বাঙালিনিউজ, দেশডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে বহুবার নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে জনগণ, দলের নেতা-কর্মী ও অগণিত সমর্থকদের কারণে তা সফল হয়নি। তিনি বলেন, ‘সংগঠনকে শক্তিশালী করতে পারলে এবং জনগণের সমর্থন পেলে, কোনো হামলা বা ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে পারবে না।
আজ ২৩ জুন ২০২৪ রোজ রোববার বিকেলে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সংগঠনের প্রতিটি নেতা-কর্মীর কাছে আমার একটাই আবেদন থাকবে, সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। একজন রাজনীতিবিদের জীবনে সংগঠন হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী একটি বিষয়। যদি সংগঠন শক্তিশালী হয়, তবে দেশের গণমানুষের সমর্থন পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে বলবো, দলের ও নেতাকর্মীদের ওপর বার বার আঘাত এসেছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। তাদের পরিবারগুলো কষ্ট করেছে। কিন্তু সংগঠন ধরে রেখেছে। কাজেই যেমন সংগঠন করতে হবে তেমনি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে, সেটাই আমাদের মূল শক্তি।
শেখ হাসিনা সকল গণআন্দোলনে আত্মত্যাগকারী এই সংগঠনের সকল নেতা-কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং বলেন সেই মহান আত্মত্যাগের মধ্যদিয়েই আজকে দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় বক্তৃতা করেন। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ সভা সঞ্চালনা করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করেন। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। পরে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপকমিটির উদ্যোগে এবং দেশ বরেণ্য বিভিন্ন শিল্পী ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে আসার আগেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে প্রখর দাবদাহ এড়িয়ে আশপাশের ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়, শাহবাগ, হাইকোর্ট এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সকাল থেকেই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর নানা রংয়ের পোশাক, টুপি পরে, হেড ব্যান্ড লাগিয়ে ও গামছা বেঁধে, ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড হাতে ঢাক-ঢোল নিয়ে বাদ্যের তালে তালে, শ্লোগানে শ্লোগানে চারদিক প্রকম্পিত করে দলে দলে নেতা-কর্মী ও সমর্থকগণ অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকেন।
আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর সে সময় প্রবাসে থাকায় তাঁকে এবং শেখ রেহানাকে অবৈধভাবে সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতা দখলকারীরা দেশে ফিরতে দেয়নি। ফলে তাঁরা প্রবাসে রিফিউজি হিসেবে জীবন কাটাতে বাধ্য হন এবং ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করার পর, একরকম জোর করেই শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন।
সেই দুঃসময়ের কথা স্মরণ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, তিনি এমন একটা সময় দেশে ফিরেছিলেন যখন যুদ্ধাপরাধী এবং জাতির পিতার খুনিরা ক্ষমতায়। জিয়া ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে খুনিদের বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এসেছিলাম একটা চিন্তা নিয়ে যে এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই হবে। মানুষকে সুখী সমৃদ্ধ জীবন উপহার দিতে হবে।’
গ্রিক পুরাণের ফিনিক্স পাখির উদাহারণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ফিনিক্স পাখি পুড়িয়ে ফেলার পরও ছাই ভস্ম থেকে যেমন জেগে ওঠে, আওয়ামী লীগও সেভাবেই জেগে উঠেছে। আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ও তৃণমূলের মানুষ, আওয়ামী লীগের অগনিত নেতা-কর্মী ও মুজিব আদর্শের সৈনিক। যারা কখনো পরাভব মানে না। মাথা নত করে না।
উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী ও অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ক’দিন ধরে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপন করছে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার টিকাটুলিস্থ কে এম দাস লেনের ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য দলটির নামকরণ করা হয় আওয়ামী লীগ।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। তার ১৯২ বছর পর, সেই একই দিন জাতিকে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ-বঞ্চনা ও পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করতে জন্ম নেয় আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দলটি ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী দেশি-বিদেশি ঘাতকচক্রের ষড়যন্ত্রে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হবার পর, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের সামরিক-বেসামরিক ম্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সহ সকল গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা চারবার সহ মোট পাঁচবার বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিচ্ছে।
লাখো জনতার উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আলোচনা অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে বিদেশি মিশনে কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। খবর: অনলাইন নিউজ।