অর্জুন-মালাইকা সম্পর্ক সত্যিই কি ভেঙে গেছে?

Spread the love

বাঙালিনিউজ, বিনোদনডেস্ক

বলিউড অভিনেত্রী মালাইকা অরোরা কখনো সঞ্চালক, কখনো টিভি রিয়েলিটি শোয়ের বিচারক, আবার কখনো মডেল। নৃত্যপটিয়সী এই অভিনেত্রী আইটেম গার্ল হিসেবে বিখ্যাত। মূলত, আইটেম গানে পারফর্ম করেই দর্শক হৃদয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন।

ভারতে এমটিভি চালু হবার পর, মালাইকা ছিলেন চ্যানেলটির সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও জকি বা ভিজে। তিনি দ্রুত ভারতে একজন আকর্ষনীয় মডেল ও উপস্থাপিকায় পরিণত হন। মালাইকার মা একজন মালায়লী এবং বাবা একজন পাঞ্জাবী। তাঁর পিতা অনিল অরোরা নৌবাহিনীতে কাজ করতেন। তাঁর মায়ের নাম জয়েস পলিকার্প।

কিন্তু এই অভিনেত্রীর নাম নানা কারণেই বলিউডে চর্চিত। ২০১৮ সালে তাঁর চেয়ে ১২ বছরের ছোট অর্জুন কাপুরের সঙ্গে প্রেমের কারণেই তিনি সবচেয়ে বেশি চর্চিত।

তবে মালাইকা অরোরা ও অর্জুন কাপুরের সম্পর্ক এখনো টিকে আছে কি নেই, তা নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, মালাইকা ও অর্জুনের পাঁচ বছরেরও অধিক সময় ধরে চলা প্রেম ভেঙে গেছে। তাই এখন আলোচনা সমালোচনা চলছে তাদের প্রেম এবং বিচ্ছেদ নিয়ে।

বলিউড অভিনেতা অর্জুন কাপুর গত ২৬ জুন ২০২৪ বুধবার ৩৯ বছরে পা দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতেই অর্জুন তাঁর পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জন্য বাড়িতে পার্টির আয়োজন করেছিলেন। বরুণ ধাওয়ান, জাহ্নবী কাপুর, আদিত্য রায় কাপুর, মাহিপ কাপুর, শানায়া কাপূর, মোহিত মারওয়া, সঞ্জয় কাপূর ও নাতাশা দালাল সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন ওই পার্টিতে। অনেক সেলিব্রিটিকে পার্টিতে দেখা গেলেও মালাইকা অরোরাকে দেখা যায়নি।

অথচ প্রতি বছর অর্জুনের জন্মদিনে যিনি সবার আগে ছুটে আসতেন, তাঁকেই দেখা গেল না ওই দিন। অর্জুনের জন্মদিনের পার্টিতে মালাইকার অনুপস্থিতিই যেন বিচ্ছেদের খবরে সিলমোহর দিলো সেদিন। যদিও গত মে মাসে বিচ্ছেদের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে জানা যায়, সম্পর্ক ভাঙলেও নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্ব বজায় রাখবেন তাঁরা। কিন্তু অর্জুনের জন্মদিনে মালাইকার অনুপস্থিতি দেখে নেটাগরিকরা প্রশ্ন তুলছেন, সত্যিই কি দু’জনের মধ্যে আর বন্ধুত্বের সম্পর্কও নেই?

মালাইকা ও অর্জুনের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছিলেন, ‘‘ওদের মধ্যে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটা স্থায়ী হলো না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ওদের মধ্যে কোনও তিক্ততা তৈরি হয়েছে। ওঁরা সব সময়ে পরস্পরকে শ্রদ্ধা করেছেন এবং সব সময়ে পাশে থেকেছেন। ওঁরা সম্পর্কে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বিষয়টিকেই সব সময়ে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।’’

অর্জুন কাপুরের এই জন্মদিনে মালাইকা অরোরাকে দেখা না যাওয়ার পর থেকেই তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের জল্পনা-কল্পনা জোরদার হয়েছে। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে নানা গুঞ্জন-গুজব। সত্যিই কি আলাদা হয়ে গেছেন অর্জুন-মালাইকা? তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কও কি নেই? তাহলে কেন মালাইকাকে অর্জুনের জন্মদিনে দেখা গেল না?

