চীনকে টপকে মিঠাপানির মাছ আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়, প্রথম ভারত

Spread the love

বাঙালিনিউজ ডেস্ক

মিঠাপানির মাছ আহরণে চীনকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এর আগে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে ছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় স্থানে ছিল চীন। এবার চীনকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। চীন তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে। এই তালিকায় সবার ওপরে ভারত।

গত ৮ জুন শনিবার জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড স্টেট অব ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২৪’ শীর্ষক বিশ্বের মৎস্যসম্পদ বিষয়ক এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে ২০২২ সালের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতি দুই বছর পরপর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

মূলত নদ–নদী, বিল, হাওর, বাঁওড়সহ উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ আহরণকে এই হিসাবে নেওয়া হয়েছে। তবে পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়ে চাষ মিলিয়ে সার্বিকভাবে মাছের উৎপাদনে বাংলাদেশ এবার তৃতীয় স্থান থেকে দুই ধাপ পিছিয়ে পঞ্চম স্থানে নেমে গেছে।

এর আগে, ২০২২ সালের এফএও এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে ছিল। ২০২০ থেকে তার আগের টানা পাঁচবার বাংলাদেশ ছিল পঞ্চম স্থানে।

জানা গেছে, ইলিশের প্রজনন এবং জাটকা রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ায় বিশ্বের উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। তবে দেশের হাওর ও বিলগুলোতে ছোট ও মাঝারি অন্য মাছের জাতগুলোর প্রজননের সময় সুরক্ষা দেওয়া উচিত।

প্রথম আলো জানায়, কী কারণে মিঠাপানি বা স্বাদুপানির মাছ আহরণে বাংলাদেশ এগিয়ে গেল, এমন প্রশ্নে জবাবে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক মো. জুলফিকার আলী বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্মুক্ত জলাশয়গুলো সংরক্ষণ করছে। একই সঙ্গে ইলিশের অভয়াশ্রম ও প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করায় ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য মাছেরও সংরক্ষণ হচ্ছে। এসব উদ্যোগের সফলতা হিসেবে আমরা মাছ উৎপাদনে আরও এগিয়েছি।’

বিএফআরআইয়ের হিসাবে, বাংলাদেশ গত বছর (২০২৩) মোট ৪৮ লাখ টন মাছ উৎপাদন করেছে। এর মধ্যে চাষের মাছ ৩২ লাখ টন, উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আহরণ করা ১৩ লাখ টন। বাকিটা সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করা। উল্লেখ্য, উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আহরণ করা মাছের অর্ধেকই ইলিশ। বাংলাদেশ ২০২৩ সালে মোট সাড়ে ছয় লাখ টন শুধু ইলিশ উৎপাদন করেছে।

সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের হিসাবে, দেশের উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ রয়েছে ২৬১ প্রজাতির। এর মধ্যে ৪০ প্রজাতির মাছের কৃত্রিম প্রজনন এবং উন্নত চাষপদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন বিএফআরআইয়ের বিজ্ঞানীরা। এসব মাছ পুকুর ছাড়াও বিল এবং নদীতেও পরিকল্পিতভাবে চাষ হচ্ছে, যা দেশের মাছের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাছ চাষ ও ব্যবসায় এ দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ যুক্ত। ১৯৯০ সালে মানুষ বছরে মাথাপিছু সাড়ে সাত কেজি মাছ খেত। এখন সেটা ৩০ কেজিতে পৌঁছেছে।

এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ স্বাদুপানির মাছ উৎপাদন করে ১৩ লাখ ২২ হাজার টন, যা বিশ্বের মোট মাছের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। এর আগে সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবদান ছিল ১১ শতাংশ। ভারত এবার ১৮ লাখ ৯০ হাজার টন উৎপাদন করে তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। আর চীন ১১ লাখ ৬৬ হাজার টন উৎপাদন করে তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে। চীনের পরে রয়েছে মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও উগান্ডা।

বিশ্বের সব দেশের ২০২২ সালে উৎপাদিত মাছের হিসাব নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে মিঠাপানির মাছের উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ৪০ হাজার টন। ২০২০ সালে তা ১২ লাখ ৫০ হাজার টনে উন্নীত হয়।

চীনে উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আহরণ করা মাছ কমে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে দেশটি এসব ক্ষেত্র থেকে ২২ লাখ টন মাছ উৎপাদন করে। কিন্তু ২০২০ সালে দেশটির মাছের অন্যতম বড় ক্ষেত্র ইয়াংজি নদীতে ১০ বছরের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। সেখানকার মৎস্যসম্পদ অতিরিক্ত পরিমাণে সংগৃহীত হওয়ায় তা শেষ হয়ে যাচ্ছিল। তাই ওই সম্পদকে আবারও বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ কারণে দুই বছর ধরে চীনের মোট মাছের উৎপাদন কমে আসে।

এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ স্বাদুপানির মাছ উৎপাদন করে ১৩ লাখ ২২ হাজার টন, যা বিশ্বের মোট মাছের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। এর আগে সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবদান ছিল ১১ শতাংশ।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বিশ্বের স্বাদুপানি ও চাষের মাছে শীর্ষে থাকা দেশগুলোর বেশির ভাগ এশিয়া মহাদেশের। এখানকার স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মাছের চাষ বেশি হয়। বিশেষ করে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় নদী ও জলাভূমি বেশি থাকায় সেখানে স্বাদুপানির মাছ সংগ্রহ ও চাষের জন্য উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে। এখানকার অধিবাসীদের জীবিকা ও পুষ্টির জোগান দিতে মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

প্রতিবেদনে বিশ্বের মৎস্যসম্পদের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বের মাছের উৎপাদন সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে। ওই বছর মোট ২২ কোটি ৩২ লাখ টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এর আর্থিক মূল্য ৩১৩ বিলিয়ন ডলার।

সামুদ্রিক মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ নম্বরে। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বেশ এগিয়েছে। এর আগের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৫তম। আর শুধু কাঁকড়া চাষে বাংলাদেশ নবম অবস্থানে রয়েছে।

২০২২ সালে বিশ্বের মাছের উৎপাদন সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে। ওই বছর মোট ২২ কোটি ৩২ লাখ টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এর আর্থিক মূল্য ৩১৩ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চাষের মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির দিক থেকে আফ্রিকায় মিসর এবং এশিয়ায় বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এসব দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদার ৫০ শতাংশের বেশি মাছ থেকে পূরণ হচ্ছে।

প্রথম আলো জানায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল ওহাব এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ইলিশের প্রজনন এবং জাটকা রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ায় বিশ্বের উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। তবে দেশের হাওর ও বিলগুলোতে ছোট ও মাঝারি অন্য মাছের জাতগুলোর প্রজননের সময় সুরক্ষা দেওয়া উচিত। এতে দেশে পুষ্টিকর ছোট মাছের উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে সমুদ্রের মৎস্যসম্পদের উৎপাদন ও সংগ্রহ বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।

মাছ চাষের ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি দেশ উদাহরণ তৈরি করেছে। তারা বর্জ্যগুলোকে স্বল্প খরচের প্রযুক্তি, যেমন নালার মাধ্যমে বের করে দেওয়া, আবার সেগুলোকে অন্য কাজে লাগানোর প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। চীনের মাধ্যমে শুরু হওয়া ওই প্রযুক্তি বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মেক্সিকো, উজবেকিস্তান ও মিসর অনুসরণ করছে। সূত্র: প্রথম আলো।