অন্যান্য তথ্য এই (hajj.gov.bd) ওয়েবসাইটে জানা যাবে। সূত্র: প্রথম আলো।