মালাইকা অর্জুনের জন্মদিনের পার্টিতে না গেলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ২৬ জুন একটি পোস্ট করেছেন। তাতে তিনি ইংরেজিতে লিখেছেন, ‘চোখ বন্ধ করে এবং পেছনে ফিরেও যে মানুষদের আমি বিশ্বাস করতে পারি, আমি তাদেরকেই পছন্দ করি।; মালাইকা এই পোস্টে যে অর্জুনের প্রতি অবিশ্বাসের কথা ইঙ্গিত করেছেন, তা বুঝতে আর বাকী নেই নেটিজেনদের।

মূলত, অর্জুনের জন্মদিনে মালাইকার অনুপস্থিতির কারণেই বিচ্ছেদের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও মালাইকার ম্যানেজার অর্জুনের তাঁর ম্যাডামের সম্পর্ক ভাঙার খবর অস্বীকার করেছেন। মালাইকা তাঁর সাক্ষাতকারে অর্জুনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে কি নেই— সেই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে তিনি শুধু এটুকু বলেছেন যে, ‘প্রেমের ব্যাপারে আমি হাল ছাড়ি না। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাই।’ এই মন্তব্য থেকে মালাইকা-অর্জুন জুটির প্রেম যে এখনো টিকে আছে, সেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়!

অর্জুনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন ও গুজবের মধ্যেই মুখ খুললেন মালাইকা। ইন্টারনেট কীভাবে অত্যন্ত টক্সিক জায়গা হতে পারে, তা নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন অভিনেত্রী। হ্যালো ম্যাগাজিন-এর কাছে মালাইকা বলেন, “আমি একটা কৌশল অথবা বর্ম তৈরি করে রেখেছি। আমি বলতে চাই যে, এই বর্মটা বানিয়েছি আমার নিজের চারপাশে। যেখানে আমি আর নেতিবাচক কিছু প্রবেশ করতে দেব না।”

উল্লেখ্য, মালাইকা অরোরা ২০১৮ সালের ২৩ আগস্ট (জন্ম ১৯৭৩ সালের ২৩ আগস্ট) নিজের ৪৫তম জন্মদিনে অর্জুনকে তাঁর হৃদয়ের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিলেন। এরপর থেকে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। তবে তার আগে ২০১৬ সালে আবরাজ খানের সঙ্গে ঘর ভেঙে যায় মালাইকা অরোরার।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে প্রেম মালাইকা ও অর্জুনের। বয়সের ফারাকের জন্য ট্রোলিং এর শিকার হয়েছেন তাঁরা অসংখ্যবার। কিন্তু সেই সবে কখনই কান দেননি তাঁরা। বলিউডে ‘পাওয়ার কাপল’হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তাঁরা। কিন্তু হঠাৎ কেন ভাঙল ধরল সেই সম্পর্কে, তা নিয়ে এখনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁদের অনুরাগীরা।

শুধু অর্জুনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কারণে নয়, নানা কারণে প্রায়ই অন্তর্জালে বিদ্রূপ ও উপহাসের শিকার হন মালাইকা। ওই সাক্ষাৎকারে বলিউড অভিনেত্রী জানান, কীভাবে তিনি অন্যের নেতিবাচক দৃষ্টি থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। মালাইকা বলেন, ‘আমি আসলে নিজের চারপাশে একটা বর্ম তৈরি করে নিয়েছি। নেতিবাচক কথাকে আমার অন্তরে প্রবেশ করতে দিই না। তাই সব কথা সব সময় প্রকাশ করি না।

প্রথম থেকেই যে এটা করতে শিখেছি তা নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিখে গেছি। তবে এসব কথা একেবারেই আমাকে আঘাত দেয় না, এটা বললে মিথ্যা বলা হবে। হ্যাঁ, আমারও কষ্ট হয়, আমিও কাঁদি। তবে বাইরের কেউ আমার চোখের জল দেখতে পায় না।’

