দ্যুতিময় বুলবুল
আজ ১ জুলাই ২০২৪ রোজ সোমবার, জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসানের জন্মদিন। দুই বাংলায় অনেক দর্শক নন্দিত সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। বাংলা ছবির প্রযোজক, পরিচালক এবং দর্শকের কাছে জয়া আহসানের নাম জনপ্রিয়তার শীর্ষে। একের পর এক সফল ও দর্শকনন্দিত সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক জগতে অবাধ বিচরণ জয়া আহসানের। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অভিনয় না শিখলেও, পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ, গান ও ছবি আঁকা শিখেছেন তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীতে ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
তবে অভিনেত্রী হিসেবেই ছোট পর্দায় তাঁর প্রথম আবির্ভাব। ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে একজন মডেল হিসাবে তার ক্যারিয়ার শুরু করার পর, জয়া আহসান বহু টেলিভিশন নাটক এবং সিরিয়ালে কাজ করেছেন। তিনি শহিদুল হক খানের লেখা পাঁচমি নাটকের মাধ্যমে টেলিভিশনে তার অভিনয় জীবনের সূচনা করেন।
জয়া আহসান মডেলিং দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করলেও, পরে মডেলিং ছেড়ে দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান। তিনি কিছু দিন সাংবাদিকতা ও শিশুদের স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এরপর ফের তিনি মডেলিংয়ে ফিরে যান। তারপর তিনি গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘সংশয়’ ছবিতে কাজ করেন। তিনি কারুশিল্প এবং চিত্রকলার অনুশীলন করেন। তিনি টেলিড্রামা পঞ্চমীতে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম টেলিভিশনে হাজির হন।
নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবেও জনপ্রিয়তা লাভ করেন জয়া। ২০০৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ব্যাচেলর’ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে জয়া আহসানের বাংলা সিনেমায় অভিষেক হয়। এরপর নুরুল আলম আতিক পরিচালিত ‘ডুবসাঁতার’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।
প্রথম দুটি ছবিতেই জয়া সফল অভিনয় করেন। তবে ২০১১ সালে তানিম নূর পরিচালিত ‘ফিরে এসো বেহুলা’এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত ‘গেরিলা’ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হন তিনি। তাকে ‘গেরিলা’ছবি এনে দেয় ব্যাপক সাফল্য। এ সিনেমার জন্য জয়া ২০১২ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জুরিদের বিচারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে।
গেরিলা ছবির পর কলকাতার নির্মাতা-প্রযোজকদেরও নজরে আসেন জয়া আহসান। সেই সুবাদে ঢালিউডেও তাঁর ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ২০১২ সালে তরুণ নির্মাতা রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’ সিনেমায় কলকাতার ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের সঙ্গে অভিনয় করে কলকাতায়ও আলোচিত হন জয়া।
জয়া আহসান অভিনীত ছবি দুই বাংলায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এসব ছবির মধ্যে রয়েছে- ফিরে এসো বেহুলা, ভালোবাসার শহর, বিসর্জন, আবর্ত, খাঁচা, দেবী, বিজয়া, ‘ঈগলের চোখ, রাজকাহিনী, প্রেম কাহিনি, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২, এক যে ছিলো রাজা, বিনি সুতোয়, জিরো ডিগ্রী, একটি বাঙালি ভূতের গল্প, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম, অর্ধাঙ্গিনী, দেবী, পুত্র, ক্রিসক্রস, দশম অবতার, ফেরেস্তে, পুতুল নাচের ইতিকথা, বিউটি সার্কাস প্রভূতি।
জয়া আহসান দুই বাংলার ছবিতে এখনো সমানতালে কাজ করছেন। বলিউডের সিনেমাতেও নাম লেখিয়েছেন তিনি। অসাধারণ অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ এ পর্যন্ত পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দুবার বাচসাস পুরস্কার, সাতবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, তিনবার ভারতের ফিল্মফেয়ার এবং একবার টেলি সিনে পুরস্কার অর্জন করেছেন। এ ছাড়া অসংখ্যবার পেয়েছেন মনোনয়ন।
তিনি ৬৬তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগদানের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিনেবে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস জিতেছেন, জি সিনে অ্যাওয়ার্ডস এবং বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ডস জিতেছেন। একই বছর, অভিনয়ে কৃতিত্বের জন্য জয়াকে এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালির সম্মানে ভূষিত করা হয়। তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ কলকাতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন থেকে ‘দশভুজা বাঙালি ২০১৯’ পুরস্কার জিতেছেন।
২০২৩সালের ডিসেম্বরে, জয়া আহসানের বলিউডে অভিষেক ঘটে কাদাক সিং ছবিতে, অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর একটি থ্রিলার ফিল্ম Zee5 এ মুক্তি পায়। হিন্দুস্তান টাইমস চলচ্চিত্রে জয়ার অভিনয়কে “OTT অন অসামান্য: ব্রেকআউট পারফরম্যান্স” হিসেবে অভিহিত করে।
জয় আহসান একজন গায়ক এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং রবীন্দ্র সঙ্গীতে ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন। তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকও করেছেন। জয়া আহসান একজন কারিগর এবং ভিজ্যুয়াল-শিল্পী।
নারী ও শিশুদের সাহায্য করার জন্য তাকে ইউএসএআইডি (ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট) এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে, জয়া আহসানকে বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। জয়া আহসানের প্রোডাকশন হাউসও রয়েছে।
জয়া আহসান ১৯৭২ সালে ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম এএস মাসউদ। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধ। তাঁর মায়ের নাম রেহানা মাসউদ। পেশায় শিক্ষক। জয়ার একটি ছোট বোন ও একটি ভাই আছে।
অসংখ্য ভক্ত হৃদয়ে ঝড়তোলা ৫২ বছর বয়সী জয়া আহসান একটি সংগীত স্কুলও পরিচালনা করেন। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে জয়া ছিলেন টেলিভিশন মডেল ও অভিনেতা ফয়সাল আহসানের সহধর্মিনী। ১৯৯৮ সালের ১৪ মে তারা বিয়ে করেছিলেন। এই দম্পতিকে একই টেলিভিশন বিজ্ঞাপনেও দেখা গেছে। তারা একসঙ্গে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি চালাতেন। তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০১১ সালে ফয়সালের সঙ্গে জয়ার বিচ্ছেদ ঘটে। জয়া আহসান ২০১২ সালে ফয়সালকে তালাক দেন। সূত্র: ইন্টারনেট।