মালাইকা অরোরাকে ক্যামেরার সামনে বরাবরই খোশমেজাজে দেখা যায়। তবে ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নিজের মনের ভেতর কী চলে, তা আড়ালে রাখতেই ভালোবাসেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে প্রেমিক সত্তা ঠিক কতটা তাঁর? এ প্রসঙ্গে মালাইকার জবাব, ‘আমি ভালোবাসার ক্ষেত্রে হাল ছাড়ি না। শেষ অবধি চেষ্টা করে যাই। কিন্তু এটা জানি, আমার সীমা কতদূর।’

মালাইকা অরোরা বরাবর তাঁর এবং তাঁর সন্তান আরহানের সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে খোলসা ভাবেই কথা বলেছেন। কখনোই লুকোচুরি করেননি। হ্যালো ম্যাগাজিনকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বিচ্ছেদের পর প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে মিলে ছেলেকে মানুষ করার কথা খোলাখুলি বলেছেন।

ওই সাক্ষাৎকার মালাইকা বলেন, প্রাক্তন স্বামী আরবাজ খানের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন তিনি। বিচ্ছেদ হলেও, ছেলে আরহান খানকে একসঙ্গে বড় করছেন মালাইকা ও আরবাজ। বিশেষ করে ছেলের জন্যই প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অভিনেত্রী বলেন, বিচ্ছেদের পরে তিনি বুঝতে পারছিলেন না, কীভাবে ছেলেকে বড় করবেন। ক্রমশ আরবাজের সঙ্গে  বোঝাপড়া তৈরি হয়। মালাইকা জানান, যাই মূল্য দিতে হোক না কেন ঈশ্বরের আশীর্বাদে আমরা এখন ব্যালেন্স করে চলতে পারি। যদিও বিচ্ছেদের পর প্রথম দিকে দু’জন মিলে ছেলেকে মানুষ করা একটু ঝামেলার ছিল। আর এটাই হয়তো জীবন।

কিন্তু জীবনে যাই হোক, আমাদের দুই পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে যাই হোক না কেন, জানতাম সেটার প্রভাব একটা শিশুর ওপর পড়তে দেওয়া যাবে না। তারপর আমরা ধীরে ধীরে বুঝেছি কী করে বিচ্ছেদের পর একসঙ্গে সন্তান মানুষ করা যায়।

ছেলেকে বড় করে তোলার বিষয়ে মালাইকা বলেন, “যা-ই হয়ে যাক, সৌভাগ্যবশত আমরা ক্রমশ সামঞ্জস্য খুঁজে পেয়েছি। তাই দু;জন মিলে সন্তানকে কীভাবে বড় করব, তার অনুকূল একটা রাস্তা আমরা খুঁজে বের করি।

আরহান নিজের সমস্ত কাজ নিজেই করতে শিখে গেছে দাবি করে মালাইকা ছেলে সম্পর্কে বলেন, “আমি চাইতাম, আরহান যেন মানুষকে সম্মান করতে শেখে, আর নিজের কাজ নিজে করতে শিখে, যাতে ওর কোনও অসুবিধা না হয়। আমরা সব সময়ে ওকে শিখিয়েছি, ওকে নিজের জায়গা নিজেই তৈরি করে নিতে হবে। যদিও আমরা সব সময়ই ওর পাশে থাকব।”

মালাইকা আরও বলেন, “অনেক সময় শিশুরা ভেবে নেয়, বাবা-মায়ের ক্ষমতা আছে যখন, তখন তারাই সব করে দেবেন। কিন্তু আমরা বুঝিয়েছি, ওর সব দিক দিয়ে স্বাধীন হওয়া জরুরি।”মালাইকা ও আরবাজের একমাত্র ছেলে আরহান। ২০১৬ সালে বিচ্ছেদ হয় এই তারকা দম্পতির।

২০১৭ সালে আলাদা হয়ে যান মালাইকা অরোরা এবং আরবাজ খান। বিয়ের প্রায় ১৯ বছর পর তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। সম্প্রতি আরবাজ বিয়ে করেছেন মেকআপশিল্পী সুরা খানকে। অন্যদিকে, মালাইকা এবং অর্জুনের সম্পর্ক নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। যদিও কেউ এই বিষয়ে খোলাখুলি কিছু বলেননি। খবর: হিন্দুস্তান টাইমস, নিউজ ১৮ বাংলা, আনন্দবাজার পত্রিকা।